স্টাফ রিপোর্টার: আবারও ঢাকা বোর্ডের এইচএসসি ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রেরপ্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ ঢাকা বোর্ডের অধীনে ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু গতকাল শনিবার সকাল থেকে ফেসবুক, টুইটার, ব্লগসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি হাতে লেখাপ্রশ্নের কপি বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশ্নপত্রসহ মুন্সীগঞ্জেরসিরাজদিখান উপজেলার ইসাপুরায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ। ফেসবুকে প্রশ্নপাওয়া যাচ্ছে বলে বিষয়টি স্বীকার করেছেন আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয়সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম। গত ১০এপ্রিল ওই পরীক্ষার হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাওয়ায় ৯এপ্রিল গভীর রাতে পরীক্ষা স্থগিত করে ঢাকা বোর্ড। এ প্রশ্নে প্রথমে রয়েছে শূন্যস্থান পূরণ, আর্টিকেল। ‘অ’ থেকে ‘ঊ’ পর্যন্ত পাঁচটি প্রশ্ন রয়েছে। দ্বিতীয় নম্বর পশ্নেরয়েছে প্রিপজিশন, ভারবস এবং ওয়ার্ডস। তৃতীয় নম্বর প্রশ্নে রয়েছে ন্যারেশন।চতুর্থ নম্বর প্রশ্নে রয়েছে আর্টিকেল। অ থেকে ঔ পর্যন্ত ১০টি প্রশ্ন রয়েছে।পাঁচ নম্বর প্রশ্নে রয়েছে ট্রান্সফরমেশন (বাক্য রূপান্তর)। এতে রয়েছে একথেকে ৫ পর্যন্ত পাঁচটি প্রশ্ন। ৬ নম্বর প্রশ্নে রয়েছে ৫টি শূন্যস্থান পূরণ।৭ নম্বর প্রশ্নে রয়েছে প্রশ্নবোধক বাক্য গঠন। এতেও রয়েছে ৫টি প্রশ্ন।এভাবেই প্রশ্ন সাজানো হয়েছে। গত ১০ এপ্রিল ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষাএর মধ্যে হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ঢাকা বোর্ডের প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাওয়ায়পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। অন্যান্য বোর্ডের পরীক্ষা হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁসেরপ্রতিবাদে ইতিমধ্যে আন্দোলনে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ওশিক্ষার্থীরা। প্রশ্নফাঁস তদন্তে গঠিত হয় দুটি তদন্ত কমিটি। একটি গঠন করেশিক্ষামন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ)সোহরাব হোসাইনকে আহ্বায়ক করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্নআন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে শিক্ষামন্ত্রণালয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেনজনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজনযুগ্ম সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (কলেজ), যুগ্ম সচিব (মাধ্যমিক), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও কলেজ)এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক। ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকেপ্রতিবেদন দিতে বলা হলেও কমিটি কয়েক দফা সময় নিয়েছে।
অন্যদিকে ঢাকাশিক্ষাবোর্ড বোর্ডের সচিব অধ্যাপক আবদুস সালাম হাওলাদারকে আহ্বায়ক করে পাঁচসদস্য বিশিষ্ট আরেকটি কমিটি গঠন হয়েছিলো। কমিটির অন্য সদস্যরা ঢাকাবোর্ডেরকলেজ পরিদর্শক শ্রীকান্ত কুমার চন্দ, বিদ্যালয় পরিদর্শক অধ্যাপক শাহেদুলখবির চৌধুরী, সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট মো. মঞ্জুরুল কবীর এবং উপ-পরিচালক (হিসাব) ফজলে এলাহী। কমিটি ইতিমধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কিন্তুকোথায় থেকে প্রশ্নফাঁস হয়েছে, কারা জড়িত- এর কিছুই বের করতে পারেনি একমিটি।
আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডেরচেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম বলেন, ফেসবুকে প্রশ্ন পাওয়াযাচ্ছে এমন একটি খবর আমরা পেয়েছি। তবে প্রশ্ন এখনও হাতে পাইনি। তিনি বলেন, প্রশ্ন ফাঁস হয়ে থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমান সরকারের আমলেপ্রশ্ন ফাঁস একটি বিশেষ আলোচিত বিষয়। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত বিসিএস, গোয়েন্দা কর্মকর্তা, সমাজসেবা কর্মকর্তা, খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, অডিট, এনবিআর, এটিইও, মেডিকেল, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা, এসএসসি, এইচএসসি, জেএসসি-জেডিসি, পিএসসি, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাসহ প্রায় ৩০টিপরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ও অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগেরভিত্তিতে স্থগিত করা হয় ৩৩তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা। গত ৩৫ বছরে অন্তত ৭৮টিপরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হলেও তদন্ত কমিটি হয়েছে ২৩টিতে। আর বাতিল ও স্থগিতেরঘটনা ঘটেছে সর্বোচ্চ ১২টি। সরকারি নথিপত্র অনুযায়ী ১৯৭৯ সালে প্রথম এসএসসিপরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণের সঙ্গে জড়িতথাকার শাস্তি ন্যূনতম ৩ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডসহ অর্থদণ্ডেরবিধান রয়েছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়। পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইন, ১৯৮০ এবং সংশোধনী ১৯৯২-এর চার নম্বর ধারায় এ শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু এপর্যন্ত প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে দু-একটি ছাড়া বেশিরভাগেরই শাস্তির নজির নেই। শাস্তি না হওয়ায় জড়িতরা আরও উৎসাহিত হয়ে থাকেন।