বিদ্যুত কেন্দ্র, অর্থ ও কৌশলগত সহযোগিতা দেবে চীন

স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশও চীনের মধ্যে গতকাল সোমবার পারস্পরিক সহযোগিতা বিষয়ে পাঁচটি চুক্তি স্বাক্ষরহয়েছে। এর মধ্যে দুটি চুক্তি হচ্ছে- বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ওজলবায়ু পরিবর্তনে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় দু’দেশের মধ্যে পারস্পরিকসহযোগিতা জোরদার করা। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের গ্রেট হলে গতকাল সোমবার দু’দেশেরমধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে দু’দেশেরসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্বাক্ষর করেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবংচীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং নিজ নিজ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। চীনেরপ্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং দু’দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর আগেসোমবার গ্রেট হল অব দ্য পিপলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনাজানান। ৬ দিনের চীন সফরের দ্বিতীয়ভাগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববারদক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কুনমিং থেকে রাজধানী বেইজিংয়ে পৌঁছান।

শেখ হাসিনাগ্রেট হল অব দ্য পিপলের পূর্ব প্লাজায় এসে পৌঁছুলে চীনের প্রধানমন্ত্রী লিকেকিয়াং তাকে স্বাগত জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী লি বাংলাদেশেরপ্রধানমন্ত্রীর সাথে চীনের অন্য নেতাদের এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের পরিচয়করিয়ে দেন।
এরপর দু প্রধানমন্ত্রী অভিবাদন মঞ্চে ওঠেন। এখানে চীনেরগণমুক্তি ফৌজের (পিএলএ) সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল ১৯ বারতোপধ্বনির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিবাদন জানায়।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভিবাদন গ্রহণ করেন। এ সময় দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীতবাজানো হয়।পরে চীনের গণমুক্তি ফৌজের (পিএলএ) একটি দল বাংলাদেশেরপ্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। চীনের প্রধানমন্ত্রী লিকেকিয়াংকে সাথে নিয়ে শেখ হাসিনা গার্ড পরিদর্শন এবং অভিবাদন গ্রহণ করেন।গার্ডপরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রেট হল প্লাজার সামনে গণমুক্তিফৌজের (পিএলএ) পতাকার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিবশহীদুল হক বলেন, স্বাক্ষরিত পাঁচটি চুক্তির মধ্যে দুটি চুক্তি হল সমঝোতাস্মারক (এমওইউ) এবং পত্র বিনিময় (ইওএল)। প্রধানমন্ত্রীর মিডিয়া উপদেষ্টাইকবাল সোবহান চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সেক্রেটারি একেএম শামীমচৌধুরী এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, চুক্তিগুলোহল- বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনীতি ও কারিগরি সহযোগিতা সংক্রান্ত চুক্তিএবং পটুয়াখালীতে কয়লাচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। তিনি বলেন, চট্টগ্রামেচীনা ইকোনোমিক অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট জোন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশরফতানি প্রক্রিয়াকরণ জোন কর্তৃপক্ষ (বেপজা) এবং চীনের হারবার অ্যান্ডইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয়আলোচনায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাঁচটি প্রস্তাবিত প্রকল্পবাস্তবায়নে চীন সরকারের সহায়তা চেয়েছে। চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন।

প্রস্তাবিতপ্রকল্পগুলো হল- বাংলাদেশ সরকারের জন্য ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক (ফেস-৩), রাজশাহী ওয়াসা সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণ, কালুরঘাট পয়েন্টে কর্ণফুলী নদীর ওপর দ্বিতীয় রেলওয়ে কাম সড়ক সেতু নির্মাণ, রামু হয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন ডুয়েল গেজ রেল লাইননির্মাণ, ইস্টার্ন রিফাইনারি ইউনিট-২ এবং সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং প্রজেক্টপ্রতিষ্ঠা।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, দু প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে সোনাদিয়াগভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রসঙ্গটি আলোচনায় স্থান পায়। এ বিষয়টি নিয়ে উভয়পক্ষ আলোচনা অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাদৃঢ়তার সাথে বলেছেন, চীনে তার বর্তমান সফরে বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয়সম্পর্ক আরও জোরদার এবং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতার এক নতুন পথউন্মোচিত হবে।তিনি বলেন, ‘আমার চীন সফর একটি বিরাট সাফল্য।’ এখন থেকেদ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সাংস্কৃতিক বিনিময় অতীতের চেয়ে আরও বেশিগুরুত্ব পাবে। গতকাল সোমবার বেইজিংয়ে ‘সাম্প্রতিক বছরে বাংলাদেশেরআর্থ-সামাজিক সাফল্য এবং চীনের সাথে অংশীদারত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে চীনেরবিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাএকথা বলেন। চায়না ইন্সটিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (সিআইআইএস)বেইজিংয়ে তার নিজস্ব কার্যালয়ে এ সেমিনারের আয়োজন করে।