স্টাফ রিপোর্টার: নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের ঘটনায় প্রধানঅভিযুক্ত নূর হোসেনের ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সত্যতা পেয়েছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। ঘটনার পর দু দিন এলাকায় প্রকাশ্য ঘোরাফেরা করলেও লাশউদ্ধারের দিনই আত্মগোপনে চলে যায় সে। এরপর প্রভাবশালী এক ব্যক্তির আশ্রয়েচার দিন থাকার পর গত ৫ মে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেনূর হোসেন। তাকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তাকারী কামাল হোসেন নামে একব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বিষয়ে নিশ্চিতহয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে কামাল বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জের পুলিশসুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে কামাল যা তথ্য দিয়েছে তাযাচাইবাছাই করা হচ্ছে। এরপর নূর হোসেনকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নূর হোসেনের সাথে যোগাযোগের সূত্র ধরেকয়েকদিন আগে যশোরের শার্শার শ্যামলাগাছি এলাকা থেকে কামাল নামে একব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কামালকে দু দফা রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদকরা হলে সে নূর হোসেনকে ভারতে পালিয়ে যেতে সহায়তার কথা জানায়। সে শার্শারশ্যামলাগাছিতে মশিউর নামে এক ব্যক্তির অধীনে কাজ করে। মশিউর সীমান্তের ওপারথেকে ফেনসিডিল এনে বিক্রি করে। মাদক বেচাকেনার সূত্র ধরেই কয়েক বছর আগেমশিউরের সাথে নূর হোসেনের পরিচয় হয়। তারা দুজন ঘনিষ্ঠ ছিলো। মশিউরেরস্ত্রী মারা যাওয়ার পর নূর হোসেন উদ্যোগ নিয়ে চিটাগাং রোড এলাকায় এক তরুণীরসাথে তার বিয়ে করিয়ে দেয়। এরপর নূর হোসেনের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা আরও বেড়েযায়।
কামাল হোসেন জানায়, গত ৫ মে রাতে সে শ্যামলগাছিতে নূর হোসেনকেমশিউরের অফিসে সে দেখেছে। মশিউরের নির্দেশে তাদের নাস্তা এনে খাওয়ায়। নূরহোসেনকে নিয়ে সে সময় সারাদেশে তোলপাড় চলছিলো। শ্যামলাগাছিতে যাওয়ার সময় নূরহোসেনের পরনে একটি লুঙ্গি ও একটি হাফ হাতা গেঞ্জি ছিলো। তার মাথার চুল কালোকরা ছিলো। রাত ১০টার দিকে মশিউর তাকে (কামাল) বিদায় দিয়ে নূর হোসেনকে নিয়েসীমান্তের দিকে যায়। এ সময় মশিউর তাকে বলে, তুই চলে যা, আমি ভাইকে একটুওপারে দিয়ে আসি।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঘটনার কয়েকদিন পর তারানূর হোসেনের সাথে মশিউরের যোগাযোগের তথ্য পান। মশিউরকে চিহ্নিত করতে তারপ্রধান সহযোগী কামালকে ধরা হয়। কিন্তু কামালকে আটকের বিষয়টি কোনোভাবে টেরপেয়ে মশিউর আত্মগোপনে চলে যায়।
সূত্র জানায়, নূর হোসেনের কোলকাতায় ব্যবসা ওএকটি বাড়ি আছে। সেখানে তার অনেক বন্ধু-বান্ধবও রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সেভারতে গিয়ে কোনো বন্ধুর আশ্রয়ে আত্মগোপন করে আছে। কামালের বক্তব্য অনুযায়ীনূর হোসেন একাই কোলকাতায় গিয়েছে। কিন্তু পুলিশ তার স্ত্রী-সন্তানদের খোঁজওপাচ্ছে না। প্রথম দিকে ধারণা করা হয়েছিলো, স্ত্রী-সন্তান সাথে নিয়েই নূরহোসেন কলকাতায় গিয়েছে। তবে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, নূর হোসেন ভারতেযাওয়ার পরের দু-এক দিনে তার স্ত্রী-সন্তানও অবৈধভাবে সীমান্ত পার হয়েছেবলে তারা ধারণা করছেন।
এদিকে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের সাথে নূর হোসেনেরজড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। প্রমাণ হাতে পাওয়ার পরই নূরহোসেনের অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।এজাহারভুক্ত অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে এখনও কোনো জড়িত থাকার তথ্যপ্রমাণ হাতেপাওয়া যায়নি। তথ্যপ্রমাণ হাতে পাওয়ার সাথে সাথে পলাতক আসামিদেরস্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করা হবে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজনকর্মকর্তা বলেন, নূর হোসেন যে জড়িত সে সম্পর্কে তারা মোটামুটি নিশ্চিতহয়েছেন। এ সংক্রান্ত কিছু তথ্য-প্রমাণ হাতে পেয়েছেন। তাকে ধরতে পারলে অন্যআর কে কে এই ঘটনার সাথে জড়িত রয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।
অন্য আসামিরাকোথায়: সাত খুনের এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি নূর হোসেন ভারতে পালিয়ে যাওয়ারবিষয়ে নিশ্চিত হলেও অন্যরা কে কোথায় আছে তা জানতে পারেনি পুলিশ।এজাহারভুক্ত দু নম্বর আসামি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারিহাজি ইয়াসিন ও চার নম্বর আসামি আমিনুল ইসলাম রাজু ঘটনার পরপরই সিঙ্গাপুরপালিয়ে গেছে বলে গুঞ্জন আছে। তবে গতকাল পর্যন্ত তাদের সিঙ্গাপুর পালিয়েযাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তিন নম্বর আসামি ও নূর হোসেনেরক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত হাসমত আলী হাসুকে কয়েকদিন আগে গ্রেফতারের গুঞ্জনওঠে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বিষয়টি প্রথমে স্বীকার করলেও পরে তিনি টিভিরস্ক্রল দেখে বলেছিলেন দাবি করেন। বিজিবির হাতে গ্রেফতার হওয়ার গুজব উঠলেতাকে গতকাল পর্যন্ত পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়নি। এছাড়া অপর দু আসামিইকবাল ও আনোয়ারের কোনো অবস্থান শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেফতারঅভিযানে অংশ নেয়া এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, তারা প্রযুক্তির সহায়তা নিয়েএজাহারভুক্ত আসামি ও নূর হোসেনের সহযোগীদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করছেন।তবে আসামিরা সবাই আত্মগোপনে অনেক কৌশল অবলম্বন করছে। তারা ঘন ঘন জায়গা বদলকরছে। এ কারণে অনেক অভিযান ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি জানান, তারা প্রায় প্রতিরাতেই কোথাও না কোথাও অভিযান চালাচ্ছেন। দেশের বিভিন্ন সীমান্ত এলাকাতেওঅভিযান চালানো হয়েছে। এ সব অভিযানে নূর হোসেনের কিছু ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে ধরাগেলেও এজাহারভুক্ত আসামিদের কাউকেই পাওয়া যায়নি।
পুলিশের এক কর্মকর্তাজানান, তারা যোগাযোগের জন্য নিজেদের মোবাইল ব্যবহার করছেন না। দোকানেরমোবাইল ব্যবহার করে যোগাযোগ করছেন। এ কারণে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা গেলেওগ্রেফতার করা যাচ্ছে না।