ইসলাম রকিব: নাম হযরত আলী। বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর গ্রামে। দীর্ঘ ২০ বছর ধরে কখনো নিজের জমি, আবার কখনো অন্যের জমি বর্গা নিয়ে বাখারি সবজিচাষ করে আসছেন বলে জানা যায়। গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গা বড়বাজার শহীদ হাসান চত্বর মোড় হয়ে রেলবাজার রেলগেট পর্যন্ত প্রধান সড়কে ভ্যানে করে এ বাখারি বিক্রি করে বেড়াচ্ছিলেন কৃষক হযরত আলী। প্রতিটি বাখারির দাম হাঁকা হয় ৩০/৩৫ টাকা। আর তা একটু দর কষাকষি করলেই ২০/২৫ টাকায় বিক্রি করে করে দেয়া হচ্ছিলো। চুয়াডাঙ্গা রেলবাজারের প্রধান সড়ক সংলগ্ন চটকাবৃক্ষের নিচে উৎসুক জনতার ভীড় দেখে মোটরসাইকেলের গতি কমিয়ে ভীড়ের কারণ অনুধাবন করার চেষ্টা করা হয়। দেখা যায় একজন ৫০ উর্ধ্বে ব্যক্তি। নাম তারহযরত আলী।বড় বজ্রা ঝুড়িতে সাজানো মহিষের শিঙের মতো বাঁকানো কি যেন ভ্যানের ওপর দাঁড় করে উঁচিয়ে বিক্রির জন্য জনগণকে দেখাচ্ছে। আর বলছেন সু-স্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি। যা একবার খেলে বার বার খেতে ইচ্ছে করবে। বিক্রিও হচ্ছে বেশ। এর নাম ভালো ভাবে কেউ না জানলেও হুচুকে বাঙালি অনেকেই দেখা-দেখি কিনছে তা। দাম নেহায়েত কম নয়। ভ্যানের ওপরে থাকা কৃষক হযরত আলী জিনিসটার নাম কি?একাধিক লোকের এ প্রশ্নের জবাবে বলতে থাকেন এর নাম বাখারি। যা লাউ/কদু জাতীয় সবজি। মাংস বাদে যেকোনো আমিষ জাতীয় তরকারির সাথে রান্না করে খাওয়া যায়। বিশেষ করে ছোট মাছ হলেই সবচেয়ে ভালো হয়। বাখারি নামের কথা শুনে অনেকে মুখ টিপে হাসলেও কৃষক হযরত আলীর বিক্রি ও হাঁক-ডাকে ভ্রাম্যমাণ বিক্রির স্থানে লোকজনের ভিড় লেগেই ছিলো। হযরত আলী বলেন, দীর্ঘ ২০ বছর ধরে বাখারির চাষ করে ভালোভাবেই সংসার চালিয়ে আসছি। বেশ ভালোই লাগে। তবে অনেকে খিত্তক করে বলে বুনো ধন্দল বিক্রি করছে। কিনতে আসা অনেকে বলেন, চিচিঙ্গার সাথে বুনো ধন্দলের কস করে এ বাখারি হাইব্রিট পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়। যা সবজিগুন সমৃদ্ধ। তবে একজন ব্যক্তি বলেন, হযরত আলী নিজে এ সবজিচাষ করে কি-না তা বলতে পারবো না। তবে শুনেছি এ সময়(এপ্রিল-মে মাসে) কৃষক হযরত আলী ও তার কয়েকজন সহযোগী হাইব্রিট পদ্ধতিতে উৎপাদিত এ বাখারি ভারত থেকে চোরাই পথে নিয়ে বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি করেন। যেখানে ৫শ টাকায় ১শ বাখারি নিয়ে আসা যায়। বাংলাদেশের বাজারে বিক্রি করা হয় প্রতিটি ২০/২৫ টাকায়। তবে এ ব্যক্তির কথার সরাসরি কোনো প্রতিবাদ না করলেও কৃষক হযরত আলী বলেন, ভারতের গুজরাট থেকে আমদানিকৃত উচ্চ ফলনশীল জাতের বাখারির বীজ দিয়ে আমি নিজের জমিতে চাষ করে বিক্রি করি। কে-কিবললো তা আমার যায় আসেনা।
তবে সচেতনমহলের দাবি, দেশের হোক বা ভারেতের উৎপাদিত হোক তা নিয়ে কারো মাথা ব্যাথা না থাকলেও এ বাখারির সবজি বা খাদ্যগুন কতোটুকু,মানবদেহের জন্য কতোটুকু উপকারি তার জবাব মেলেনি। অনেক মুরুব্বিরা বলতে থাকেন যদি ধুন্দলের সাথেকস করে বাখারি সবজি উৎপাদন করা হয় তা হলে মানুষের শরীরের জন্য কিছুটা হলেও ক্ষতিকর। কারণ ধুন্দলে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপাদান থাকে। এ বিষয়ে অনেকে জেলা কৃষি গবেষণা বা সবজি গবেষকদের এ বাখারি কতোটুকু স্বাস্থ্যসম্মত তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার আহ্বান জানান।