বাজারে নকল ঘি :ক্ষতিগ্রস্ত খাঁটি ঘি ব্যবসায়ীরা

 

স্টাফ রিপোর্টার: ঈদুল ফিতর সামনে রেখে পাবনার ফরিদপুরে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নকল ঘিতৈরি করে বাজারজাত করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনঅভিযান চালিয়ে কয়েক মণ নকল ঘি ও ঘি তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করেছে।

কয়েকজনদুগ্ধ ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যেডেমরা, বিএল-বাড়ী, পুংগলী ও বনওয়ারী নগর ইউনিয়নের অধিকাংশ বাড়িতেই গাভিপালন করা হয়। ফলে প্রচুর দুধ উৎপাদন হয়। তাই ওইসব এলাকায় বেশ কিছু দুগ্ধপ্রক্রিয়াজাত কারখানা গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন এখান থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায়প্রচুর পরিমাণে পাস্তুরিত দুধ, ছানা ও ঘি সরবরাহ করা হচ্ছে। স্থানীয়ব্যবসায়ীদের হিসাব অনুযায়ী, প্রতিদিন শুধু ঘি সরবরাহ করা হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০মণ। বাজারে এই এলাকার ঘিয়ের বেশ সুনামও রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়েএকশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী খাঁটি ঘিয়ের আদলে নকল ও অস্বাস্থ্যকর ঘি তৈরি করেবাজারজাত করছেন।উপজেলার গোপালনগর গ্রামের ঘি প্রস্তুতকারক ক্ষীতিশঘোষ জানান, প্রতি মণ দুধে দেড় থেকে দুই কেজি খাঁটি ঘি তৈরি হয়। এর প্রতিকেজির উৎপাদন ব্যয় ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা। কিন্তু নকল ঘি তৈরিতে খরচ হয় এর তিনভাগের এক ভাগ টাকা। খাঁটি ঘি তৈরির পর এর যে ডাস্ট (স্থানীয় ভাষায় বলা হয়চাছি) থাকে, তা দিয়েই তৈরি হয় নকল ঘি। কিছু ব্যবসায়ী বিভিন্ন এলাকা থেকে ওইডাস্ট সংগ্রহ করেন। পরে তাঁরা ডাস্টের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণ বাটারঅয়েল, সয়াবিন, কেমিক্যাল ও লটকন ফলের বীজ গুঁড়া করে মিশিয়ে তৈরি করেন নকল ঘি।
ঘিতৈরির কয়েকজন কারিগর জানান, প্রতি কেজি নকল ঘি তৈরি করতে ১৫০ থেকে ২০০টাকা ব্যয় হয়; যা বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে। উপজেলার অনেকব্যবসায়ী খাঁটি ঘিয়ের পাশাপাশি নকল ঘিয়েরও ব্যবসা করেন। প্রতিদিন এই এলাকাথেকে প্রচুর পরিমাণ নকল ঘি দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছে। ঈদ সামনে রেখেবাজারে ঘিয়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন আরও বেশি নকল ঘি তৈরি হচ্ছে। কিন্তুঅজ্ঞতার কারণে অনেকেই আসল-নকল বুঝতে পারছেন না। এতে খাঁটি ঘিয়ের ব্যবসায়ীরাক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ডেমরা গ্রামের ঘি ব্যবসায়ী আমজাদ জানান, নকল ঘি ওআসল ঘিয়ের পার্থক্য নির্ণয় করা খুব কঠিন। খাঁটি ঘিয়ের চেয়ে নকল ঘিয়ের রংউজ্জ্বল বর্ণের হয়। গন্ধ নিয়েও আসল-নকল চেনা যেতে পারে। এ ছাড়া নকল ঘিঅনেক সময় জমাট বেঁধে থাকে।
গোপাল নগরের ‘বাঘাবাড়ী স্পেশাল ঘি’-এরমালিক গোপাল ঘোষ বলেন, ‘আমার কারখানা থেকে প্রতিদিন পাঁচ মণ ঘি উৎপাদনকরি; যা দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়। বিদেশেও রপ্তানি হয়। কিন্তু নকল ঘিয়েরকারণে আমাদের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। আমরা এর প্রতিকার চাই।’
এ প্রসঙ্গেউপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক (স্যানিটারি ইন্সপেক্টর) এজাজুল হক বলেন, ‘আমরামাঝেমধ্যে কারখানাগুলো পরিদর্শন করি। তবে নকল ঘি তৈরির বিষয়টি জানি না।’
ফরিদপুরউপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ্ মোমিন জানান, নকল ঘি তৈরির কিছুঅভিযোগ পাওয়া গেছে। ১৩ জুলাই উপজেলার রাউৎ নাগধাপাড়া গ্রামের কালা ঘোষেরবাড়িতে অভিযান চালিয়ে কয়েক মণ নকল ঘি ও ঘি তৈরির সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। পরেতা পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়েছে। নকল ঘি তৈরি ও বাজারজাত বন্ধে অভিযান অব্যাহতরাখা হবে।