১৮ বছর পর আক্ষেপ মেটালেন হঠাৎ নেতৃত্ব পাওয়া লাসিথ মালিঙ্গা

 

আরেকটি বিশ্বকাপের মালিক শ্রীলঙ্কা

স্টাফ রিপোর্টার: টি-২০ ক্রিকেটের নতুন চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। তিনবার ফাইনালে খেলার পর শিরোপার মুখ দেখলো সিংহলবাসী। ১৯৯৬ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে শিরোপা জেতার পর আর কোন শিরোপা জিততে পারছিল না শ্রীলঙ্কা। ১৮ বছর পর সেই আক্ষেপ মেটালেন হঠাৎ নেতৃত্ব পাওয়া লাসিথ মালিঙ্গা। নিয়মিত অধিনায়ক দিনেশ চান্ডিমাল আইসিসি’র নিষেধাজ্ঞায় সেমিফাইনালে খেলতে পারেন নি। ফাইনালে কর্তৃপক্ষ উইনিং কম্বিনেশন ভাঙতে চাননি। সব খেলায় সহজে জয় পাওয়া ভারত ফাইনালে হারলো সহজেই। তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা-ই করতে পারেনি টপ ফেভারিট দলটি। প্রতিযোগিতার একমাত্র অপরাজিত দল ভারতকে ৬ উইকেটের ব্যবধানে হারিয়ে শিরোপা জিতে নিয়েছে এ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। তাদের হাতে তখনও ছিল ১৩টি বল। এ হারে ভারতের ট্রেবল জেতা হলো না। ওয়ানডে আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর আশা ছিলো এ শিরোপাটিও তাদের দেশেই যাবে। কিন্তু তা আর হলো না। ব্যাটসম্যানদের খেলায় ফল নির্ধারণ করে দিয়েছেন বোলাররাই। শ্রীলঙ্কার বোলাররা যা পেরেছেন ভারতের বোলাররা তা পারেন নি। অশ্বিন-মিশ্র কেউই শেষ সময়ে সমীহ আদায় করতে পারে নি। ভারতকে ১৩০ রানে বেঁধে বিজয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার বোলাররা। বিরাট কোহলি একাই যে দলকে জেতাতে পারেন না তাও দেখলো ভারতবাসী। দান দান তিন দানে সফল হলো। গত বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা নিজেদের মাঠেও ১৩৭ রান তাড়া করে হেরে গিয়েছিল। প্রতিপক্ষ ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তার আগে দ্বিতীয় আসরে ইংল্যান্ডের মাটিতে তারা আট উইকেটের ব্যবধানে হেরেছিল পাকিস্তানের কাছে। এবার নিজেদের মাঠ না হলেও তিন মাসের অবাধ বিচরণে বাংলাদেশের সব মাঠকে নিজেদের মাঠই বানিয়ে ফেলেছিলেন লঙ্কান ক্রিকেটাররা। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে কুশল পেরেরা মোহিত শর্মার শিকার হলে ভারতীয় শিবিরে আশার আলো দেখা শুরু হয়। দিলশানের বিদায়ে তা আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর উজ্জ্বল থাকেনি জয়াবর্ধনে আর সাঙ্গাকারার ব্যাটিংয়ে। ম্যাচসেরাও হয়েছেন তিনি। আর টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছেন বিরাট কোহলি।

১৬ বলে ১৮ রান করে অশ্বিনের বলে সীমানার কাছে কোহলির হাতে ধরা পড়েন তিলকারত্নে দিলশান। দলের রান তখন ৪১। চারটি চারের পর ছক্কা মারতে গিয়েছিলেন দিলশান। মাহেলা জয়াবর্ধনে তার শেষ টি-২০ ইনিংসে আউট হয়ে যান রায়নার বলে অশ্বিনের অসাধারণ ক্যাচ হয়ে। তিনি ২৪ বলে ২৪ রান করেন চারটি চারে। নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে নামতে হয়নি সাঙ্গাকারার। বাকি চার খেলায় তার ব্যাট থেকে এসেছে যথাক্রমে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১৪, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ০, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৪ আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ১- সব মিলিয়ে ১৯ রান। আর ফাইনালে তিনি তার কারিশমা দেখালেন। দলকে নিয়ে গেলেন জয়ের বন্দরে। ৫৬ ম্যাচের টি-২০ ক্যারিয়ারের শেষটা স্মরণীয় করে রাখলেন দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে। ৩৫ বলে ৫২ রানের ইনিংসে ১টি ছক্কা ছাড়াও ছয়টি চার মারেন। শেষ দিকে থিসারা পেরেরা তিন ছক্কায় খেলার সব শঙ্কা দূর করে দেন। তিনি ১৪ বলে ২৩ রান করেন।

শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক লাসিথ মালিঙ্গা টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন। হালকা বৃষ্টি টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলাকে ৪০ মিনিট পিছিয়ে দেয়। ৭টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শুরু হয় ৭টা ৪০ মিনিটে।

শেষ দুই ওভারে কুলাসেকারা ও লাসিথ মালিঙ্গার টাইট বোলিংয়ে ভারত খুব বড় স্কোর গড়তে পারে নি। উইকেট হাতে থাকলেও স্কোর করার সুযোগ পান নি ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। ভারতকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন বিরাট কোহলি। তিনি শেষ পর্যন্ত রান আউট হওয়ার আগে করেছেন ৭৭ রান, ৫৮ বলে। ৫টি চার আর চারটি ছক্কা মারেন তিনি। তিন ছক্কা আর দুই চারে ৪৩ বলে করেছিলেন ৫০ রান। আসরে এটি তার চতুর্থ ফিফটি। কোহলি অবশ্য ১১ ও ৬৫ রানের মাথায় মালিঙ্গা ও সেনানায়েকের হাত ফসকে জীবন পান। ভারতের রান কম হওয়ার পেছনে অনেকাংশেই দায়ী যুবরাজ সিং। তিনি ২১ বলে ১১ রান করে আউট হন। টি-২০ ক্রিকেটে ১০টি বলে রান না পাওয়া বিরাট ব্যাপারই। ১৫ ওভারে ভারত মাত্র ৯৫ রান তুলতে সমর্থ হয়। যদিও তাদের হাতে উইকেট ছিল আটটি। ১০ ওভারে ভারতের সংগ্রহ ৬৫/১। অর্থাৎ পরের পাঁচ ওভারে তাদের সংগ্রহ মাত্র ৩০ রান। আর শেষ পাঁচ ওভারে ৩৫। ২০ ওভারে ভারতের সংগ্রহ ১৩০।

শ্রীলঙ্কানদের দারুণ উজ্জীবিত দেখা যায় শুরু থেকেই। বিশেষ ফিল্ডিং ছিল দেখার মতো। দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য পেয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। অ্যানজেলো ম্যাথিউজের বলে বোল্ড হন আজিঙ্কা রাহানে। মিডিয়াম পেসার ম্যাথিউজ প্রথম ওভারে মেডেন উইকেট পান। ভারতের সংগ্রহ তখন ৪/১। নুয়ান কুলাসেকার করা প্রথম ওভারে ভারত রান পায় চার। পঞ্চম ওভারে স্পিনার সেনানায়েককে তিনি রান দেন আটটি। আর ষষ্ঠ ওভারে মালিঙ্গা নিজে বল তুলে নেন। প্রথম ওভারে মালিঙ্গা রান দেন ৮। খেলার প্রথম ছক্কাটি আসে রঙ্গনা হেরাথের প্রথম ওভারের শেষ বলে। হেরাথের প্রথম ওভারের প্রথম বলে মিড উইকেটে কোহলির ক্যাচ ফেলে দেন লাসিথ মালিঙ্গা। তার খেসারত দেন হেরাথ শেষ বলে ছক্কার বিনিময়ে।

১১ ওভারের তৃতীয় বলে আউট হয়ে গেলেন রোহিত শর্মা। হেরাথের বলে সেনানায়েকের হাতে। রোহিত  ২৩ বলে ২৯ আর কোহলি ২৯ বলে ৩১। এর আগে দ্বিতীয় ওভারে সাফল্য পেল শ্রীলঙ্কা।
প্রায় ম্যাচেই সাত জন বোলার ব্যবহার করতে দেখা গেলেও কাল মালিঙ্গা ঠিক পাঁচ জনেই সীমিত থাকেন। ম্যাথিউজ তার চার ওভারে রান দেন ২৫ আর উইকেট পান একটি। রঙ্গনা হেরাথ চার ওভারে দিয়েছেন ২৩ রান, পেয়েছেন এক উইকেট। কুলাসেকারা চার ওভারে ২৯ রানে একটি উইকেট নেন। সেনানায়েকে ও মালিঙ্গা কোন উইকেট না পেলেও চার ওভারে রান দেন যথাক্রমে ২২ ও ২৭ রান।