স্টাফ রিপোর্টার:প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা আরো বেড়ে ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলেসিয়াসে দাঁড়ায় আর যশোরে তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠে। ফলে প্রাণিকূলের হাপিত্যেস বাড়তে থাকে।
অপরদিকে রাজধানীঢাকায় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ১৯৬০ সালেরপর অর্থাৎ গত ৫৪ বছরের মধ্যে এটি ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে জানিয়েছেআবহাওয়া অধিদপ্তর। এছাড়া গতকাল যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ডকরা হয় ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র গরমে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে জ্বর, ডায়রিয়াসহ নানা অসুখে।গতপরশু দর্শনা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়লে জরুরি ভিত্তিতে বিদ্যালয় ছুটি দিতে হয়। গতকাল জীবননগেরর আন্দুলবাড়িয়া এলাকার দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে।
এ অবস্থায় কোনো সুখবর দিতে পারেনি আবহাওয়াঅধিদপ্তর। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ প্রতিনিয়তবাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে সূর্যের তাপ। এছাড়া আকাশে কোনো মেঘের বলয় নেই। এতেসূর্যের তাপ কোনো বাধা না পেয়ে সরাসরি চলে আসছে ভূ-পৃষ্ঠে। যে কারণেগরমের তীব্রতা ক্রমেই বাড়ছে। এ গরম আরো কয়েকদিন থাকবে।
এদিকেতীব্র দাবদাহের কারণে পানির স্তর অনেক নিচে নেমে যাওয়ায় রাজধানীতে কোনোকোনো এলাকায় খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এছাড়া ঘন ঘন লোডশেডিঙেরকারণে সেচ কাজ ব্যহত হচ্ছে। ফলে বিপাকে পড়েছে কৃষক।
আবহাওয়াঅধিদপ্তরের কর্তব্যরত আবহাওয়া পূর্বাভাস কর্মকর্তা (ডিএফও) আব্দুর রহমানগতকাল বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার এ সময়ে তাপমাত্রা বেশি।গতকাল যশোর ও ঢাকা ছাড়াও খুলনা এবং রাজশাহীতেও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।এর মধ্যে রাজশাহীতে ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও খুলনায় ৪০ ডিগ্রিসেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। তিনি বলেন, এর আগে ১৯৬০ সালে ঢাকায় ৪২দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও ১৯৮৫ সালে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ ৪৩ দশমিক ৮ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
আবহাওয়া অধিদফতরসূত্রজানায়, তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মৃদু ধরনের তাপপ্রবাহ, ৩৮থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ ও ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রিসেলসিয়াস হলে তীব্র তাপপ্রবাহ হবে। এই হিসাবে দেশ বর্তমানে তীব্রতাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে।এক প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়া অধিদপ্তরেরকর্মকর্তা বলেন, প্রতি বছর এপ্রিলের এ সময়ে মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়। কিন্তুএবার বৃষ্টি হচ্ছে না। আমাদের কাছে আবহাওয়ার যে পূর্বাভাস আছে, তাতে আগামীতিন-চারদিনের মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সেক্ষেত্রেতাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।তিনি বলেন, এপ্রিল মাসে সাধারণত দেশেস্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয় ১৪৭ মিলিমিটার। কিন্তু গত ২০ দিনে সারা দেশে গড়বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে মাত্র ৬২ মিলিমিটার। ফলে বৃষ্টি না হওয়ায় এতোগরম।
এদিকে তীব্র তাপদাহে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় অনেক জায়গায়চাহিদামতো পানি সরবরাহ করতে পারছে না ওয়াসা। ফলে রাজধানীতে বিভিন্ন এলাকায়তীব্র খাবার পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। গতকাল রাজধানীর শ্যামলী, ধানমন্ডি ওমোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা পানির সঙ্কটের এ অভিযোগ জানান।এপ্রসঙ্গে ওয়াসার সহকারী জনতথ্য কর্মকর্তা আব্দুল কাদের গতকাল বলেন, বর্তমানে রাজধানীতে পানির চাহিদা ২৩০ কোটি লিটার। ওয়াসা চাহিদারসমপরিমাণ পানি সরবরাহ করে থাকে। তবে এখন খরার কারণে পানির স্তর নীচে নেমেযাওয়ায় কোনো কোনো এলাকায় চাহিদামতো পানি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে বৃষ্টি হলে এসমস্যা থাকবে না।
গতকালচুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ বছরেরমধ্যে এটাই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বলে চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। গতএক সপ্তাহ থেকে চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দাবদাহ ওঅসহনীয় লোডশেডিঙের কারণে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন,জীবননগর আন্দুলবাড়িয়ায় দুটি প্রাথমিকবিদ্যালয়ে গ্রীস্মের প্রচণ্ড তাপ প্রবাহে ১৪ জন কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। দুপুরের ভ্যপসা গরমে গত কয়েকদিনে কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদেরকে সুস্থ করে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন। ছাত্র ছাত্রীদেরসুবিধার্থে এলাকার শিক্ষানুরাগী ও অভিভাবকমহল মর্নিংস্কুল চালুর দাবি তুলেছে।
সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, গত সোম, মঙ্গল ও বুধবার স্কুল চলাকালীনসময়ে আন্দুলবাড়িয়া বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রশাহারিয়া কবীর, সুমাইয়া , রুপালী, বৃষ্টি, মারিয়া খাতুন, ৪থ শ্রেণির তন্মী,রাখি শ্রাবনী, আশুরা খাতুন, ৩য় শ্রেণির সাজিমসহ হারদা সরকারি প্রাথমিকবিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী অজ্ঞনা, মীম, ৫ম শ্রেণির আলামিন ও উর্মী খাতুনদুপুরের প্রচণ্ড তাপ প্রবাহে আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ তথ্য জানিয়ে হারদাসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সামছুল আলম তক্কেল ও বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খলিলুর রহমান জানান, অসুস্থ ছাত্র-ছাত্রীদেরপ্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে বাড়ি পৌঁছে দেয়া হয়েছে। কর্চ্চাডাঙ্গাপ্রাথমিক বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক সাজ্জাদ হোসেন জানান, বেলা বাড়ার সাথে সাথেপ্রচণ্ড গরমে শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পাঠদান ব্যহত হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায়কোমলমতি শিশুশিক্ষার্থী অভিভাবকমহল অবিলম্বে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারনিকট মর্নিংস্কুল চালুর দাবি জানিয়েছেন।