প্রমাণ দিতে পারলে ক্ষমা চাইবে ছাত্রলীগ ২ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ ইমরানের

স্টাফ রিপোর্টার: গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের কেউ জড়িত নেই বলে দাবি করেছে ছাত্রলীগ। একইসাথে হামলায় জড়িত থাকার প্রমাণ দিতে পারলে ছাত্রলীগ প্রেসক্লাবের সামনে দাড়িয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন সংগঠনটির সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ।

অন্যদিকে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর হামলার জন্য আমরা ছাত্রলীগ বা যুবলীগের গোটা সংগঠনকে দায়ী করিনি। হামলায় যুবলীগের এবং ছাত্রলীগের দু নেতা নেতৃত্ব দিয়েছে। তাদের শাস্তি দাবি করছি। গতকাল শনিবার রাজধানীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে ছাত্রলীগ এবং পরীবাগে পৃথক সাংবাদিক সম্মেলনে গণজাগরণ মঞ্চ নিজেদের পক্ষে এ দাবি করে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের কয়েকজন কর্মীর ওপর হামলা হয়। পরদিন শুক্রবার এর প্রতিবাদে ডাকা মঞ্চের সমাবেশ পুলিশের বাঁধায় অনুষ্ঠিত হয়নি। একই সময়ে ডাকা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সমাবেশও পুলিশি বাঁধায় অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। গত বৃহস্পতিবারের ঘটনায় পরষ্পরকে দায়ী করে থানায় দুইটি মামলা দায়ের করা হয়। আটক করা হয় ১০ জনকে। পরে আট জনকে ছেড়ে দেয়া হলেও দুজনকে আজ আদালতে প্রেরণ করা হয়।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা করেছে, মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার এটা প্রমাণ করতে পারলে ছাত্রলীগ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইবে। ছাত্রলীগকে জড়িয়ে ইমরানের বক্তব্য মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর।

লিখিত বক্তব্যে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বলেন, প্রায় ১০ মাস যাবত গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে ছাত্রলীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাদের সঙ্গে বিরোধ থাকার প্রশ্নই আসে না। মঞ্চের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান।

তিনি বলেন, একটি বিষয় পরিষ্কার যে তাদের নিজেদের মধ্যে কিছুদিন যাবত অস্থিরতা ও উত্তেজনা আমরা পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তবে ইমরান এইচ সরকার ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপ-সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক শেখ আসমান ও সাবেক দপ্তর সম্পাদক নাসিম রূপককে নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ অসত্য ও বিভ্রান্তিকর।

এদিকে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, পুলিশ আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে শুক্রবার বাঁধা দিয়েছে, হামলা করেছে। অন্যায়ভাবে আমাদের কর্মীদের আটক করেছে। আটককৃতদের দ্রুত (আজকের মধ্যে) ছেড়ে দেয়ার দাবি জানান তিনি।

ইমরান বলেন, বিশেষ উদ্দেশ্যে গণজাগরণ মঞ্চের ব্যপারে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। সকল যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসিসহ ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবিতে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। কোনো হামলা, মামলা দিয়ে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত গণতান্ত্রিক রীতিতে আন্দোলন চলবে।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতের হামলার ব্যপারে আমরা ছাত্রলীগ এবং যুবলীগকে ঢালাওভাবে দায়ী করিনি। হামলায় যুবলীগের নেতা রূপক এবং উপসংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক শেখ আসমাকে নেতৃত্ব দিতে দেখা গেছে। তাই এ দুইজনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্টভাবে আমার অভিযোগ করেছি। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের কাছে অনুরোধ করেছি। এদিকে আজ দুপুরেই মধুর ক্যান্টিনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব আল মামুন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।

এদিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হল শাখার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রুস্তম আলী আকন্দের হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রশিবিরের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আশরাফুল আলমকে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে ছাত্রলীগ। তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার না করলে দেশব্যাপি ছাত্রধর্মঘট ডাকার হুমকি দিয়েছে সংগঠনটি। মধুর ক্যান্টিনের সাংবাদিক সম্মেলন থেকেই এ ঘোষণা দেয়া হয়।