মৃত্যু উপত্যকা গাজা:আকাশথেকে মুহুর্মুহু মিসাইল আর স্থলবাহিনীর ট্যাঙ্কের গোলা

 

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: আকাশথেকে মুহুর্মুহু মিসাইল হামলা আর স্থলবাহিনীর ট্যাঙ্কের গোলার আঘাতে বারবারপ্রকম্পিত হয়ে উঠছে গাজার পূর্বাঞ্চল। প্রাণভয়ে বাড়ি-ঘর ছেড়ে পালিয়েবেড়াচ্ছেন অসহায় নারী-পুরুষ। সাজানো গোছানো বড় বড় বহু ভবন মিশে গেছে মাটিরসাথে- আছে শুধু ইট-বালি আর কংক্রিটের স্তূপ। চারদিকে বারুদের ঝাঁঝালোগন্ধ। কোথাও কোথাও পড়ে আছে রক্তাক্ত মৃতদেহ। ছোট ছোট সোনামনিদের লাশ বুকেচেপে আহাজারি করছেন স্বজনরা। ফিলিস্তিনের গাজা যেন এক মৃত্যু উপত্যকা।ইসরাইলি স্থল অভিযানের দ্বিতীয় দিন শনিবারও শিশুসহ ২০ জন ফিলিস্তিনি নিহতহয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় কয়েকশ’জন। গত দুদিনের স্থল অভিযানে ৫৩ফিলিস্তিনি নিহত হলেন। যাদের মধ্যে অন্তত ১৫টি শিশু রয়েছে।

গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলি হামলায় ৩৩৩ জনফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে ৭৭টি শিশু ও ২৪ জন নারী। এছাড়া হামলায়আহত হয়েছেন ২ হাজার ২৯০ গাজাবাসী। যার বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক। ইসরাইলের প্রায়একতরফা এ হামলা বন্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত আছে।

গতকাল শনিবার ভোরে গাজারখান ইউনিস শহরে একটি মসজিদের বাইরে মিসাইল হামলা চালায় ইসরাইল। এতে সাতজননিহত হন। এরপর গাজায় আরও হামলা হয়। তাতে নিহত ও আহতের সংখ্যাও বাড়তে থাকে।ইসরাইল কর্তৃপক্ষ দাবি করে, তাদের হামলার একমাত্র উদ্দেশ্য হামাস। কিন্তুহামলার শিকার বেশিরভাগ মানুষই বেসামরিক নাগরিক। সংবাদ সংস্থা আল জাজিরারপ্রতিনিধি স্টেফানি ডেকার জানান, ইসরাইলি স্থলবাহিনীর সদস্যরা গাজারপূর্বাঞ্চলে আরও অগ্রসর হয়েছে। সেখানে বেশ কয়েকবার ট্যাঙ্ক হামলা চালিয়েছেতারা। তিনি আরও জানান, এটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। তাই এখানে বেশি ক্ষয়ক্ষতিরআশঙ্কা করা হচ্ছে।সকালে ইসরাইলি ট্যাঙ্কবহর হামলা চালায় গাজার বেইতহানুনে। ট্যাঙ্কের গোলায় বিধ্বস্ত হয় আবু জুরাদ পরিবারের আবাসস্থল। বাড়িরঅন্য চার সদস্যের সাথে প্রাণ হারায় হানিয়া, আহলাম, সামিহ ও মুসা। এদেরমধ্যে দুটি মেয়েশিশু। এর আগেও ইসরাইলের মিসাইল হামলায় একই পরিবারের চারশিশু মারা যায়। গাজার সাবরা উপশহরে নিজেদের বাড়ির ছাদে পোষা কবুতরকে দানাখাওয়ানোর সময় ইসরায়েলি জঙ্গি বিমানের মিসাইল হামলার শিকার হয়েছিল তারা।এনিয়ে গত ১২ দিনে ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজায় প্রাণ হারিয়েছে ৭৭ শিশু।

ইসরাইলেরপ্রায় একতরফা হামলায় এ পর্যন্ত দুজন ইসরাইলি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেকয়েকজন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে দেখা গেছে, অগ্রসরমান ইসরাইলিস্থলবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেছে ফিলিস্তিনিরা। কোথাওকোথাও রাস্তায় আগুল জ্বেলে তারা প্রতিরোধের চেষ্টা করে। হামাস হুঁশিয়ারিদিয়ে বলেছে, এ আগ্রাসনের জন্য ইসরাইলকে চড়া মূল্য দিতে হবে।

এদিকেযুদ্ধবিরতিতে উভয় পক্ষকে রাজি করাতে শনিবার গাজা সফরে যাওয়ার কথা ছিলোজাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুনের। এর আগে শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্টবারাক ওবামা গাজায় হামলার ব্যাপারে ইসরাইলকে সতর্ক করেছেন। তিনি টেলিফোনেইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে বলেছেন, মানুষের জানমালেরক্ষয়ক্ষতিতে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। কিন্তু তবুও থেমে নেই হামলা। উপরন্তুইসরাইলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা হামলা আরও জোরদার করবে। ফিলিস্তিনেহামলা চালানোর জন্য দেশটির আরও ১৮ হাজার সৈন্য রিজার্ভ রাখা হয়েছে। এতেচলতি হামলায় অংশগ্রহণকারী ইসরায়েলি সৈন্যের পরিমাণ দাঁড়ালো ৬৫ হাজার।

পালাচ্ছেহাজারও গাজাবাসী: ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় প্রাণভয়ে নিজ এলাকাছাড়ছেন হাজারও গাজাবাসী। গাজার বেইত লাহিয়া, সাজাইয়া ও জেইতুন থেকে হাজারহাজার ফিলিস্তিনিকে ব্যাগ হাতে হেঁটে ও ভ্যানে চড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানেযেতে দেখা গেছে। গত ১২ দিনে প্রায় বিশ হাজার গাজাবাসী নিজ এলাকা ছেড়েছেন।অনেকে আশ্রয় নিচ্ছেন জাতিসংঘের আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে। কিন্তু একসাথে এতোলোকের সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। তবে বেশিরভাগ মানুষইবাড়ি-ঘর ছেড়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ছুটছেন। তারা জানেন না কোথায় যাবেন। এরমধ্যে এমন অনেক পরিবার আছে যারা ইতোমধ্যে ইসরাইলি হামলায় আপনজনকে হারিয়েছেনঅথবা আহত হয়েছেন। এর ফলে সীমান্ত অঞ্চলে মানবেতর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতেপারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হামলা বন্ধে কূটনৈতিক তপরতা: গাজায় ইসরাইলিহামলা বন্ধে ইসরাইল ও হামাসকে অস্ত্রবিরতি চুক্তিতে রাজি করাতে কূটনৈতিকউদ্যোগ অব্যাহত আছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ইসরাইলি এ হামলা বন্ধের আহ্বানেরপর সংস্থাটির মহাসচিব শনিবার মধ্যপ্রাচ্যে যাবেন বলে জানানো হয়েছে।