চায়ের দোকানদার থেকে প্রধানমন্ত্রী

 

মাথাভাঙ্গা মনিটর: ভারতেরলোকসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠনের পথে বিজেপি নেতৃত্বাধীনএনডিএ জোট। নিরঙ্কুশ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ২১ মে ভারতের প্রধানমন্ত্রীহিসেবে শপথ নিতে পারেন নরেন্দ্র মোদি। লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩টি আসনের মধ্যে৩৩৮টি আসন পেয়েছে এনডিএ জোট। এর মধ্যে বিজেপি এককভাবে পেয়েছে ২৮৩টি আসন।ফলে সরকার গঠন করতে বিজেপিকে শরিক দলের সহায়তা নিতে হচ্ছে না। কারণ দেশটিরসংবিধান অনুযায়ী সরকার গঠন করতে দরকার হয় ২৭২ আসন।নির্বাচনেভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ জোট। এ জোট পেয়েছে ৫৭টি আসন। এরমধ্যে কংগ্রেস এককভাবে পেয়েছে ৪৮টি আসন। ৩৭ আসন পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেএডিএমকে। আর লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবি মোটামুটি নিশ্চিত হলেওপশ্চিমবঙ্গে বড় ব্যবধানে এগিয়ে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস।পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ৩৪টি আসন পেয়েছে।পশ্চিমবঙ্গের অন্য আসনগুলোর মধ্যে কংগ্রেস ৪টি, বিজেপি ২টি ও বামফ্রন্ট ২টিপেয়েছে।

নামনরেন্দ্র দামোদরদাস মোদি। ভারতের ভাবি প্রধানমন্ত্রী। গুজরাটেরসাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উসকানি দেয়ার অভিযোগ সত্বেও শেষ পর্যন্ত রাজ্যেরমুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। তবে এক সময় তিনি ছিলেন চাবিক্রেতা। গুজরাটের রাজধানীর ভাদনগর ট্রেন স্টেশনে ডানপন্থি আরএসএসের রাজ্যসদর দপ্তর পাশে ভাইয়ের চায়ের দোকানে কাজ করতেন বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিকরাষ্ট্রের ভাবি প্রধান। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মোদির বিজেপিরনেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ৫৮৩টি আসনের মধ্যে ৩৩৬টি আসন পেয়েছে। যা দিল্লিরমসনদে বসার জন্য বেশি হয়ে গেছে। রূপকথার মতোই চা বিক্রেতা থেকে বিশ্বেরবৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

রাজনীতিবিদ হিসেবেনরেন্দ্র মোদির জনপ্রিয়তার একটি বড় কারণ তেজদীপ্ত বক্তৃতা। প্রতিপক্ষকেতুলোধুনো করে দেয়া বক্তৃতার কারণেই সমর্থকদের কাছে ত্রাতা। ভালো ছাত্র নাহলেও ছিলেন ভালো তার্কিক। আগ্রহ ছিল থিয়েটারেও। বিশেষ করে, গুজরাট লোককথারগরীবের রাজা রবিন হুড ধরনের ব্যক্তিত্ব জোগিদাস খুমানের চরিত্রে বেশকয়েকবার অভিনয় করেছেন। বিতর্ক আর থিয়েটারের অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে রাজনৈতিকক্ষেত্রে বেশ ভালোই প্রয়োগ করেছেন মোদি।

প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীআইয়ার বলেছিলেন, আমি কথা দিচ্ছি, নরেন্দ্র মোদি কখনোই দেশের প্রধানমন্ত্রীহতে পারবেন না। তবে এইআইসিসি এর বৈঠকে তিনি চা বিক্রি করতে চাইলে, তার জন্যএকটা জায়গা আমি নিশ্চয় করে দেবো। আইয়ারের কথাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে আজসত্যিই প্রধানমন্ত্রী হয়ে গেলেন নরেন্দ্র মোদি।জন্ম ১৯৫০ সালে গুজরাটে।স্কুলে থাকা অবস্থায় ভাদনগর ট্রেন স্টেশনে বাবার চায়ের দোকানে সাহায্যকরতেন। আঠারো বছর বয়সে বিয়ে করেন যশোদাবেন চিমনলালকে। অল্প সময়ই একসাথেকাটিয়েছেন দুজন। এ বিষয়ে দীর্ঘদিন নিশ্চুপ থাকলেও, বিয়ের বিষয়টি স্বীকারকরেন চলতি নির্বাচনের সময়। একজন আচারনিষ্ঠ হিন্দু হিসেবে তার রাজনৈতিকজীবনের শুরু বিজেপির মতাদর্শিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় সমাজ সেবক দলের প্রচারকহিসেবে ১৯৭০ সালে। পরবর্তীতে সংঘের ছাত্র সংগঠনের দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে।এসময়ের মধ্যেই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পলিটিক্যাল সায়েন্সে গ্রাজুয়েশন করেমাস্টার্স করেন গুজরাট বিশ্ববিদ্যালয়ে।

১৯৮৫ সালে পান বিজেপির সদস্যপদ।কঠোর পরিশ্রম আর দায়িত্বশীলতার মাধ্যমে ধীরে ধীরে জায়গা করে নেন দলে। ২০০১ সালে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন মোদি। সেই থেকে এখনোপর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায়, তার বিরুদ্ধে ২০০২ সালে গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উসকানি দেয়ার অভিযোগ ওঠে।

২০১৪সালের লোকসভা নির্বাচনে দলের প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়নরেন্দ্র মোদির নাম। এরপর থেকে নির্বাচনপূর্ব ও পরবর্তী সবগুলো জরিপে উঠেএসেছে মোদি ও তার দলের জয়জয়কার। কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী নরেন্দ্র মোদিপ্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে ভারতের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র হুমকির মুখে পড়বেআশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। অবশ্য এ ধরনের আশঙ্কাকে স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতেইউড়িয়ে দিয়েছেন মোদি।