আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে দরকার আরো দায়িত্বশীলতা

 

ঈদ আসন্ন। বেড়ে গেছে চুরি ডাকাতি ছিনতাই। গ্রামবাংলার মানুষ ডাকাতি, ছিনতাই আর চাঁদাবাজি আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। এ অবস্থায় পুলিশ প্রশাসনের যে আরো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে তা বলাই বাহুল্য। সাধারণ মানুষকেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে।

চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও কুষ্টিয়াসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা এক সময় সন্ত্রাস কবলিত হিসেবে চিহ্নিত ছিলো। সেই অপবাদ অনেকটা ঘুচলেও অপরাধ প্রবণতা যায়নি। দীর্ঘদিনের দাগী অনেকেই সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে মুক্ত হয়ে এলাকায় ফিরেছে। তাদেরই কেউ কেউ নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। উঠতি বয়সীদের মধ্যেও স্থানীয়ভাবে গ্যাং গড়ে তোলার প্রবণতা ঘুরে ফিরে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এক সময়ের ভীতিকর পরিচয় দিয়ে মোবাইলফোনে বা চিরকুট লিখে চাঁদাবাজিও অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই বেড়েছে। দামুড়হুদা ডুগডুগি পশুহাট থেকে ফেরা গরু ব্যবসায়ীদের ওপর হামলা চালিয়ে ডাকাতদল ছিনিয়ে নিয়ে গেছে কয়েক লাখ টাকা। কুপিয়ে পিটিয়ে কয়েকজনকে আহতও করেছে। একজনকে হাসপাতালে ভর্তিও রাখতে হয়েছে। মেহেরপুরের জনপদে তো প্রায় প্রতিরাতেই কোথাও না কোথাও ডাকাতদল হানা দিচ্ছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর হলো- মেহেরপুরের বারাদী এলাকা থেকে মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নিয়ে সটকে পড়ার পথে সামনে পুলিশ দেখে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েও পার পায়নি দু ছিনতাইকারী।

যে জনপদে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি, সেই জনপদে সন্ত্রাস নির্মূলের আশা অনেকটা অবান্তর হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে সন্ত্রাস দমনের প্রত্যাশা অবশ্যই অতিরঞ্জিত নয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি গ্রাম পর্যায়ে স্থাপন করা হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। তথ্য প্রযুক্তির বদৌলতে চোখের পলকেই যে কেউই পুলিশকে অপরাধীর অবস্থান এবং গতিবিধির খবর দিতে পারেন। মোবাইলফোনে চাঁদাবাজি করার পরও চাঁদাবাজের মোবাইলফোনের অবস্থান দ্রুত শনাক্ত করা প্রযুক্তির বদৌলতে কঠিন নয়। এরপরও কেন চাঁদাবাজকে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনে সোপর্দ করা যাচ্ছে না? কেন অপরাধীরা অপরাধমূলক অপকর্ম করার অগেই ধরা পড়ছে না? তবে কি দায়িত্বহীনতা? নাকি আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের সাথে সাধারণ মানুষের দূরত্ব বেড়েছে। নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না যে, এক সময়ের সন্ত্রাস কবলিত জনপদের সাধারণ মানুষ পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে না পারলে অপরাধীদের বিষয়ে তথ্য দিতে আগ্রহী হয় না। কারণ এক সময় সংবাদদাতা গোপনে সংবাদ দিলেও গোপন থাকেনি। অপরাধীরা জেনে যাওয়ার কারণে সংবাদদাতাকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে।

পুলিশ বিগত দিনের তুলনায় বর্তমানে অনেক আস্থাশীল। এরপরও সাধারণ মানুষ কেন অপরাধীদের সম্পর্কে গোপনে তথ্য দিতে অনাগ্রহী? গলদ আছে নিশ্চয়। আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে পুলিশ-জনতা উভয়কেই আরো দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি। অব্যাহত ডাকাতি তারই তাগিদ।