ঢাল ফলা লাঠি নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা : আলমডাঙ্গা থানার সেকেন্ড অফিসারসহ আহত ১০

 

আলমডাঙ্গার প্রাগপুর-ওসমানপুর গ্রামবাসীর মধ্যে বিরোধ : হামলা ঠেকাতে গিয়ে বেকায়দায় পুলিশ

 

আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গার ওসমানপুর গ্রামবাসী ঢাল-সড়কি,লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে আলমডাঙ্গা থানার সেকেন্ড অফিসারসহ প্রায় ১০ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। ওসমানপুর ও প্রাগপুরবাসীর মারামারি পুলিশ বন্ধ করতে গেলে ওই ঘটনা ঘটে। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সেকেন্ড অফিসার এসআই জুয়েলসহ ২ জনকে দ্রুত কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বর্তমানে পুলিশ গ্রাম ঘিরে রেখেছে। পুরুষশুন্য গ্রাম। এ ঘটনায় পুলিশ ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে।

জানাগেছে,গত বুধবার আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদী ইউনিয়নের পাশাপাশি দুটি গ্রাম ওসমানপুর ও প্রাগপুর গ্রামের ছেলেদের মধ্যে ক্রিকেট খেলা হয়।ওই খেলায় উভয় পক্ষের মধ্যে মারামারি গোলযোগ হয়। সে সময় ওসমানপুরের মিম ও সকাল নামের দুজনকে প্রাগপুরের ছেলেরা মারধর করে। এর জের হিসেবে গতকাল বিকেলে ওসমানপুরের শহিদুল ইসলামের ছেলে রোকন ও আহার আলীর ছেলে রতনসহ ৩ স্কুলপড়ুয়া ছেলে প্রাগপুরে গিয়ে খেলার মাঠ থেকে প্রাগপুরের জুয়েল ও নূর ইসলাম নামের ২ কিশোরকে মারধর করে।এরপর গ্রামের অনেকের নিষেধ সত্ত্বেও চা দোকানি আতিয়ারকেও মারধর করে। ওই ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাগপুরের কতিপয় ব্যক্তি ওসমানপুরের ওই ৩ কিশোরকে ধরে মারে। মার খেয়ে ওসমানপুরের ৩ কিশোর ভ্যানযোগে গ্রামে ফিরলে গ্রামের অনেকে ৩ কিশোরের কী হয়েছে তা জানতে চায়। ৩ কিশোরকে প্রাগপুরের লোকজন মেরেছে এ কথা শোনার পর ওসমানপুর গ্রামবাসী একত্রিত হয়ে গতকাল সন্ধ্যায় হামলা চালানোর উদ্দেশে প্রাগপুরের দিকে ছুটে যাওয়ার সময় ফাঁড়ি পুলিশ বাধা দিতে যায়। এ সময় ওসমানপুর গ্রামবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে ফাঁড়ি পুলিশের ওপর হামলা চালায়। ঢাল-ফালা, লাঠিসোঁটাসহ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে গ্রামবাসী পুলিশের ওপর হামলা চালায়।এ সময় ফাঁড়ি পুলিশের নায়েক সেলিম, কনস্টেবল খলিলসহ বেশ কয়েকজন আনসার জখম হয়।অবস্থা বেগতিক দেখে ঘটনা আলমডাঙ্গা থানায় খবর দেয়া হলে সেকেন্ড অফিসার এসআই জুয়েল, এসআই পিয়ার আলী সঙ্গীয় ফোর্সসহ দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সে সময় ওসমানপুরবী সিগাছ ফেলে রাস্তা বেরিকেট দেয়।ব্যারিকেট পর্যন্ত পৌঁছুলে বিক্ষুব্ধ জনতা এসআই জুয়েলের ওপর হামলা চালিয়ে তার মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ মেরে রক্তাক্ত জখম করে। তার গাড়ি ভাঙচুর করে। এস আই পিয়ার আলীর মাথায় ইট মেরে জখম করা হয়েছে। আলমডাঙ্গা থানার আর আর এফ সদস্য লাল্টুর ওপর হামলা চালায়। ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ ২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

এলাকাসূত্রে জানাগেছে, পুলিশ গ্রামে ঢুকে অনেককে গ্রেফতার করার চেষ্টা করে।পুলিশ ওই সময় ওসমানপুরের মৃত সোনা খন্দকারের ছেলে সুলতান (৩৯), আবু জাফরের ছেলে রনি(২০) ও নবিসদ্দীন ফারায়েজির ছেলে আব্দুল গাফফারকে (৪০)গ্রেফতার করে। এতে ক্ষুব্ধ হয় গ্রামবাসী। গ্রামবাসী মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

পুলিশসুত্রে জানাগেছে, ওসমানপুরের ইউপি মেম্বার রবিউলের নেতৃত্বে গ্রামবাসী পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে।গ্রামবাসীর প্রতিরোধের মুখে গ্রেফতারকৃত ৩ জনকে নিয়ে পুলিশের পিকআপ ভ্যান আলমডাঙ্গায় পৌঁছে।চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইনের পুলিশ, ফাঁড়ি ও আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ৩ ভাগ হয়ে গ্রামবাসীর ওপর চড়াও হয়। বেধড়ক পেটায়।ওই সময় ধীরে ধীরে বিক্ষুব্ধরা কিছুটা শান্ত হয়।আহত পুলিশ সদস্যদের প্রথমে হারদী হাসপাতালে নেয়া হয়।অবস্থা আশঙ্কাজনক মনে হওয়ায় এসআই জুয়েল ও নায়েক সেলিমকে দ্রুত হারদী হাসপাতাল থেকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া কনস্টেবল খলিলকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ সময় দ্রুত চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইন থেকে চার গাড়ি পুলিশ গিয়ে উপস্থিত হয়।ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতির কারণে গ্রামবাসী ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।রাতেই সার্কেল পুলিশ সুপার কামরুজ্জামান, আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম ও ওসি তদন্ত নাজমুল ইসল ঘটনাস্থলে যান। বর্তমানে ওসমানপুর গ্রাম পুরুষশুন্য।গ্রামজুড়ে এখন কবরের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।এ ব্যাপারে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।