স্টাফ রিপোর্টার: ছয়টি আন্তর্জাতিক গেটওয়ে অপারেটরের (আইজিডাব্লিউ) কাছে বাংলাদেশটেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পাওনা ৫৩১ কোটি টাকা। এরমধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে খুঁজেই পাচ্ছে না বিটিআরসি। এই আইজিডাব্লিউ’রকাজ বহির্বিশ্বের কলগুলোকে দেশের ফোন অপারেটরদের লাইনে প্রবেশ করিয়েদেয়া। সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পরিবারের নামে এসব লাইসেন্স নেয়া হলেওএখন আর তারা কেউ এর মালিক নন। যখন ওই প্রভাবশালীদের নামে লাইসেন্স ছিলো তখনটাকা উদ্ধারে বিটিআরসির কোনো তত্পরতাই ছিলো না। যখন তারা লাইসেন্স বিক্রিরকথা বলে নাম বদল করে ফেলেছেন তখন তত্পর হয়ে উঠেছে বিটিআরসি। এদের বিরুদ্ধেপাবলিক ডিমান্ড রিকভারি (পিডিআর) ও ফৌজদারি মামলাও করা হয়েছে। প্রশ্নউঠেছে বিনা জামানতে তাদের এতো টাকা পাওনা হলো কীভাবে?তখন বিটিআরসির তত্পরতাকোথায় ছিলো।
বিটিআরসি সূত্র জানায়, এ৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাতুলটেলিকমের কাছে সরকারের পাওনা ৭৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির ৫০শতাংশের মালিক সাবেক স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রীজাহাঙ্গীর কবির নানকের মেয়ে সৈয়দা আমরিন রাখি। আরো ২০ শতাংশের মালিকনানকের স্ত্রী সৈয়দা আরজুমান বানু। তারা টাকা পরিশোধের জন্য ৪ বার সময়নিলেও এখনো পরিশোধ করেননি। সর্বশেষ তাদের সময় রয়েছে ৩০ জুলাই পর্যন্ত। একারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও করেনি বিটিআরসি। অন্য ৫টি প্রতিষ্ঠান হলো-ট্যালেক্স লিমিটেড, বেসটেক টেকনোলজি লিমিটেড, ভিশন টেল, কে টেলিকমিউনেশন ওএসএম কমিউনিকেশন। এসব প্রতিষ্ঠানের কল আদান প্রদান বন্ধ করে দিয়েছেবিটিআরসি। তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ও পিডিআর মামলাও চলছে।
ভিশনটেলের কাছে পওনার পরিমাণ সর্বোচ্চ ১৩৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। সাবেকযোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের মেয়ের কোম্পানি ক্লাউড টেলের একটি সহযোগীপ্রতিষ্ঠান ছিলো ভিশন টেল লিমিটেড। তবে অনেক আগেই তারা এই প্রতিষ্ঠানেরলাইসেন্স হস্তান্তর করেছেন। ফলে এখন আবুল হোসেনের পরিবারের সঙ্গে ভিশনটেলের কোনো সম্পর্ক নেই। কে টেলিকমের কাছে পাওনা ৭৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা। এপ্রতিষ্ঠানটি এক সময় ছিলো আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের স্ত্রীরনামে। বছর দুয়েক আগে তিনিও প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করে দিয়েছেন। শামীম ওসমানবলেন, তার পরিবার একজন লন্ডন প্রবাসীর কাছে এটি বিক্রি করেছেন।ওই ব্যক্তি তাদের পাওনা টাকা এখনোও পরিশোধ করেনি। বারবার চেক ডিজঅনারহচ্ছে।
ট্যালেক্স কমিউনিকেশনের লাইসেন্স নেয়ার সময়ও একজনপ্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা এতে সুপারিশ করেন। যদিও কাগজপত্রে তার নাম নেই।তাদের কাছে পাওনা ৭২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। বেসটেক টেকনোলজির কাছে পাওনা ১১৫কোটি ৩৯ লাখ টাকা। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান তরিকুল ইসলাম। তাকে খুঁজেপাচ্ছে না বিটিআরসি। ঠিকানাও ভুয়া। আরএস কমিউনিকেশনের কাছে পাওনা ৩৭ কোটিটাকা। এর মধ্যে কে টেলিকম ও এসএম কমিউনিকেশনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলাকরেছে বিটিআরসি। এছাড়া ট্যালেক্স, বেসটেক ও ভিশন টেলের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ওপিডিআর মামলা এখন চলছে। কিন্তু সমস্যা হয়েছে এদের অফিসের ঠিকানাই ভুয়া।বিটিআরসি এখন এদের কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না। শুধু যাদের নামে লাইসেন্সহস্তান্তর হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কিন্তু তাদের আদৌ খুঁজেপাওয়া যাবে কি-না তাও নিশ্চিত নয় বিটিআরসি।
আইজিডাব্লিউ লাইসেন্সপ্রাপ্ত ২৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৮টি ব্যক্তিমালিকানাধীন ও অপরটিরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। বিটিসিএলের কাছে বিটিআরসির পাওনা প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।এর মধ্যে আইজিডাব্লিউ বাবদ পাওনা ৫০০ কোটি টাকার মতো।এছাড়াবেসরকারি ২৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২২টি বর্তমানে চালু আছে। এদের মধ্যে আবার৭টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিটিআরসির পাওনা একশকোটি টাকার মতো। এর মধ্যেমোষ্ট টেলিকমের কাছে পাওনা ২৫ কোটি ৯১ লাখ টাকা, এপোল নেটওয়ার্কলিমিটেডের কাছে ৪২ কোটি ৭২ লাখ, ফার্স্ট কমিউনিকেশনের কাছে ১৩ কোটি ৮১লাখ, বাংলাটেলের কাছে ৫ কোটি ৮৫ লাখ, ভেনাস টেলিকমের কাছে ৯ কোটি ২০ লাখ, প্লাটিনাম কমিউনিকেশনের কাছে ৪ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং ৱ্যাঙ্গস টেলের কাছে১৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। বিটিআরসি বলছে, এসব প্রতিষ্ঠান নিয়মিত টাকা দিচ্ছে।ফলে তাদের অপারেশনে বাধা দিচ্ছে না বিটিআরসি। কারো বেশি বকেয়া পড়ে গেলেতাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে।