স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জেরলোমহর্ষক সাত অপহরণ ও খুনের ঘটনায় গ্রেফতার র্যাবের দু সাবেককর্মকর্তাকে শেষ পর্যন্ত মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। সাত খুনের ঘটনায়নিহত প্যানেল মেয়র নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম ও নারায়ণগঞ্জের সিনিয়রআইনজীবী চন্দন সরকারের মেয়ের জামাই ডাক্তার বিজয় কুমার পালের করা দুটি পৃথকমামলায় তাদের শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়। আদালতে সেলিনা ইসলামের মামলায়রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দু কর্মকর্তাকে আট দিন করে রিমান্ড মঞ্জুরকরেছেন আদালত। এর আগে বৃহস্পতিবার র্যাব-১১’র সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল (অব.) তারেক সাঈদ মোহাম্মদ ও মেজর (অব.) আরিফ হোসেনকে দ্বিতীয় দফায় আদালতেহাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসিমো. মামুনুর রশিদ মণ্ডল গ্রেফতারকৃতদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলেনারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম কেএম মহিউদ্দিন বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা৫০ মিনেটে শুনানি শেষে ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে অনেকজল্পনা-কল্পনার পরে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনভারতে পালিয়ে গেছেন বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
র্যাবের এডিজি কর্নেল জিয়াউলআহসান দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নূর হোসেনের ভারতে পালিয়ে যাওয়ারবিষয়টি আগেই নিশ্চিত করলেও পুলিশ এ ব্যাপারে তখন কোনো মন্তব্য করেনি। নূরহোসেনকে গ্রেফতারে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সাহায্য চেয়ে চিঠিপাঠিয়েছে জেলা পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারেরকার্যালয় পুলিশ সদর দফতরে এ চিঠি প্রেরণ করেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।অপরদিকে আদালতে আসামি পক্ষে শুনানিতে অংশ নেয়ায় এক আইনজীবীকে বিক্ষুব্ধআইনজীবীরা কোর্ট চত্বরেই গণধোলাই দিয়েছেন। আসামিদের পক্ষে আদালতে অংশ নেনজাতীয় পার্টির নেতা অ্যাডভোকেট মজিদ খোন্দকার, অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হকসহ ৪আইনজীবী।
আদালত সূত্র জানায়, ব্যাপক নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে বৃহস্পতিবারবিকাল ৫টা ২০ মিনিটে ওই দু কর্মকর্তাকে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়ালম্যাজিস্ট্রেট কেএম মহিউদ্দিনের আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের শুরুতেইপ্রথমেই কোর্ট সিএসআই আশরাফুজ্জামান র্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগউত্থাপন করে তাদের প্রত্যাহার, চাকরিচ্যুত ও পুলিশ কর্তৃক গ্রেফতার, ১৭ মেশনিবার তাদের দুজনের ৫ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়েছে বলেবিবরণ দেন। একই আইনজীবী ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুজনকে শ্যোনঅ্যারেস্ট ও নতুন করে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছেন বলে আদালতকে অবগতকরেন। এ সময় আদালতের অনুমতি নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসাখওয়াত হোসেন খাঁন শুনানিতে অংশ নিয়ে আদালতকে বলেন, সেভেন মার্ডারের ঘটনায়লাশের সাথে র্যাবের ডাল খাওয়া বস্তা, রশি, ইট, গিট দেয়ার ধরন বলে দেয় এহত্যার সাথে তারা জড়িত। এ সময় আদালতে শুনানিতে আইনজীবীদের মধ্যে আরওঅংশগ্রহণ করেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন ও এপিপি বজলুর রহমানসহশতাধিক আইনজীবী। এসময়কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা র্যাবের সাবেক সিও তারেকসাঈদ মোহাম্মদ বলেন, সাত খুনের ঘটনা শুনে তাদের পরিবারের প্রতি আমি সমবেদনাজানিয়েছিলাম। এ হত্যায় আমাদের অভিযুক্ত করে তা দলীয়করণ করা হয়েছে। দলীয়দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে সব কিছু দেখা হচ্ছে। তিনি উদহারণ টেনে বলেন, ডাক্তারলাঞ্ছিত হওয়ার পরও আসামি সেই ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসার অধিকার পেয়েথাকে। কিন্তু আমরা আসামি হওয়ার পর থেকে আমাদের পক্ষে আইনজীবী দেয়ারঅধিকারটুকুও কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষে কথা বলার জন্য আইনজীবী নাপাওয়াটা দুঃখজনক। তারেক সাঈদের কথা চলাকালে পুরো আদালতে হইচই শুরু হয়ে যায়।তারেক সাঈদ কথা বলা না থামিয়ে বলেন, আমি চাই এটা অধিকতর থেকে অধিকতর তদন্তহোক। এ সময় আদালতে দু র্যাব কর্মকর্তার পক্ষে শুনানিতে অংশগ্রহণ করেনঅ্যাডভোকেট মজিদ খন্দকার ও সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী মোজাম্মেল হক। এদেরমধ্যে মোজাম্মেল হক র্যাবের দু কর্মকর্তার পক্ষে শুনানি করতে গেলে দুজনকেকিল, ঘুষি ও লাথি মেরে লাঞ্ছিত করেন সাধারণ আইনজীবীরা। অন্যদিকে কাঠগড়ায়দাঁড়িয়ে থাকা সাবেক র্যাব কমকর্তা মো. আরিফ ছিলেন সম্পূর্ণ নিশ্চুপ। তিনিকোনো কথা বলেননি। দুজনকে মাথায় হেলমেট, রশি, হাতকড়া পরিয়ে আনা হয়। একপর্যায়ে আদালতের বিচারক আইনজীবী ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার শ্যোনঅ্যারেস্ট ও ১০ দিন রিমান্ড আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুজনকে সেভেন মার্ডারেরঘটনায় দায়েরকৃত দুটি মামলায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে ৮ দিন করে রিমান্ডমঞ্জুর করেন। পাশাপাশি এ ঘটনায় গ্রেফতারকৃত র্যাবের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তার্যাব-১১’র স্পেশাল ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানির সাবেক ইনচার্জ লে.কমান্ডার এমএম রানাকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ডচলছে। আগামী শনিবার এমএম রানার ৭ দিনের রিমান্ডের দিন পূর্ণ হবে। তাকেরোববার আদালতে হাজির করা হতে পারে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।