মোমিন ও নিমাইয়ের তিন দিনের রিমান্ড শুরু: জামাই আদরে জিজ্ঞাসাবাদ!

 

সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যকারীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে জীবননগরে মানববন্ধন ও প্রতিবাদসভা

 

স্টাফ রিপোর্টার:সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার সাথে জড়িত আর তেমন কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ইতঃপূর্বে গ্রেফতারকৃত মোমিন ও নিমাইয়ের ৩ দিনের রিমান্ড শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হলেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জিআরপি দর্শনা ফাঁড়ি ইনচার্জ এসআই আবু মোনায়েম নতুন কোনো তথ্য দিতে পারেননি।রিমান্ডের প্রথম দিনে দু আসামিকে অনেকটা জামাই আদাররের মতো করেই মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের পক্ষে অভিযোগ উত্থাপন করে প্রশ্ন তুলে বলা হয়েছে, ঘাতকচক্রের সদস্যদের ওইভাবে আদার করলে কি আর খুনের কতা স্বীকার কররে?

এদিকে সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার প্রতিবাদে ও হত্যকারীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। গতকাল জীবননগর প্রেসক্লাবের উদ্যোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদসভার আয়োজন করা হয়।অপরদিকে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণারপ্রস্ততি নিচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের মোমিনপুর ইউনিয়নের নীলমণিগঞ্জের মরহুম নূর মোহাম্মেদের ছেলে সদরুল আলম নিপুল ছিলেন দৈনিক মাথাভাঙ্গার মোমিনপুর প্রতিনিধি। গত ২০ মে রাতে তাকে কৌশলে ডেকে নিয়ে বাড়ির অদূরবর্তী মোমিনপুর স্টেশনে নিয়ে নির্মমভাবে নিযাতন করা হয়। নেশাজাতীয় দ্রব্য প্রয়োগ করে ও মাথায় আঘাত করে মৃতপ্রায় অবস্থায় সদরুল নিপুলকে রেললাইনের মাঝে ফেলে রাখা হয় ট্রেনে কেটে খণ্ডবিখণ্ড হয় সাংবাদিক নিপুলের নিথর দেহ। প্লাটফমের ওপর নির্যাতনের দাগ ও রক্ত দেখে স্থানীয়রা যেমন নিশ্চিত হন নিপুলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে, তেমনই সদর থানা পুলিশ ছায়া তদন্তেও হত্যার প্রাথমিক প্রমাণ পান। জিআরপি পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। ২১ মে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালমর্গে ময়নাতদন্ত করা হয়। ২২ মে সদরুল নিপুলের স্ত্রী বাদী হয়ে পোড়াদহ জিআরপি থানায় মামলা দায়ের করেন। জিআরপির ইনফরমেশন স্লিপ পেয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশ আসামি গ্রেফতার অভিযান শুরু করে। আমিরপুর হঠাতপাড়ার শাসমুলের ছেলে মোমিনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু তথ্য দিলেও হত্যার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে সে। এছাড়াও পুলিশি অভিযানে ধরাপড়ে মৃত গোপাল ঘোষের ছেলে নিমাই ঘোষ। এদেরকে আদালতে সোপর্দ করে ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। বিজ্ঞ আদালত ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। রিমান্ডের আসামিদের জামাই আদার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উত্থাপন হলেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা অবশ্য আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, রিমান্ডের আসামি মোমিন ঘটনার সাথে জড়িদের নাম গোপন করতে পারবে না।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকার মোমিনপুর প্রতিনিধি সদরুল নিপুল হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে জীবননগর প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে প্রতিবাদসভা ও মানববন্ধন করা হয় গতকাল বৃহস্পতিবার। এদিন বিকেলে জীবননগর বাসস্ট্যান্ডে মানববন্ধন শেষে প্রেসক্লাব সভাপতি আনোয়ারুল কবিরের সভাপতিত্বে ও সাংবাদিক এমআর বাবুর সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যাকান্ডের দীর্ঘ দিন পার হলেও ঘাকদের শনাক্তসহ গ্রেফতার করতে ব্যার্থ হওয়ায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীসহ সরকারের সমালোচনা করা হয়।

প্রতিবাদ সমাবেশে অবিলম্বে নির্ভিক সাংবাদিক সদরুল নিপুলেল হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন জীবনননগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি গোলাম মোর্তূজা, চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি মো. মাহতাব উদ্দীন, জীবননগরের বিশিষ্ট রাজনীতিক কাজী বদরুদোজ্জা, চুয়াডাঙ্গার সাংবাদিক নেতা শেখ সেলিম, যুবলীগ নেতা আ. সালাম ইশা, জীবননগর প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক আতিয়ার রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা আলতাফ হোসেন ফেলা, দর্শনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক পিপুল, জীবননগর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম, সাংবাদিক নারায়ণ ভৌমিক, সালাউদ্দীন কাজল, আকিমুল ইসলাম, শেখ শহিদ প্রমুখ। প্রতিবাদ সমাবেশে জীবননগর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক কামাল সিদ্দিকী বাবু, দর্শনা প্রেসক্লাবের সভাপতি হানিফ মণ্ডল, দর্শনা সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আব্দুল আওয়াল, জীবননগর প্রেসক্লাবের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জিএ জাহিদুল ইসলাম বাবু, সদস্য আফজালুর রহমান ধীরু, কাজী সামসুর রহমান চঞ্চল, জামালউদ্দিন, রফিকুল ইসলাম, অরফান কবীর, হুমায়ুন কবীর, সাব্বির আহমেদ, মারুফ মালেক প্রমুখ এসময় উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা বলেন, সাংবাদিক সদরুল নিপুল হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের মধ্যয়ে চুয়াডাঙ্গায় কর্মরত সাংবাদিকরা প্রমাণ করবে সাংবাদিকদ হত্যা করে পার পাওয়া যায় না। হত্যাকারীদের হাত যতো লম্বাই হোক, তাদের গডফাদার যতো ক্ষমতাধরই হোক, এদের মুখো সাংবাদিকেরা খুলেই ছাড়বে।

উল্লেখ্য, গত ২০ মে রাতে সাংবাদিক সদরুল আমিন নিপুলকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে নৃশংশভাবে হত্যা করে লাশ রেল লাইনের ওপর রেখে ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার প্রচেষ্টা করে ঘাতকচক্র।