স্টাফ রিপোর্টার: এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণে সকল বোর্ডেই এবার ফলাফলেঅসংখ্য ভুল ধরা পড়েছে। অনলাইন ভর্তিতে রেকর্ডসংখ্যক আবেদনের পর খাতাপুনর্নিরীক্ষণে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে পরীক্ষার্থীদের ফল। সাধারণ আটসহদেশের ১০ শিক্ষা বোর্ডে খাতা পুনর্নিরীক্ষণে এক হাজার ৬৬২ পরীক্ষার্থীর ফলপরিবর্তন হয়েছে, যাদের প্রত্যেকেরই ফল আগের তুলনায় ভালো হয়েছে। কেবল তাই নয়, ১০ বোর্ডে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৯০ পরীক্ষার্থী। ৪২৬ শিক্ষার্থী ফেলথেকে নতুন করে পাস করেছে। ফল পরিবর্তন ও জিপিএ-৫ এ দুটি ক্ষেত্রেই সংখ্যাসবচেয়ে বেশি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে। এখানে খাতা পুনর্নিরীক্ষণে ভুল ধরা পড়ায়ফল পরিবর্তন হয়েছে ৫৯৪ জনের, আর নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬৪ পরীক্ষার্থী।এখানে ফেল থেকে নতুন করে পাস করেছে ৩৬ জন। ফল পরিবর্তন হওয়া শিক্ষার্থীরাআজ অনলাইনে ভর্তির আবেদন করতে পারবে। কলেজে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তির জন্যএবার রেকর্ডসংখ্যক ১০ লাখ ৯৭হাজার ৪১১টি আবেদন জমা পড়েছে। গত বছর আবেদনপড়েছিল আট লাখ ২৬ হাজার ৪৭৮টি।
জানা গেছে, চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণের পরগত দুদিন ধরেই বিভিন্নভাবে শিক্ষা বোর্ডগুলো নিজেদের ফল জানাচ্ছেন। যেখানেফলাফলের ব্যাপক পরিবর্তনের চিত্রই ধরা পড়েছে। সোমবার শিক্ষা বোর্ডগুলোরচেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসের মাধ্যমে ফল পরিবর্তনের তথ্য পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও স্ব স্ববোর্ডে গিয়ে ফল জানতে পারছেন। কিন্তু কেন ফলে এতো পরিবর্তন?এ প্রশ্নেরউত্তরে সংশ্লিষ্ট সবাই বলছেন, দ্রুত ফল প্রকাশই এই অবস্থারমূল কারণ। মূলততিন ধরনের ভুল ধরা পড়েছে। ১. কিছু খাতায় নম্বরের যোগফল ঠিক ছিলো না। ২.কিছু উত্তরের নম্বর যোগ করা হয়নি। ৩. ওএমআর ফরমে বৃত্ত ভরাটেও কিছু ভুলপাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা। এরআগে প্রক্রিয়া সহজ, হয়রানিমুক্ত ও প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় এবারব্যাপক সাড়াপড়েছিলো খাতা পুনর্নিরীক্ষণে। জমা পড়েছিলো রেকর্ডসংখ্যক আবেদন। গত ১৭ মেপ্রকাশিত হয় দশ বোর্ডের এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষার ফল।ফলাফলে সব সূচকেই ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙে সৃষ্টি হয়েছে নতুন রেকর্ড।আগের সব ভালো ফলকে ম্লান করে ফলাফলের প্রতিটি সূচকেই শিক্ষার্থীদের সাফল্যচলে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। ক্রমেই শতভাগ পাসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেশিক্ষার্থীরা। গত বছর রেকর্ড সৃষ্টি করে ৮৯ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ পাসকরলেও এবার পাসের হার ৯১ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আটটি সাধারণ, একটি কারিগরি ও একটিমাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে ১৪ লাখ ২৬ হাজার ৯২৩ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে১৩ লাখ তিন হাজার ৩৩১ জন। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা এক বছরেরব্যবধানেই ৫১ হাজার ৫০ জন বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জনে। এবারশতভাগ পাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যেমন বেড়েছে, তেমনি কমেছে শতভাগ ফেলকরা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। তবে গণ পাস করলেও ইতোমধ্যেই শিক্ষার মান নিয়েপ্রশ্ন তুলেছেন দেশের শিক্ষাবিদরা।
