লাল পতাকার সদস্য আশরাফুলকে জবাই করে খুন

 

মেহেরপুর গাংনীর গোপালনগর মাঠে অস্ত্রধারী চরমপন্থিদের কিলিং মিশন

ঘটনাস্থল থেকে ফিরে মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর গাংনী এলাকার ত্রাস, বেআইনী চরমপন্থি সংগঠন পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির (লাল পতাকা) সক্রিয় সদস্য আশরাফুল ইসলামকে (৩৫) জবাই করেখুন করা হয়েছে। গত বুধবার রাতের কোনো এক সময় এ ঘটনা ঘটে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে গোপালনগর ভোলারদাঁড় মাঠে তার লাশের সন্ধান পায় স্থানীয়রা। আশরাফুল শিমুলতলা গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে। সন্ত্রাসীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বানিয়াপুকুর গ্রামের কয়েকজন মাঠে ভেড়া চরাতে গিয়ে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। প্রাথমিকভাবে অজ্ঞাত লাশ হিসেবে পরিচিত হলেও ঘন্টাখানেকেরমাথায় প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায়। নিহতের পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিচয় নিশ্চিত করেন।

নিহতের স্ত্রী নাছিমা খাতুন জানান, গতবুধবার বিকেলে ক্ষেতে কাজ করার উদ্দেশে আশরাফুল বাড়ি থেকে বের হয়। তার পর থেকেই কোনো খোঁজ মেলেনি। তিনি আরো জানান, পুলিশের গ্রেফতার অভিযানের কারণে তিনি রাতে বাড়ির বাইরে থাকতো। হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে কাউকে সন্দেহ করতে পারছেন না বলেও জানান তিনি। এদিকে খবর পেয়ে গাংনী থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। গতকাল সন্ধ্যায় নিজ গ্রামে লাশ দাফন সম্পন্ন হয়।

গাংনী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াজুল ইসলাম জানান, আশরাফুল বেআইনী চরমপন্থি দলের সক্রিয় সদস্য। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কয়েকটি ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততা পেয়ে পুলিশ তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা করছিলো। তার নামে গাংনী ও আলমডাঙ্গা থানায় হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

আশরাফুলের স্ত্রী নাছিমা খাতুন আরো জানান, ঝোড়পাড়া গ্রামের আকুববর আলীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। বছরখানেক আগে জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি দিনমজুরি শুরু করে। অভাবের সংসারে খেয়ে নাখেয়ে তাদের দিন চলছিলো। পুলিশ বিনা কারণে তাকে সন্দেহ করে আসছিলো বলে জানান তিনি। সে চরমপন্থি সংগঠনের সাথে জড়িত নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকালবৃহস্পতিবার সন্ধ্যার আগে আশরাফুলকে শ্যালোইঞ্জিনচালিত আলগামনযোগে হাটবোয়ালিয়ার দিকে যেতে দেখেছেন অনেকেই। তার বাহিনীর সদস্যরা তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছে বলেও সন্দেহ করছে এলাকার লোকজন। আশরাফুলের ব্যবহৃত মোবাইলের কললিস্ট যাচাই করলে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন হবে বলেও মনে করছেন গ্রামবাসী ও পরিবারের লোকজন।

কে এই আশরাফুল:বিভিন্ন মাধ্যমে আরো জানা গেছে, গাংনী ও আলমডাঙ্গা এলাকার একসময়ের ত্রাস লাল পতাকার আঞ্চলিক কমান্ডার হেমায়েতপুর গ্রামের হাউস ও তার খালাতো ভাই আড়পাড়া গ্রামের আকছেদ আলীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলো এ আশরাফুল। বেশ কয়েক বছর আগে হাউস ও আকছেদ ক্রস ফায়ারে নিহত হলেও তার সহযোগীদের সাথে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতো আশরাফুল। এলাকার মানুষ তাকে সন্ত্রাসী হিসেবেই আখ্যায়িত করেছে। এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই, বোমাবাজি ও চাঁদাবাজির ঘটনাগুলোতে অভিযোগের তীর ছিলো তার দিকেই। সম্প্রতি ওই এলাকায় গড়ে ওঠা একটি গ্যাং গ্রুপের সাথে কাজ করছিলো আশরাফুল। ওই গ্যাং গ্রুপ ইটভাটাসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি শুরু করে। চাঁদার টাকা ভাগাভাগিসহ অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে তাকে খুন করা হয়েছে বলে এলাকায় যেমনি গুঞ্জন রয়েছে তেমনি পুলিশও তাই সন্দেহ করছে।

               পারিবারিক পরিচয়,মড়কা বাজারের পার্শ্ববর্তী শিমুলতলা গ্রামের মজিবর রহমান ও মৃত রমেলা খাতুনের ৫ ছেলে এবং এক মেয়ের মধ্যে আশরাফুল ছিলো সেজ। ৭-৮ বছর আগে পার্শ্ববর্তী রুয়েরকান্দি গ্রামের মাহতাব আলীর মেয়ে নাছিমা খাতুনের সাথে আশরাফুলের বিয়ে হয়। তার একমাত্র সন্তান হাসিবুল ইসলাম শিমুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র। দরিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিকে হারিয়ে স্ত্রী ও ছেলে পথে বসার উপক্রম হয়ে পড়েছে বলে জানালেন তার স্ত্রী নাছিমা। পরের জায়গায় কোনোমতে একটি কুড়েঘরে তাদের বসবাস।