আলমডাঙ্গা ব্যুরো: বহু কসরত করে আলমডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসের কর্মীরা একটি মেছোবাঘ আটক করেছেন। উপজেলার ডামোশ গ্রামের একটি নারকেল গাছের মাথা থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পানি স্প্রে করে বাঘটিকে গাছ থেকে নামিয়ে আটক করেন। পরে বণ্ডবিল কবরস্থানের জঙ্গলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে অনেকেই বলছেন আটকের পর ছেড়ে দেয়া জন্তুটি মেছোবাঘ নয়, আসলে এটি বাগডাশা।
জানাগেছে, ডামোশ গ্রামের আব্দুল জলিল মাস্টারের একটি নারকেল গাছের মাথায় একটি অচেনা জন্তু দেখতে পান পাশের বাড়ির আক্তারুজ্জামানের ছেলে জহুরুল। তিনি আশপাশের লোকজনকে বিষয়টি জানান। সাথে সাথে ঘটনাটি গ্রামের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনা জানানো হয় আলমডাঙ্গা থানা পুলিশে। পুলিশ এ সংবাদ ফায়ার স্টেশনকে জানালে ফায়ার স্টেশনের স্টেশন মাস্টার জাকির হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। দু ঘণ্টাব্যাপি অনেক চেষ্টার পরও জন্তুটিকে নারকেল গাছ থেকে নামানোযাচ্ছিলো না। পরে ৩০ ফুট উঁচু নারকেল গাছের মাথায় পানি স্প্রে করে জন্তুটিকে নিচে নামিয়ে আটক করা হয়। পরে স্থানীয় লোকজন ও দমকলবাহিনীর কর্মকর্তারা এটিকে মেছোবাঘ বলে শনাক্ত করেন। তবে কেউ কেউ বলেছেন, এটি বিলুপ্তপ্রায় বাগডাশা। এক সময় চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশ এলাকায় এ জন্তুকে অসংখ্য দেখা যেতো। কালের বির্বতনে তা প্রায় বিলুপ্ত হলেও মাঝেমধ্যে দেখা যায়।
চুয়াডাঙ্গা বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা জহুরুল ইসলামের পরামর্শে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল ইসলাম নির্দেশ দেন আটক জন্তুটিকে নিকটস্থ জঙ্গলে ছেড়ে দিতে। বিকেলে আলমডাঙ্গার বণ্ডবিল কবরস্থানের জঙ্গলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
মেছো বিড়াল, ফিশিং ক্যাট এখনো এদেশে ক্রমেই দুর্লভ হয়ে উঠছে। চেহারা-আদল এবং গায়ের ডোরা প্রায় বাঘের মতো হওয়ার কারণে এ প্রাণিকে অনেকেই ভয় পান। কেউ বলেন মেছো বাঘ, ছোট বাঘ,কেউ বা বাগডাশা।এদেরকে কোনো কোনো এলাকায় বাঘ বলার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। মেছো বিড়াল লেজসহ লম্বায় সাড়ে তিনফুট বা তার কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। ওজনে ১২-১৫ কেজি ভারী দেহের সাথে খাটো পা এদের আকৃতি অন্য সব বিড়াল থেকে কিছুটা আলাদা করে ফেলে। সামান্য বা হালকা হলুদে মেশানো ধূসর রঙের চামড়ায় মোটামুটি লম্বালম্বিভাবে কয়েক সারি বা গাঢ় হলুদ ডোরাকাটা হয়ে থাকে।
মেছো বিড়াল বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায় পাওয়া যেতে পারে। তবে ঝোপঝাড় বা জঙ্গলযুক্ত এলাকাই ওদের বেশি পছন্দ। সকল বনাঞ্চলেই ওরা কমবেশি আছে। তবে এদের সংখ্যা দিন দিন কমছে।মেছোবাঘ মূলত মাছ এবং কাঁকড়াভুক হলেও এদের খাদ্য তালিকায় শামুক, মোরগ-মুরগি, হাঁস, ছাগল, ভেড়া এবং বাছুর অন্তর্ভুক্ত। খাদ্যাভাব দেখা দিলে এরা মানুষের ঘরে ঢুকে শিশু বা বাচ্চা তুলে নিয়ে যায় বলে অনেক এলাকায় কথিত। এ কাজটি ওরা করে সাধারণত সন্ধ্যা বা রাতের বেলা। তখন গ্রামের আলোআঁধারিতে পুরো প্রণিটি না দেখতে পাওয়ার জন্য অনেকেই একে বাঘ বলে চিহ্নিত করে থাকেন। মাছ ধরার জন্য মেছো বিড়াল পানিতে নামে না। পানির ওপর কোনো গাছের ডালে বা পানির ওপর জেগে থাকা কোনো পাথরের ওপরে বসে থাবা দিয়ে শিকার ধরে।
তবে টিকে থাকার লড়াইয়ে মেছোবাঘ হারতে বসায় এখন তাদের অস্তিত্বই চরম সঙ্কটে। কয়েক দশক আগেও বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে মেছো বাঘ, ছোট আকৃতির বাঘ বলে পরিচিত বাগডাশার অস্তিত্ব ছিলো। পরিবেশ বিপর্যয়, খাদ্য সঙ্কট, বন-জঙ্গলের স্বল্পতা, পানির লবণাক্ততা বৃদ্ধি, নদ-নদী, খাল-বিলের অস্তিত্ব বিলীনের সাথে সাথে এদের অস্তিত্বও বিপন্ন হচ্ছে। খাদ্যের সন্ধানে মাঝেমধ্যেই মেছোবাঘ এসে হানা দিচ্ছে লোকালয়ে কোনো কৃষকের গোয়ালে।ফলে তারা মারা পড়ছে নির্বিচারে।