মেহেরপুরের চাষিরা সবজি বীজ উৎপাদনে ঝুঁকে পড়েছেন

মহাসিন আলী: মেহেরপুর জেলার উত্তর অঞ্চলে ব্যাপকহারে সবজি বীজ উৎপাদন হচ্ছে। বিভিন্ন বেসরকারি বীজ কোম্পানি এ জেলার চাষিদের অগ্রীম সার ও বিষসহ আবাদ খরচ দিয়ে ক্ষেতে উৎপাদিত সবজি বীজ উচ্চমূল্যে কিনে নিচ্ছেন। মাত্র ৩ মাসের এ ফসলে অধিক সুবিধা ও লাভ পাওয়ায় এলাকার চাষিরা ধান ও গমের আবাদ কমিয়ে দিয়ে সবজি বীজ উৎপাদনে ঝুঁকে পড়েছেন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট জেলা মেহেরপুর। অনুকূল আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতার গুনে এ জেলা সবজি উৎপাদন খ্যাত জেলা হিসেবে বিশেষ পরিচিত লাভ করেছে। যে কারণে দেশ স্বাধীনের পূর্বেই সরকারিভাবে এ জেলার আমঝুপি ও বারাদীতে দুটি বৃহৎ সবজি বীজ উৎপাদন খামার গড়ে তোলা হয়। যা থেকে উৎপাদিত বীজ বাংলাদেশের সবজি বীজের চাহিদার একটি বিরাট অংশ পূরণ করে থাকে। এ জেলার মাটিতে ভালো সবজি বীজ উৎপাদন হয় জেনে বিভিন্ন বেসরকারি বীজ সংগ্রহকারী কোম্পানি এ জেলার উত্তর অঞ্চালের কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের মাঠে সবজি বীজ উৎপাদনের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন। তারা চাষিদের সার ও বিষসহ আবাদ খরচ অগ্রীম দিচ্ছেন।

মেহেরপুর সদর উপজেলার উজুলপুর, শোলমারী, মনোহরপুর, ফতেপুর, সুবিদপুর, ঝাউবাড়িয়া, তেরঘোরিয়া, কুতুবপুর, উত্তর শালিকা, রামদাসপুর ও কাথুলীসহ বিভিন্ন গ্রামের মাঠে চাষিরা লাল শাক ও পুঁইশাক ব্যাপক হারে চাষ করেছেন। সরে জমিনে ওই সব গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায় মাঠের পর মাঠ লাল শাকের ক্ষেত। পাশাপাশি শোভা পাচ্ছে পুঁই শাক ক্ষেত। আগাম লাগানো লাল শাক ও পুঁই শাকের বীজ ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা শুরু করেছেন কৃষক। মেহেরপুর থেকে কাথুলী হয়ে গাংনী পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলো মিটার রাস্তার ওপর বিভিন্ন স্থানে চাষিরা শুকাচ্ছেন লাল শাকের বীজ।

মেহেরপুর সদর উপজেলার উজুলপুর গ্রামের নয়ন আলী ২ বিঘা জমিতে ও একই গ্রামের কবিপাড়ার আমানুল্লাহ ৩ বিঘা জমিতে লাল শাকের চাষ করেছেন। কৃষক নয়ন আলী ও আমনুল্লাহ’র সাথে কথা হয়। তারা অভিন্ন ভাষায় জানান, বিগত ৫/৭ বছর ধরে মেহেরপুরের এ অঞ্চলে লাল শাক ও পুঁইশাক বীজ উৎপাদন হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে লালশাক চাষ করে বীজ ওঠানো পর্যন্ত চাষ, সার, বিষ ও লেবার সব মিলিয়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। বীজ পাওয়ার জন্য বিভিন্ন বেসরকারি বীজ কোম্পানির লোকেরা চাষিদের আবাদ খরচ বাবদ অগ্রীম টাকা দিয়ে যান। এ বছর কোম্পানির লোকেরা বাড়ি থেকে প্রায় ৮ হাজার টাকা মণ দরে বীজ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবিঘা জমিতে উৎপাদিত লাল শাক হতে ৫ মণ থেকে ৬ মণ বীজ পাওয়া যায়। প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদিত লাল শাকের বীজ বিক্রি করে কৃষক ৩৫ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা লাভ পাচ্ছেন। তদ্রুপ প্রতি বিঘা জমিতে পুঁইশাকের আবাদে চাষির খরচ হয় প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এক বিঘা জমি থেকে উৎপাদিত পুঁই শাকের বীজ বিক্রি হয় ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকায়।

মেহেরপুর সদর উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা এনএ হালিম বলেন, মেহেরপুর সদর উপজেলায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধারা হয়েছে। এর মধ্যে লাল শাক ও পুঁই শাকের লক্ষ্যমাত্রা আলাদা করে হিসেব করা নেই। তবে বীজ উৎপাদনের জন মেহেরপুর সদর উপজেলার উত্তর অঞ্চলে অধিক হারে লালশাক ও পুঁইশাকের চাষ হচ্ছে। লালশাক ও পুঁইশাকের আবাদকৃত জমির পরিমাণ প্রায় ৮শ’ হেক্টর হবে ধরলে ভুল হবেনা বলে তিনি জানান।