টানা বৃষ্টিতে চট্টগ্রামে কোমর পানি

স্টাফ রিপোর্টার: বর্ষা এবার আপন ছন্দেই ফিরেছে। স্বস্তির বৃষ্টির জন্য অপেক্ষার প্রহর শেষ হতেই ভারী ও টানা বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিস্তীর্ণ অঞ্চল গতকাল শুক্রবারসকালে তলিয়ে যায়। রাজধানীতেও বৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই রাস্তায় জমে হাঁটু পানি। চুয়াডাঙ্গায় সন্ধ্যায় ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। বিকেলে বৃষ্টি নামে মাগুরায়। এ ছাড়াও দেশের অধিকাংশ স্থানে গতকাল ভারী বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত চট্টগ্রামে ৮৩ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়।

চট্টগ্রামে ভোর রাত থেকে নগরীর মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চান্দগাঁও, বাকলিয়া, চকবাজার, নাসিরাবাদ, হামিদচর, শোলকবহর, খতিবেরহাট, আগ্রাবাদ, হালিশহর বি ব্লকসহ বিস্তীর্ণ এলাকার দোকানপাট, ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ওনিচু অবকাঠামোসমূহে পানি ঢুকতে শুরু করে। ভোরের আলো ফোটার আগেইউল্লেখিত অঞ্চলগুলোর বিভিন্ন এলাকা কোমর সমান পানির নিচে তলিয়ে যায়।সিডিএ এভিনিউসহ সড়ক মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে গড়িয়েযেতে থাকে নালা উপচানো ও উঁচু স্থান থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানি। চরমদুর্দশা ও আকস্মিক বিড়ম্বনার শিকার হয় নগরীর উল্লেখিত এলাকাগুলোর কয়েকলাখ মানুষ। দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় নগরীর সিডিএ এভিনিউ, বায়েজিদবোস্তামি সড়ক, আরাকান সড়কসহ নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলোতে। এদিকে নগরীরপাহাড়ী জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোতে রেডএলার্ট জারি করা হয়েছে। পাহাড় ধসেপ্রাণহানি এড়াতে সকাল থেকেই প্রশাসন ওই সব এলাকায় মাইকিং করে।

গতবুধবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি বৃহস্পতিবারও সন্ধ্যা থেকে সারারাত প্রায়বিরতিহীন ঝরার কারণে নগরীতে প্রবল পানির তোড়ের সৃষ্টি হয়। সেই সাথে বয়েযায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াও। বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার মধ্যে ভোরে নগরীররাজাপুকুর লেইনে দয়াময়ী কলোনীর একটি দেয়াল ধসে দুজন আহত হয়। এরা হলো সুমনও তার মা। এদের স্থানীয় একটি ক্লিনিকে চিকিত্সা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভোরেরদিকে নগরীর টাইগারপাস ও প্রবর্ত্তক মোড় এলাকায় দুটি পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।তবে এ দুটি ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।প্রবল বর্ষণে নগরীর বিস্তীর্ণএলাকা তলিয়ে গিয়ে জনসাধারণের ঘরের আসবাবপত্র ও গৃহস্থালী সামগ্রীর ব্যাপকক্ষতি হয়েছে। বহু দোকানপাট ও গুদামে রক্ষিত পণ্যসামগ্রী ভিজে গেছে। এইপরিস্থিতির জন্য নগরবাসী আবারো অভিযোগের আঙুল তুলেছেন চট্টগ্রাম উন্নয়নকর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দিকে। বিভিন্ন এলাকার জনসাধারণজানান, সিডিএ’র অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং সিটি কর্পোরেশনের নালা-নর্দমার ময়লাঅপসারণে ব্যর্থতাই এ দুর্দশার প্রধান কারণ। তারা বলেন, নগরীতে ফ্লাইওভারনির্মাণের কারণে এমনিতেই বহু নালা-নর্দমা খাল ভরাট হয়ে গেছে, তার ওপরসংস্কার নেই পুরনো খাল ও নালার। পানি ধারণক্ষম বহু পুকুর ভরাট করেদালানকোঠা ও দোকানপাট গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে বৃষ্টির পানি সরতে পারছে না।

এদিকেগতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করাহয়েছে ৩২১ দশমিক ৪ মিলিমিটার। সমুদ্র বন্দরগুলোতে রয়েছে ৩ নম্বর স্থানীয়সতর্কতা সংকেত। চুয়াডাঙ্গায় গতকাল সর্বোচ্চ ৩১ দশমিক ২ ও সর্বনিম্ন ২৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো দিনাজপুরে ৩২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।