আগামী বাজেট লক্ষ্য-বিলাসী: সিপিডি

 

স্টাফ রিপোর্টার: আগামী ২০১৪-১৫অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আয়-ব্যয় কাঠামো ভঙ্গুর বলে উল্লেখ করেছেনসেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ডিসটিংগুইশড ফেলো ড. দেবপ্রিয়ভট্টাচার্য। তিনি বলেছেন, আয় ও ব্যয়ের যে পরিকল্পনা করা হয়েছে বাস্তবতারনিরীখে তা সম্পন্ন করা কঠিন। বাজেটকে লক্ষ্যবিলাসী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, বাজেটের বিভিন্ন লক্ষ্য যেমন- আয়, ব্যয়, অর্থায়ন এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধিরলক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বিলাসিতা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ লক্ষ্য আমাদেরকাঙ্ক্ষিত, তবে সক্ষমতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি অর্থনীতির সার্বিকউন্নয়নে স্বাধীন পরিসংখ্যান কমিশন, কৃষি মূল্য কমিশন, স্থানীয় সরকারঅর্থায়ন কমিশন এবং সরকারি ব্যয় নিরীক্ষা কমিশন গঠনের তাগিদ দিয়েছেন।

গতকালশুক্রবার রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে বাজেট বিশ্লেষণ নিয়ে সিপিডিআয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এসময় উপস্থিত ছিলেনসিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড.ফাহমিদা খাতুন এবং অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেমসহসিপিডির গবেষকবৃন্দ।

বাজেটের গুণগত মান প্রশ্নবিদ্ধ: বাজেটবিশ্লেষণে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, গত কয়েক বছরের বাজেট বিশ্লেষণ করেদেখা গেছে, বাজেটে যেসব আয় ও ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয় প্রকৃত বাস্তবায়ন তারচেয়ে অনেক কম। ধারাবাহিকভাবে বাজেটের প্রাক্কলন ও বাস্তবায়নের দূরত্ববাড়ায় বাজেটের গুণগত মান প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ড. দেবপ্রিয় বলেন, আগামীঅর্থবছরের বাজেটে যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে তাতে ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকীপরিকল্পনার সাথে কোনো সমন্বয় নেই। মনে হয়েছে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাকেওপুরোপুরি বর্জন করা হয়েছে। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাঅনুসরণ করা উচিত ছিলো।

প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে বিভ্রান্তি:এদিকেবাজেটের অর্থনৈতিক পরিসংখ্যানে দু ধরনের ভিত্তিবছর গণনা নিয়ে প্রশ্নতুলেছেন ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, সরকারের সব অর্থনৈতিকপরিসংখ্যান ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে ভিত্তিবছর ধরে হিসাব করা হচ্ছে। কিন্তু মোটদেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ১৯৯৫-৯৬ কে ভিত্তিবছর ধরে করা হলে এনিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। তাছাড়া ৭.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কিভাবে অর্জন হবেতার ভিত্তি নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। কারণ এ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বাড়তি (চলতি বছরের তুলনায় বেশি) প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার মতো বেসরকারিবিনিয়োগ প্রয়োজন। বর্তমানে বিনিয়োগ স্থবিরতায় সরকার এমন কোনো পদক্ষেপনেয়নি যে বেসরকারি বিনিয়োগ রেকর্ড পরিমাণে বাড়বে।

আয়-ব্যয় কাঠামোভঙ্গুর:বাজেটের আয়-ব্যয় কাঠামোর ভঙ্গুরতা প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয়ভট্টাচার্য বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের যে প্রাক্কলন করাহয়েছে বর্তমান বাস্তবতায় তা সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ইতোমধ্যে চলতি অর্থবছরে বড়অঙ্কের রাজস্ব আয়ের ঘাটতি হয়েছে। তার ওপর আগামী বছরেও বড় অঙ্কের রাজস্বআয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তা আদায় সম্ভব না হলে ব্যাংক ঋণনির্ভরতা বেড়ে যেতে পারে। এদিকে বাজেটের ঘাটতি পূরণে বিদেশি অর্থায়ন থেকে৪১০ কোটি ডলার সহায়তার প্রাক্কলন করা হয়েছে। বাংলাদেশ কখনো এতো বড়অঙ্কের বিদেশি সহায়তা ব্যবহার করতে পারেনি। আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলানোর জন্যইবড় অঙ্কের বিদেশি সহায়তা পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।

এডিপিতেনৈরাজ্য:এডিপি বাস্তবায়নে নৈরাজ্য চলছে উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যবলেন, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় আগামী বাজেটে প্রায় ৪০শতাংশ বেশি এডিপি ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতো বড় এডিপি বাস্তবায়নকরার সক্ষমতা রয়েছে কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাছাড়া কিছু প্রকল্প বছরের পরবছর ধরে ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে। কিছু প্রকল্পে নামমাত্র বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্পেরআকার বাড়ানো হচ্ছে। অগ্রাধিকারযোগ্য কিছু প্রকল্পে যথাযথভাবে অর্থ দেয়াহচ্ছে না। তাছাড়া যেসব এডিপি বাস্তবায়ন হচ্ছে তাদের ফলাফল ভিত্তিক কার্যকরীপরিবীক্ষণ হয় না। ফলে এডিপিতে অপচয় বাড়ছে। এডিপি বাস্তবায়নে এ ধরনেরনৈরাজ্য বন্ধ না হলে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
বাস্তবায়নেরাজনৈতিক সমঝোতা জরুরি:নতুন সরকারের প্রথম বাজেটে যে ধরনের উদ্দীপনা থাকারকথা তা প্রস্তাবিত বাজেটে ছিলো না উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাজেট বাস্তবায়নেরাজনৈতিক সমঝোতার পরিবেশ খুবই দরকার। অন্যথায় অর্থনীতি বড় ধরনের চাপেরমুখে পড়ে যাবে।জ্বালানি প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয় বলেন, বিদ্যুতের বড়বড় প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন পিছিয়ে পড়ছে। রেন্টাল ও কুইক রেন্টালের ওপরনির্ভরশীলতা চিরজীবী করতেই এ অবস্থা করে রাখা হয়েছে। প্রকল্পগুলোতে অর্থদেয়ার পরও ঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। কালো টাকা প্রসঙ্গে ড. দেবপ্রিয়ভট্টাচার্য বলেন, একদিকে কর বাড়ানো হবে অন্যদিকে কালো টাকা শাদা করারসুযোগ বছরের পর বছর দেয়া হবে এটা দ্বিমুখী নীতি।

পদ্মা সেতু:পদ্মাসেতু নিজস্ব অর্থায়নে করায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৭ বিলিয়ন ডলারে নেমেআসবে। ফলে মূল্যস্ফীতিজনিত চাপ আসে কি-না তা ভাবা প্রয়োজন। পদ্মা সেতুতে বড়অঙ্কের অর্থায়নের ফলে সামাজিক খাতে ব্যয় কমাতে হয়েছে। সুতরাং স্বচ্ছভাবেযেন পদ্মা সেতু নির্মাণ হয় সে বিষয়ে নজর থাকা প্রয়োজন।