আত্মহত্যা প্রবণতা তো বাড়ছেই, এর সাথে যুক্ত হয়েছে সন্তানের মুখে বিষ দিয়ে আত্মহত্যার অপচেষ্টার প্রবণতা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পারিবারিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে নারীদের কেউ কেউ সন্তানের মুখে বিষ তুলে দিচ্ছে। এছাড়া ক্ষুদ্র ঋণ নিয়ে কিস্তি দিতে না পেরে অপমান সহ্য করতে না পেরেও অনেকে আত্মহত্যার পথে পা বাড়াচ্ছে। যে যে কারণেই আত্মহত্যার পথে পা বাড়াক না কেন, তাকে যে ক্ষতিকর প্রবণতা উসকে দিচ্ছে তা বলাই বাহুল্য। আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। আত্মহত্যা আইনে যেমন সমর্থন করে না, তেমনই ধর্মীয় দৃষ্টিতেও পাপ। এরপরও আত্মহত্যা কেন? প্রশ্নের জবাব জানতে অবশ্যই প্রতিটি আত্মহত্যার বিষয়েও সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। তা না হলে আত্মহত্যা প্রবণতা থেকে সমাজের সচেতন পরিবারও যে রক্ষা পাবে না, তা সহজেই অনুমান করা যায়। অবাক হলেও সত্য যে, উঠতি বয়সীদের মধ্যেও আত্মহত্যা প্রবণতা পেয়ে বসেছে। প্রতিকার মিলছে না।
আত্মহত্যা মানেই পেটে ব্যথা, গুরুতর অসুস্থতা নয়। যদিও আত্মহত্যার বিষয়ে থানায় রুজু করা অপমৃত্যু মামলাগুলোতে গতানুগতিকভাবে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা, পেটে ব্যথা অথবা মস্তিষ্ক বিকৃত রোগে ভোগার কারণে আত্মহত্যা করেছে। অপমৃত্যু মামলায় এসব অজুহাত দাঁড় করানো হলেও উপযুক্ত প্রমাণ তথা চিকিৎসকের তেমন প্রমাণপত্র সংযুক্ত করা হয় না। তাছাড়া অনেক হত্যাকাণ্ডও যে আত্মহত্যা বলে ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা চলে তাও অস্বীকার করা যাবে না। কারণ, বিশেষ তদবির আর ওই পেটে ব্যথা বা মস্তিষ্ক বিকৃতের অজুহাত দেখিয়ে ময়নাতদন্ত না করিয়েই দাফনের অনুমোদন পূর্বের তুলনায় এখন সহজ হয়েছে। অথচ সেটা হওয়া উচিত নয়। প্রতিটি অস্বাভাবিক মৃত্যুরই প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্ত করার বিধান রয়েছে। বিশেষ ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিল করা হলেও সেই সুযোগে সমাজে আত্মহত্যা বাড়ুক, হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনাও ধামাচাপা পড়ে যাক তা মেনে নেয়া যায় না। তা ছাড়া পারিবারিক বা সামাজিকভাবে আত্মহত্যায় প্ররোচনা করলে তার বা তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। প্রয়োগ নেই। এটা দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও অস্বীকার করবেন না যে, আইন থেকেও লাভ হয় না, যদি না তার যথাযথ প্রয়োগ থাকে। আইন প্রয়োগের পর অবশ্যই তদন্তেও স্বচ্ছতা থাকা দরকার।
আত্মহত্যা প্রবণতা রোধে প্রয়োজন প্রতিটি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত। যেহেতু আত্মহত্যা বর্তমানে সামাজিক সমস্যা সেহেতু বিষয়টিকে খাটো করে না দেখে, প্রকৃত কারণ শনাক্ত করেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সমস্যা চিহ্নিত করতে পারলে তা দূর করা সহজ। আর তা না করে যদি বিষয়টিকে গা সওয়া করা হলে সমাজকেই তার খেসারত দিতে হয়। দিতে হচ্ছে। আত্মহত্যা প্রবণতা তো বেড়েছেই, তার সাথে যুক্ত হয়েছে মা বা পিতা হয়েও সন্তানকে হত্যা করে আত্মহত্যার মতো ভয়ঙ্কর হওয়ার মতো প্রবণতা। নিজে আত্মহত্যার অপচেষ্টা চালানো যেমন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ, তেমনই সন্তান হত্যাও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অবশ্যই আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এ ধরনের অপরাধ প্রবণতা রোধে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসমূহকেই আন্তরিক হতে হবে। একই সাথে সামাজিকভাবেও প্রতিরোধে সচেতনমহলকে দায়িত্বশীল হতে হবে।