নীতিমালা অনুসারে ফল প্রকাশের একদিনেরব্যবধানেই ১৮ মে থেকে সকল শিক্ষা বোর্ডে শুরু হয় টেলিটক মোবাইলের মাধ্যমেএসএমএস পাঠিয়ে খাতা পুনর্নিরীক্ষণ কার্যক্রম। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সকলবোর্ডের ওয়েবসাইট, পরীক্ষা কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থান থেকে টেলিটকে আবেদনকরার প্রক্রিয়া জানতে পারে পরীক্ষার্থীরা। জানিয়ে দেয়া হয়, খাতাপুনর্নিরীক্ষণ করতে কাউকেই বোর্ডে আসতে হবে না। প্রতিটি বিষয়ের জন্য বোর্ডফি (প্রতি বিষয় ১২৫ টাকা) জমা দিতেও বোর্ডে আসতে হয় না। টেলিটকেপরীক্ষার্থীর নাম, রোল নম্বর, বিষয় কোডসহ সংশ্লিষ্ট তথ্য লিখে এসএমএসপাঠালেই হয়। মূলত প্রক্রিয়া সহজ করার পরই এর সুবিধা গ্রহণ করে সকলে।আশানুরূপ ফল না হওয়ায় সকল বোর্ডেই অসংখ্য শিক্ষার্থী আবেদন করে। এর পর গতদুদিন ধরে ফল প্রকাশ হয়।
খাতা পুনর্নিরীক্ষণ শেষে ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডেপরিবর্তন হয়েছে ৫৯৪ পরীক্ষার্থীর ফল। যাদের মধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে১৬৪ জন। আগে ফেল করলেও তাদের মধ্যে ৩৬ জন এবার পাস করেছে। রাজশাহীতেপরিবর্তন ১২০ জনের ফল, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৮ জন, নতুন করে পাস করেছে২০ জন। কুমিল্লায় পরিবর্তন হয়েছে ১৬৪ জনের ফল, জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ জন। যশোরেপরিবর্তন হয়েছে ৯৪ জনের ফল, জিপিএ-৫ পেয়েছ ১৭ জন। চট্টগ্রামে পরিবর্তনহয়েছে ১১৩ জনের ফল, জিপিএ- ৫ পেয়েছে ২১ জন। সিলেটে পরিবর্তন ৫৪ জনের, জিপিএ-৫ পয়েছে ৯ জন। বরিশালে পরিবর্তন ৬০ জনের, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৪ জন, ফেলথেকে পাস ২০ জন। দিনাজপুরে পরিবর্তন ৮০ জনের, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৭জন। মাদরাসায় পরিবর্তন হয়েছে ১৯৯ জনের ফল, নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৪ জন।কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষায় পরিবর্তন হয়ে ফল আগের তুলনায় ভালো হয়েছে১৮৪ জনের। নতুন করে জিপিএ পেয়েছে ৩ জন পরীক্ষার্থী, এখানে আগে ফেল করলেওনতুন করে পাস করেছে ১৬৭ জন। ভুল সম্পর্কে প্রায় একই তথ্য দিয়েছেন বিভিন্নশিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা। তারা বলেছেন, সবচেয়েবেশি ভুল পাওয়া গেছে বৃত্ত ভরাটে। যেমন দেখা গেছে, একজন ৮৫ পেয়েছে সেখানেউল্টো ৫৮ বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে। আবার দেখা গেছে, ১৩টি প্রশ্নের উত্তর দিলোকেউ। একটির উত্তরের নম্বর হয়ত মোট নম্বরের সঙ্গে যোগই করা হয়নি। কোনো কারণেহয়তো যোগ করার সময় ১২টি প্রশ্নের উত্তরের প্রাপ্ত নম্বর যোগ করা হয়েছে। এখনঠিকভাবে যোগ করার সময় পরীক্ষার্থীর মোট নম্বরও বেড়ে গেছে। কর্মকর্তারাবলছেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তাড়াহুড়ো করে ফল প্রকাশের কারণে খাতামূল্যায়নে ব্যাপক ভুল হচ্ছে। যার মূল্য দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
ফল পরিবর্তন হওয়া শিক্ষার্থীরা আজ অনলাইনে ভর্তির আবেদন করতে পারবে। শেষহয়েছে নিয়মিত অনলাইন ভর্তির আবেদন। কলেজে অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তির জন্যএবার রেকর্ডসংখ্যক ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৪১১টি আবেদন জমা পড়েছে। গত বছর আবেদনপড়েছিল আট লাখ ২৬ হাজার ৪৭৮টি। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ১০ শিক্ষা বোর্ডেএবার ৭৬২টি নির্বাচিত কলেজে টেলিটকে এসএমএস পাঠিয়ে ভর্তির আবেদন করতেপেরেছে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্র্থীরা।
জানা গেছে, অনলাইনের জন্য ঢাকাবোর্ডের নির্বাচিত ২৩২ কলেজের বিপরীতে আবেদন পড়েছে চার লাখ ৭৮ হাজার ৬৭৩টি।বরিশালে ৪৭ হাজার ৩৭টি, চট্টগ্রামে এক লাখ ৩৭ হাজার ৪৫৩টি, কুমিল্লায় একলাখ ৪১ হাজার ৩৭৪টি, দিনাজপুরে ৯০ হাজার ৭৮১টি, যশোরে ৫৭ হাজার ৭১৩টি, রাজশাহীতে ৯৫ হাজার ১৯৯টি এবং সিলেটের অনলাইনের জন্য নির্বাচিত কলেজেভর্তির জন্য আবেদনজমা পড়েছে ৪৯ হাজার ১৮১টি।