বিএনপির সব জেলা-উপজেলা কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের প্রস্তুতি

চুয়াডাঙ্গা খুলনা নড়াইল ও সাতক্ষীরা জেলা কমিটি বিলুপ্ত হচ্ছে ২০ এপ্রিলের মধ্যে : ৪৫ দিনের মধ্যে সম্মেলন?

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারবিরোধী আন্দোলনের শক্ত পটভূমি রচনার জন্য দলের সর্বস্তরে নতুন নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে বিএনপির সকল জেলা এবং উপজেলা-পৌর কমিটি ঢেলে সাজানো শুরু করেছেন চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সবগুলো ভেঙে নতুন কমিটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

২০ এপ্রিলের মধ্যে বিলুপ্ত হবে চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, নড়াইল ও সাতক্ষীরা জেলা কমিটি। ঢাকার একটি সংবাদমাধ্যম এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, প্রতিটি কমিটি বিলুপ্তির ৩০-৪৫ দিনের মধ্যে সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হবে। এজন্য গঠন করে দিচ্ছেন আহ্বায়ক কমিটি। আহ্বায়ক কমিটি সংশ্লিষ্ট জেলাধীন সকল থানা-উপজেলা-পৌরসভায় বিএনপির কমিটি করবেন। নতুন কমিটিগুলো হবে সম্মেলনের মাধ্যমে। মাঠ নেতারাই ভোটে তাদের নেতা নির্বাচন করবেন।

গত এক সপ্তায় আট জেলার কমিটি ভেঙে দিয়েছেন বেগম জিয়া। তৃণমূল নেতাদের তার গুলশান অফিসে এনে কথা বলছেন তিনি। তাদের মতামত নিচ্ছেন। আন্দোলনে কিভাবে সফল হওয়া যাবে তা নিয়ে আলাপ করছেন। মাঠের আন্দোলনে মাঠ নেতাদের অভিজ্ঞতা শুনছেন। তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছেন। ঢাকার রাজপথে আগামীতে আন্দোলন কিভাবে সফল করা যায় তাও বেরিয়ে আসছে মাঠ নেতাদের মুখ থেকে। দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, কমিটি করার ক্ষেত্রে কড়া অবস্থান নিয়েছেন তিনি। বেগম জিয়া কমিটি ভাঙাগড়ার প্রশ্নে মাঠ নেতাদের কোনো ওজর-আপত্তি কানে তুলছেন না। কোনো একটি জেলার সাথে মতবিনিময়ের আগেই পুরানো কমিটি ভেঙে নতুন আহ্বায়ক কমিটি করে দিচ্ছেন। এই আহ্বায়ক কমিটি তিনি নিজেই আগে ঠিক করে রাখছেন। অতঃপর মাঠ নেতাদের সামনে ঘোষণা দিচ্ছেন মাত্র। জানিয়ে দিচ্ছেন যে, পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে তার সামনে হাজির করতে ব্যর্থ হলে ব্যবস্থা নেবেন তিনি। প্রায় প্রতিটি তৃণমূল মতবিনিময়ে খালেদা জিয়া বলছেন, নতুন নেতৃত্ব চাই। প্রবীণ-নবীনের সমন্বয়ে কমিটি করা হবে। পুরোনো নেতৃত্ব দিয়ে আন্দোলন হবে না। প্রবীণরা পরামর্শ দেবেন। নেতৃত্বে থাকবেন তরুণরা। তারাই সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেবেন।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এ প্রসঙ্গে বললেন, জেলা কমিটিগুলোর অধিকাংশের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অনেক আগেই কমিটিগুলো পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা ছিলো। বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নিয়েও নানা কারণে তা কার্যকর করা দুরূহ হয়ে পড়ে।

বিএনপির অফিস সূত্রে জানা যায়, দলের ৭৫টি জেলা কমিটির প্রায় সবগুলোই মেয়াদ উত্তীর্ণ। অধিকাংশ জেলায় নেতায়-নেতায় আধিপত্যের লড়াই-এর কারণে বিভিন্ন সময় উদ্যোগ নিলেও বিরোধ মেটেনি। তাই কমিটিও নতুন হয়নি। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ বিরোধ চূড়ান্তরকমের থাকায় পটুয়াখালী, পিরোজপুর, মানিকগঞ্জসহ ১১ জেলায় প্রায় একযুগ কমিটি হয়নি। কোনো কোনো জেলায় বিএনপির দশা এখন ছত্রখান। কোথাও কোথাও নেতাকর্মীরা নতুন কমিটির দাবিতে বিভিন্ন সময় আন্দোলন সংগ্রাম করলেও কাজ হয়নি। গতকাল ফরিদপুর জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে নতুন কমিটির দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। সকালে ঢাকা-ফরিদপুর মহাড়কের শিবরামপুরে মানববন্ধন, সমাবেশ ও শিবরামপুর আজিজ জুট ফাইবার্সের সামনে সকাল ১০টায় মাচ্চর ও ঈশানগোপালপুর ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে।

বিএনপির গুলশান এবং নয়া পল্টনের অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে প্রতিদিন যে চিঠিগুলো আসে তার একটি বড় অংশ থাকে কমিটি সংক্রান্ত এবং কমিটি নিয়ে নানা অভিযোগ। পুরোনো কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি করার দাবি সংবলিত। গতকাল রাতে সুনামগঞ্জ, ময়মনংসিহ (উত্তর) কমিটি বিলুপ্ত করেন খালেদা জিয়া। ২০ এপ্রিলের মধ্যে বিলুপ্ত হবে চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, নড়াইল ও সাতক্ষীরা জেলা কমিটি।

Leave a comment