ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহের চাষিদের মধ্যে ধান আবাদে গুটি ইউরিয়ার ব্যবহার বেড়েছে। এ পদ্ধতিতে শুধু বোরোয় সদর উপজেলায় ৩ হাজার টন ইউরিয়া সার সাশ্রয় হয়েছে। অন্যদিকে ভালো ফলন পেয়ে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় তিন বছর যাবত তারা চাষাবাদে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার শুরু করেছেন। প্রথমদিকে গুটির ব্যবহার নিয়ে তাদের মনে সংশয় থাকলেও এখন তা ব্যবহার করে ভালো ফল পাচ্ছেন। কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তারা জানান, গুটি ইউরিয়ার ব্যবহারে ধানের ফলন গুড়া ইউরিয়ার চাইতে শতকরা ২০/২৫ ভাগ বেশি পাওয়া যায়। ক্ষেতে আগাছা কম জন্মে, পোঁকামাকড়ের আক্রমণ কম হয় এবং ধানে চিটা কম হয়, দানা পুষ্ট হয়। গুটির ব্যবহারে সবজীর আকার বড় হয়, দেখতে সুন্দর হয় এবং বাজারে এর দামও ভালো পাওয়া যায়। কলাচাষেও গুটির ব্যবহার বেশ লাভজনক।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক্সেলেটারিং এগ্রিকালচার প্রডাক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট (আপি) প্রকল্পের আওতায় ২০১১ সাল থেকে ঝিনাইদহ জেলায় গুটি ইউরিয়া ব্যবহার সম্প্রসারণ কার্যক্রম শুরু হয়। এ প্রকল্পে সহায়তা করে ইন্টারন্যাশনাল ফার্টিলাইজার ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (আইএফডিসি) ও ইউএসআইডি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে, এক বিঘা ধান আবাদে ইউরিয়া লাগে ন্যুনতম ৫০ কেজি, সেখানে গুটি মাত্র ২২-২৩ কেজি। চলতি মরসুমে সদর উপজেলায় ৭ হাজার ১৩০ হেক্টর জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করেন চাষিরা। এতে ৩ হাজার টন ইউরিয়া সার সাশ্রয় হয়েছে।
এদিকে গুটি ইউরিয়ার জোগান দিতে বিসিআইসি ডিলারসহ মাধ্যমে ১৪টি কারখানার মাধ্যমে জেলার চাষিদের কাছে গুটি ইউরিয়া বিক্রি করা হচ্ছে। গুটি তৈরির কারাখানার মালিক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘আমি আইএফডিসি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের সহায়তায় এলাকায় গুটি তৈরির মেশিন (ব্রিকোয়েট মেশিন) বসাই। প্রতি মরসুমে প্রায় ৮০ টন গুটি উৎপাদন করি। এতে খরচ বাদেও আমার ৬০/৬৫ হাজার টাকা লাভ থাকে। এলাকায় এখন গুটির ব্যাপক চাহিদা।’
চাষিরা বলছেন, ধানের চারা রোপণের পর ক্ষেতে একবার গুটি পুঁতে দিলেই ইউরিয়া সার ব্যবহারের আর কোনো ঝামেলা নেই। কিন্তু গুঁড়ো ইউরিয়া ব্যবহার করতে হয় তিনবার। গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে চাষ খরচ কিছুটা বেশি হলেও গুঁড়ো ইউরিয়ার চেয়ে বিঘায় তিন-চার মণ বেশি ফলন মেলে। এতে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন গুটি ইউরিয়া সার ব্যবহারকারীরা। তাই দিন দিন বেড়েই চলছে গুটি ইউরিয়ার ব্যবহার।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের মাঠে প্রায় সাড়ে তিনশ হেক্টরে বোরো জমিতে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়েছে। গত বোরো মরসুমেও এখানে গুঁড়ো ইউরিয়া প্রয়োগ করা হয়েছিলো। পোড়াহাটি গ্রামের বোরো চাষি আব্দুর রহমান জানান, ধানের চারা রোপণের এক সপ্তার মধ্যে জমিতে গুটি ইউরিয়া পুঁতে দিতে হয়। তবে অবশ্যই ধান লাইন দিয়ে লাগাতে হবে। ওই পদ্ধতিতে ধান কাটা পর্যন্ত ইউরিয়া সার কাজ করে। তাই ধান গাছে চাহিদা মতো সারের জোগান পাওয়ায় ফলন ভালো হয়।
এদিকে গত রোববার পোড়াহাটি গ্রামের মাঠে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ বিষয়ক মাঠ দিবস ও শস্যকর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এতে আইএফডিসি’র মাঠ সমন্বয়কারী মীর মো. আবদুল মান্নান, মৃত্তিকা বিজ্ঞানী আজহারুল হক, মাঠ পর্যবেক্ষক আজহার মাহমুদ বক্তব্য রাখেন। এসময় এলাকার কয়েকশ কৃষক-কৃষাণী উপস্থিত ছিলেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক জয়নুল আবেদীন জানান, ক্ষেতে ইউরিয়া ছিটিয়ে দিলে অর্ধেক পরিমাণ বাতাসের সাথে মিশে যায়। অতিরিক্ত নাইট্টোজেন জমে বায়ুমণ্ডলে উষ্ণতা সৃষ্টি হচ্ছে। গুটি ইউরিয়া পদ্ধতিতে ইউরিয়া বা নাইট্রোজেন বাতাসে মিশে উড়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে এটি পরিবেশের ক্ষতি করে না।