আষাঢ় চেরি ফুলের জৌলুস হারানোর সময়!

 

মহাসিন আলী: ফুলের নাম চেরি। নাম শুনেই বোঝা যায় এটি একটি বিদেশি ফুল। এদেশের আবহাওয়ার সাথে অনেক আগেই মানিয়ে নিয়েছে সে। এর রূপ সবাইকে মুগ্ধ করলেও আষাঢ়ে এর দুর্ভোগের শেষ থাকেনা। পয়লা আষাঢ়ে কদম-কেয়া নিয়ে অনেক লেখা-লেখি হলেও চেরি ফুলের কথা কেউ ভেবে দেখেছেন কী?

নাম শুনে বুঝতে পারা যায় চেরি একটি বিদেশ ফুল। কবে কখন এদেশে এফুল এসেছে তা বলা মুসকিল। তবে স্বাধীনতার পর থেকে এদেশে এর অস্তিত্ব চোখে পড়ে। মাঝারী সাইজের এ গাছটির ফুলে মুগ্ধ সবাই। তাইতো এফুল ছাড়া বাগান বে-মানান। বাংলাদেশে শাদা, হালকা বেগুনে আর গোলাপী এ তিন রঙের চেরি ফুল চোখে পড়ে। সাত পাপড়ির প্রতিটি ফুলের মাঝে হলুদ রঙের পুরুষ রেণু থাকে। আর ফুলটি যেন পাতলা কাগজ দিয়ে কারুকার্য করে তৈরি।

চৈত্রের কৃষ্ণচূড়া যেমন লাল রঙে জগৎ মাতায়। তেমনি তুষার শুভ্র শাদা চেরি আর গোলাপী রঙের চেরি যেন প্রকৃতির অকৃপন দান। দিনের কালো মেষের সময় অথবা জ্যোৎসা রাতে গাছে ফোঁটা শাদা চেরির রূপে মোহিত হবেন যে কেউ। গাছভরা থোকা থোকা শাদা চেরির দিকে তাকালে মনে হয় সদ্যপড়া তুষারে গাছের ডাল পাতা ঢেকে আছে। আর সকাল-সন্ধ্যায় গোলাপী রঙের চেরির রূপ যেন প্রকৃতির তুলিতে রাঙা অপূর্ব সৃষ্টি। এছাড়া সকালে ঘুম থেকে উঠে চেরি গাছের নীচে পড়ে থাকা ফুলের দিকে তাকালে মনে হবে- কেউ যেন সদ্য ফুল ছিটিয়ে রেখে গেছে। এফুলের হালকা বাসনা আমাদের জাতীয় ফুল শাপলার মতো।

সম্প্রতি সময়ে বেগুনী রঙের হাইব্রিড ও টবে ছোট ছোট বানসই চেরি পাওয়া যাচ্ছে। টবের চারাও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সকলের কাছে। ফুলের সাথে এর পাতার মানান সই চোখে পড়ার মতো। আর এর বংশবৃদ্ধি ঘটানো অত্যন্ত সহজ। কষ্ট করে কলম করার দরকার পড়বেনা। টাকা দিয়ে এর চারা কিনতে হবেনা নার্সারী হতে। যে কেই পছন্দের রঙের চেরি ফুলের ডাল কেটে মাটিতে পুতে চারা তৈরি করে নিতে পারেন।হয়তো এফুলের মোহে বিমোহিত পক্ষীকূল। তাইতো হামিং বার্ড, জাতীয় পাখি দোয়েল, ঝুটি বুলবুলিসহ বিভিন্ন ধরনের পাখি বসে আর বংশ বিস্তারের জন্য বাসা তৈরি করে এ গাছে।

চেরি ফুল মানুষ আর পক্ষীকূলকে বিমোহিত করলেও এর রয়েছে বর্ষায় কান্না। বর্ষা এলেই এর রূপ শ্রীহীন হয়ে পড়ে। থোকা থোকা ফুলের পাপড়িগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি চুষে বুকে ধারণ করে। ভারি হয়ে ডাল নূয়ে পড়ে নিচের দিকে। এক পর্যায়ে নিজেকে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে মাটিতে ঝরে পড়ে অপরূপ এ চেরি ফুল।এফুলে মুগ্ধ অনেকে মনে করেন, বর্ষা এলেই এফুলের দুর্দশা বাড়ে। দুর্ভোগের শেষ থাকেনা রূপবতী চেরি ফুলের। আষাঢ়ে জৌলুস হারাতে হয় তাকে।