চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে রকমারি আয়োজন প্রায় সম্পন্ন : আজ চৈত্র সংক্রান্তি : বর্ষবরণে সাজ সাজ রব

স্টাফ রিপোর্টার: আজ চৈত্র সংক্রান্তি। চৈত্র মাসের শেষ দিন। ঋতুরাজ বসন্তেরও শেষ আজ। বাংলা সন ১৪২০ তার শেষ গান গেয়ে আজ বিদায় নেবে। বসন্তকে বিদায় জানিয়ে আসবে নতুন বছর। ঋতুচক্রের পরিক্রমায় শুরু হবে গ্রীষ্মকাল। আগামীকাল বিশ্বজুড়ে বাঙালিরা মেতে উঠবে বর্ষবরণ উত্সবে। বৈশাখ আসবে নতুন দিনের বারতা নিয়ে। নতুন বছরের প্রথম দিনকে স্বাগত জানাতে মেতে উঠেছে যেন গোটা জাতি। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে এ উৎসব হয়ে উঠেছে সার্বজনীন। কয়েকদিন ধরেই চলছে কেনাকাটার ধুম। শোভাযাত্রা বর্ণময় করতে শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন সামাজিক সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর ব্যাস্ততার শেষ নেই। এবারই প্রথম বঙ্গাব্দের প্রথম দিনে সরকারিভাবে হাসপাতালগুলোতেও বিশেষ খাবার পরিবেশন করা হবে। চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ মেতেছে বর্ষবরণের আয়োজনে। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার উদ্যোগে এবারও থাকছে মেলা। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শোভাযাত্রাই শুধু থাকছে না, থাকছে হরেক রকম আয়োজন। জেলা পুলিশেল তরফেও বর্ষবরণের আয়োজনে কমতি নেই।

বাংলা সনের শেষ দিনটিতে আজ চৈত্র সংক্রান্তির মেলা ও নানা পর্ব মনে করিয়ে দিচ্ছে নতুন বছর দোরগোড়ায়। সাদর আমন্ত্রণে মাঙ্গলিক চিন্তা ও শুভবোধের উদ্বোধনে হৃদয়সিক্ত প্রাপ্তির ডালিতে নতুনের অভিষেকের দিন পহেলা বৈশাখ কাল। শুভ হালখাতা, মেলা, গান-বাজনা, প্রদর্শনীর আয়োজনে বাঙালি উদযাপন করবে এ দিনটি। চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে লোকমেলার আয়োজন গ্রামগঞ্জেই হয় বেশি। মেলা, গান বাজনা, যাত্রাপালাসহ নানা আয়োজনে উঠে আসে লোকজ সংস্কৃতির নানা সম্ভার। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মেতে ওঠে পূজা-অর্চনায়। চৈত্র সংক্রান্তিকে কেন্দ করে সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে শেকড়ের টানে ঘর ছেড়ে বাইরে বেরিয়ে আসে বাঙালিরা। রাত পোয়ালেই নববর্ষ বাঙালি জাতির জীবনে কল্যাণ, প্রাপ্তি এবং প্রেরণার স্বপ্ন নিয়ে হাজির হবে। পয়লা বোশেখকে বরণ করার জন্য চলছে চারদিকে সাজ সাজ রব। দেশজুড়ে এখন উত্সবের প্রস্তুতি। নববর্ষের আয়োজনে ব্যস্ত উত্সবপ্রেমীরা। সব প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে। বোশেখকে স্বাগত জানাতে যেমন নানা আয়োজন তেমনি চৈত্রকে বিদায় জানাতেও বিভিন্ন সংগঠন আজ শনিবার দিনব্যাপি নানা আয়োজন করেছে। পানিতে গঙ্গাদেবীর উদ্দেশে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে গতকাল শনিবার পার্বত্য অঞ্চলে শুরু হয়েছে বৈসাবী উত্সব। ভোর থেকেই বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারী-পুরুষ তাদের নিজস্ব পোশাকে সজ্জিত হয়ে ফুল ভাসাতে আসেন রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হরদের পাড়ে। মা গঙ্গাকে সাক্ষী রেখে মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা জানানো হলো সর্বজীবের সুখ ও শান্তির। সারাজীবন ফুলের মতো পবিত্র রাখতে, ফুলের মতো সুরূপ দিতে, সব দুঃখ, বেদনা, গ্লানি, ব্যর্থতা দূর করে অনাগত সুন্দর, সফল ও স্বার্থক ভবিষ্যত দান করতে। এভাবে ভোরে পাহাড়ি তরুণ-তরুণীদের নদীতে ফুল ভাসিয়ে প্রার্থনার মধ্যদিয়েই পার্বত্যাঞ্চলে তিন দিনব্যাপি ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উত্সব বৈসাবী শুরু হয়েছে। চাকমা রীতি অনুযায়ী গতকাল ১২ এপ্রিল পানিতে ফুল ভাসানোর মধ্যদিয়ে তিন দিনের সার্বজনীন উত্সব শুরু হয়। আজ ১৩ এপ্রিল উদযাপিত হচ্ছে মূল বিজু। আগামীকাল পয়লা বোশেখ গোজ্যাপোজ্যে দিন ও বর্ষবরণ উত্সব।

বসন্তে বনে বনে, মনে মনে ফোটে ফুল। প্রকৃতির আকুলকরা ফাগুন হাওয়া, ছোট্ট শাখায় চৈতি হাওয়ায় উতল-উদাস করা ভাব নিয়ে এসেছিলো বসন্ত। বসন্ত মুখর হয়ে উঠেছিলো তরুলতা, বিটপী আর বনস্পতিতে। এবারে ঋতুরাজ বসন্তের একটা বড় অংশ জুড়েই ছিলো খরতাপ। পুরো একটি বছরের ক্লান্তি কাটিয়ে নতুন করে সূচনার গান নিয়ে আমাদের দোরগোড়ায় বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বোশেখ। তাই রাজধানী থেকে শুরু করে গ্রামগঞ্জের প্রান্তিক পর্যায়ে পাড়া মহল্লায়ও শুরু হয়ে গেছে উৎসবের আমেজ। নববর্ষে শোভাযাত্রার জন্য নানা ধরনের সরঞ্জাম তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের। ১৪২০ বঙ্গাব্দকে বিদায় দিয়ে নববর্ষকে স্বাগত জানাতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। বসস্তের দখিনা বাতাসে এখন পয়লা বোশেখের আগমনী সুর। বাঙালির সবচেয়ে বড় এ অসাম্প্রদায়িক সার্বজনীন উৎসবকে বরণ করতে চুয়াডাঙ্গা মেহেরপুর ও ঝিনাইদহেও চলছে জোর প্রস্তুতি। গত কয়েকদিন ধরেই বাজারে ভিড়। ইলিশের বাজার? অনেকটাই অধরা। তবুও নজর যেন পান্তা ইলিশের দিকেই।