হরিণাকুণ্ডুতে বোমাঘাতে ত্রাস জাহাঙ্গীর নিহত

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে বোমাঘাতে জাহাঙ্গীর হোসেন (৪৫) নামে এক প্রাক্তন অস্ত্রধারী নিহত হয়েছে। গতপরশু শুক্রবার রাত ৮টার দিকে হরিণাকুণ্ডু উপজেলার নিজতোলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জাহাঙ্গীর নিজতোলা গ্রামের মৃত তোয়াজ মণ্ডলের ছেলে ও নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি সংগঠন পূর্ববাংলা কমিউনিষ্ট পার্টির আঞ্চলিক ক্যাডার ছিলো বলে পুলিশ জানিয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, রাত ৮টার দিকে বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন। পথিমধ্যে নিজতোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছুলে দুর্বৃত্তরা তার ওপর বোমা ছুড়ে পালিয়ে যায়। বিস্ফোরণের শব্দে গ্রামের লোকজন এগিয়ে এসে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে তাকে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে শনিবার ভোর রাতে তার মৃত্যু হয়।

হরিণাকুণ্ডু থানার ওসি মহিবুল ইসলাম জানান, ১৯৯৯ সালে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করলেও ২০০৩ সালে অস্ত্রসহ ধরা পড়েন জাহাঙ্গীর হোসেন। বিচারে তার ১৪ বছরের জেল হয়। পরে উচ্চ আদালতে আপিল করে জামিনে ছিলেন জাহাঙ্গীর। এরপরও তার বিরুদ্ধে হরিণাকুণ্ডু থানায় সাধারণ ডায়েরি হয় ২০০৫ সালে। জাহাঙ্গীর  হরিণাকুণ্ডু থানার তালিকাভূক্ত সন্ত্রাসী ছিলো বলে ওসি জানান। তবে বর্তমানে সে অনেকটা স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন। ওসি জানান, নিজের কাছে থাকা বোমা বিস্ফোরিত হয়ে অথবা প্রতিপক্ষ চরমপন্থি সন্ত্রাসীরা বোমা হামলা চালিয়ে জাহাঙ্গীরকে হত্যা করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছ পুলিশ। তবে হত্যার প্রকৃত কারণ উদঘাটনে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।

আমাদের হরিণাকুণ্ডু প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের নিচতলা স্কুলের পাশে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলা গুরুতর আহত চরমপন্থিদলের ক্যাডার জাহাঙ্গীর হোসেন (৪৫) গতকাল শনিবার ভোরে মারা গেছে। নিহত জাহাঙ্গীর নিচতোলা গ্রামের মৃত তোয়াজ উদ্দীন মণ্ডলের ছেলে।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধা সাতটার দিকে বাড়ি থেকে পাটের ক্ষেতে সেচ দেয়ার জন্য চাচা আকুলের সাথে নিয়ে বরিং পোতার উদ্দেশ্যে গ্রামের মিস্ত্রির কাছে যায়। সেখান থেকে বাড়ি ফেরার পথে তোলা স্কুলের পাশে পৌঁছুলে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা ঘাতকরা রাত পৌনে নটার দিকে জাহাঙ্গীরকে হত্যার উদ্দেশে বোমা হামলা চালায়। বিকট শব্দে বিস্ফোরিত বোমার আঘাতে জাহাঙ্গীরের শরীরের কমরের পিছন দিক ক্ষত-বিক্ষত হয়। এলাকাবাসী তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে চিকিৎসার উদ্দেশে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু সেখানে অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর চারটার দিকে সে মারা যায।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান জানান, নিহত জাহাঙ্গীর চরমপন্থি সংগঠন জনযুদ্ধের ক্যাডার ছিলো। সে ১৯৯৯ সালে সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে আনসার বাহিনীতে চাকরি নেয়। কিন্তু চাকরি থেকে ফিরে এসে আবারো চরমপন্থিদের সাথে যোগ দিয়ে এলাকায় নানা প্রকার অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ে। অবশেষে ২০০৩ সালে অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে ধরে পড়ে বিচারে ১৪ বছরের সাজা হয়। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে সে বাড়ি ফিরে কৃষিকাজে আত্মনিয়োগ করে বলে পারিবাবিকসূত্র জানায়।

হরিণাকুণ্ডু থানার অফিসার ইনচার্জ মহিবুল ইসলাম জানান, জাহাঙ্গীরে বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় এলাকায় চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। জাহাঙ্গীর নিহত হওয়া সম্পর্কে এখনো কোনো সুনিদিষ্ট ক্লু উদঘাটন না হলেও প্রতিপক্ষ গ্রুপের হাতে নিহত হওয়ার পাশাপাশি নিজের কাছে রক্ষিত বোমার আঘাতে সে মারা যেতে পারে বলে একাধিক সূত্র অভিমত ব্যক্ত করেছে। ইতোঃপূর্বে পাঁচ বছরের ব্যবধানে তাকে আরো দুবার হত্যার উদ্দেশে ঘাতকরা হামলা চালায়। কিন্তু তখন সে প্রাণে রক্ষা পেয়ে বেঁচে যায়। দলের চরম সঙ্কটকালে এক সময় বিশেষ ব্যবস্থাপনায় জাহাঙ্গীর পাড়ি জমায় সৌদি আরব। সেখানে বিগত জীবনের ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা ভিক্ষা করে ওমরা হজ পালন করে সে। কিন্তু কোনো কিছুই জাহাঙ্গীরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার নিশ্চয়তা দিতে পারেনি। চার কন্যা এবং এক পুত্র সন্তানের জনক জাহাঙ্গীর। বড় মেয়ে কেসি কলেজের ইংরেজি বিভাগের অনার্স প্রথমবর্ষের ছাত্রী রুপাকে প্রায়ই আদর করে বলতো, মা আমি যেকোনো সময় মারা যেতে পারি। তুমি বড় হয়ে তোমার অন্য চার ভাই বোনকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করবে। এ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে থানাসূত্রে জানা গেছে।