ফরমালিনযুক্ত ফল ঢাকায় ঢুকতে দেবে না পুলিশ

 

কার্বাইড দিয়ে পাকানো হচ্ছে আম : পচন ঠেকাতে দেয়া হচ্ছে পোচন রোধক

 

স্টাফ রিপোর্টার: সারাদেশেই ফরমালিন যুক্ত ফলে ভোরে গেছে। ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ দেয়া ফল ফলারি খেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এর মাঝে কোনো অবস্থাতেই রাজধানীতে ফরমালিন ও কার্বাইড মিশ্রিত ফল ঢুকতে দেবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ। ফরমালিন মেশানোকে সামাজিক গণহত্যার মতো অপরাধ বিবেচনা করে পুলিশ রাজধানীতে দীর্ঘমেয়াদী সাঁড়াশি অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছে।খাদ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব তথ্য প্রকাশ করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ।এ সময় তিনি আরও জানান, এ মধুমাসে ফরমালিনযুক্ত ফল যেন ঢাকাবাসীকে কিনতে না হয়, সে জন্যই পুলিশের অভিযান। কয়েক ধাপে চলবে এ অভিযান। প্রথম ধাপে রাজধানীতে ফরমালিনযুক্ত ফল ও শাকসবজির ট্রাক ঢোকা নিষিদ্ধ করার অভিযান চলবে। পরের ধাপে বড় বড় মার্কেটে চলবে সাঁড়াশি অভিযান।তবে এর আগে ব্যবসায়ীদের সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে।

বেনজীর আহমেদ এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, আমরা মানুষকে ক্ষতিকর ফরমালিন ও কার্বাইডমুক্ত খাবার দিতে চাই। বাজারে বিষমুক্ত ফলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১১ জুন বুধবার থেকে রাজধানীতে প্রবেশের আটটি পয়েন্টে চেকপোস্ট বসাবে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এ সব চেকপোস্টে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাজধানীতে আসা ফলে ফরমালিন বা অন্য কোনো ক্ষতিকর উপাদান আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হবে। মধুমাসে নগরবাসীর আম, লিচুসহ বিভিন্ন ধরনের মরসুমি ফল বাজার থেকে কেনা নিরাপদ করতেই এ যুদ্ধে নামছে ডিএমপি। কমিশনার বলেন, এ জন্য আমরা খুচরা বিক্রেতা থেকে শুরু করে আমদানিকারক পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন, তারা বিষযুক্ত ফল বিক্রি করবেন না।

তিনি জানান, আটটি চেকপোস্টে ফরমালিন ও কার্বাইড পরীক্ষার জন্য এফবিসিসিআই, বিএসটিআই, সিটি কর্পোরেশন, পুলিশ ও ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা পুলিশকে সহযোগিতা করবেন। ফল ব্যবসায়ীরা যাতে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেজন্য উৎপাদন স্থল থেকে ফরমালিনমুক্ত নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাম পরিশোধ না করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।বেনজীর আহমেদ বলেন, ফলে ফরমালিন মেশানো সামাজিক গণহত্যার মতো ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। এই গণহত্যা বন্ধের জন্যই এ কঠোর অভিযানের সিদ্ধান্ত।

কমিশনার বেনজীর আহমেদ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ফরমালিন আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার তাগিদ দিয়ে বলেন, আমদানি করা ফরমালিনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে। এ সব বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। খাদ্যে ভেজাল দেয়ার কাজ যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। এ সব আর বরদাশত করা হবে না।এ ব্যাপারে নগরবাসীর সহায়তা কামনা করে কমিশনার বলেন, এখন থেকে আর খাদ্যে ফরমালিন দেবেন না। আমরা এই মূল্যবান খাবার ধ্বংস করতে চাই না। আর যদি কোনো ট্রাকে বহনকারী খাদ্যে ভেজাল পাওয়া যায় তাহলে তা আমরা ধ্বংস করব এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।

যেসব এলাকায় অভিযান পরিচালিত হবে:মিরপুর এক নম্বর শাহ আলী মার্কেট, ফকিরাপুল মাছবাজার, কাপ্তানবাজার, শান্তিনগর বাজার, উত্তর ও মধ্যবাড্ডা, নিউমার্কেট কাঁচাবাজার, গুলশান এক নম্বর ডিসিসি মার্কেট, স্টার বেকারি কাবার ঘর ধানমন্ডি, মহাখালী কস্তরি, লাকি ও আল ইসমাঈল হোটেল, হাতিরপুল, ঢাকা ফুড আগোরা সুপার স্টোরস, মগবাজার, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, মালিবাগ ও রেলগেট মাছ বাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার ও কাজীপাড়া মসজিদ মার্কেট বাজারসহ আরও কিছু এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়।

প্রবেশ পথে চেকপোস্ট:ফরমালিনযুক্ত ফল প্রবেশ করতে না পারে সে জন্য রাজধানীর আটটি স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করা হবে। মহানগরীর প্রবেশ পথ দিয়ে আনা ফরমালিন ও কার্বাইডযুক্ত খাদ্যদ্রব্য শনাক্ত করে ধ্বংস করা হবে। যে স্থানগুলোতে চেকপোস্ট হবে- পোস্তগোলা ব্রিজ, যাত্রাবাড়ী সাইনবোর্ড, ডেমরার সুলতানা কামাল ব্রিজের পশ্চিম পাশে, ডেমরা চৌরাস্তা, বাবুবাজার ব্রিজ, সদরঘাট, ওয়াইজঘাট, গাবতলী পর্বতা সিনেমা হলের সামনে, আব্দুল্লাহপুর ব্রিজ, ধউর ব্রিজ।