মিথি-আরিফের বাসা ছিলো বন্ধুদের ডেটিং স্পট

স্টাফ রিপোর্টার: মিথি-আরিফের বাসা ছিলো বন্ধুদের ডেটিং স্পট। নিজেরা লিভ টুগেদার করার পাশাপাশি মিথি তার বন্ধুদেরও তার নিজের বাসায় ডেটিং করার সুযোগ দিত। মিথিকে যেদিন শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় সেদিন ওই বাসা থেকে অপর একটি জুটিকেও পুলিশ আটক করেছিলো। তারা হলো-রোমানা নাজনীন ও আকিভ জাভেদ অনি। রোমানা মিথির সহপাঠী। সেও জেডএইচ শিকদার মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। পরে পুলিশ মিথি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রোমানা-অনিকে সাক্ষী হিসেবে আদালতে সোপর্দ করে। আদালত তাদের সাক্ষ্য নিয়ে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেধাবী মেডিকেল শিক্ষার্থী সাউদিয়া আক্তার মিথি ফোনালাপের ফাঁদে পড়ে বেকার ও মাদকাসক্ত আরিফের সাথে সম্পর্কে জড়ায়। তাদের এ সম্পর্ক। বছরখানেক ধরে তারা একসাথে বসবাস করতো। বন্ধুদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রায়েরবাজারের সচিবের গলির ওই বাসায় থাকার আগে তারা একসঙ্গে মিরপুর এলাকার একটি বাসায় থাকতো। তখন থেকেই তাদের বাসায় মিথির বন্ধুদের যাতায়াত। সেই সূত্রে বন্ধুরা তাদের ঘনিষ্ঠ সঙ্গীদের নিয়েও সময় কাটাতেন। বন্ধুরা আড্ডায় ফেরার সময় মিথি বাড়িওয়ালার সাথে আলাপ করিয়ে দেয়ার সময় তাদের স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিতো। গত বুধবার সকালে হাজারীবাগ সুলতানগঞ্জের ৩/৫ নম্বর সচিবের গলির বাসার ষষ্ঠ তলার একটি কক্ষ থেকে সাউদিয়া আক্তার মিথির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মিথি জেডএইচ শিকদার উইমেন মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলো। আরিফ নামে এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের সূত্রে তারা ওই কক্ষটি সাবলেট হিসেবে ভাড়া নিয়ে লিভ টুগেদার করে আসছিল। এ ঘটনায় মিথির বাবা আবদুস সালাম বাদী হয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। পুলিশ ঘটনার দিনই মিথির প্রেমিক আরিফকে গ্রেফতার করে। গত বৃহস্পতিবার সে আদালতে মিথির সাথে লিভ টুগেদার করার কথা স্বীকার করে। লিভ টুগেদার করতে গিয়ে তাদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হলে একপর্যায়ে মিথিকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করার কথাও আদালতকে জানায় সে।

এদিকে গতকাল মিথির লাশ উদ্ধারের দিন প্রেমিকসহ রাতকাটানো রোমানা নাজনীনের চকবাজারের বাসায় গিয়ে তার সাথে কথা হয়। কথা হয় তার প্রেমিক আকিভ জাভেদ অনির সাথেও। রোমানা বলে, মিথি তাকে ফোন করে তার বাসায় ডেকে নিয়ে যায়। প্রায় বছরখানেক আগে আরিফের সঙ্গে মিথি তাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। এ সময় মিথি বলেছিল আরিফের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের প্রেম। তারা পরিবারকে না জানিয়ে নিজেরা নিজেরা বিয়েও করেছে। তারা আগে মিরপুরের একটি বাসায় থাকতো। কিন্তু সেখান থেকে মিথির কলেজে যেতে সমস্যা হওয়ার কারণে কিছুদিন আগে তারা রায়েরবাজার সচিবের গলির ওই বাসায় ওঠে। ওই বাসায় সে অনিকে নিয়ে আগেও একাধিকবার গিয়েছে বলে স্বীকার করে। রোমানা বলে, মিথি ছিল তার খুব কাছের একজন বান্ধবী। একজন আরেকজনের কাছে সব মনের কথা খুলে বলতো। রোমানা বলে, অনির সঙ্গে মিথিরও ভাল পরিচয় হওয়ায় তাদের যাতায়াতে কোন সমস্যা হতো না। মিথিই বাড়িওয়ালাকে সব কিছু বুঝিয়ে ম্যানেজ করে নিত। সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে রোমানা বলে, সোমবার সে ও অনি মিথির বাসায় যায়। এ সময় মিথির সঙ্গে আরিফের মান-অভিমান চলছিল। রাতে তারা বিষয়গুলো নিয়ে সবাই খোলাখুলি আলোচনাও করে। কিন্তু রাত ১২টার দিকে তারা দু’জনই উত্তেজিত হয়ে যায়। পরে দু’জনই নিজেদের কক্ষে ঘুমাতে চলে গেলে তারাও ঘুমিয়ে পড়ে। রাত ২টায় আরিফ তাদের কক্ষের দরজায় আঘাত করে। ঘুম থেকে উঠলে আরিফ বলে মিথি আত্মহত্যা করেছে। এ সময় তারা দৌড়ে মিথির কক্ষে গিয়ে দেখে মিথির শরীরের অর্ধেক খাটে ও অর্ধেক মেঝেতে পড়ে আছে। এ সময় আরিফ অসংলগ্নও কথা বলতে থাকে। পরে তারা বিষয়টি ভবনমালিককে জানায়। এমনকি তারা কৌশলে আরিফকে আটকে রাখে। পরে খবর পেয়ে সকালে পুলিশ গিয়ে মিথির লাশ উদ্ধার করে। এ সময় আরিফের সঙ্গে পুলিশ তাদেরও থানায় আটক করে নিয়ে যায়। পুলিশ কর্মকর্তাদের তারা সব কিছু খুলে বললে তাদের সাক্ষী হিসেবে আদালতে সোপর্দ করা হয়। তারা আদালতে সাক্ষী দিলে আদালত তাদের পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেয়।

রোমানা জানায়, মিথি একটু জেদি প্রকৃতির মেয়ে ছিলো। ঝগড়া হলেই সে নিজের হাত ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলতো। আরিফের অনেক শার্টও মিথি ব্লেড দিয়ে কেটে রাখতো, যাতে সে বাইরে যেতে না পারে। রোমানার দাবি, মিথি যে বাসায় থাকতো সেখানে জানুয়ারি মাসে তার বাবা-মা এসে ঘুরে গেছেন। তবে তারা জানতেন না এটা মিথির বাসা। মিথি তার মা-বাবাকে এক বান্ধবীর ভাবীর বাসা বলে সেখানে নিয়ে যায়। সে সময় আরিফকে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দিয়েছিলো। এদিকে অনি বলে, রোমানার সুবাদে মিথির সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল। রোমানার সঙ্গে তার পাঁচ বছরের প্রেমের সম্পর্ক। মিথির কোন সমস্য হলেই সে রোমানাকে তার বাসায় যেতে বলতো। এ সময় সেও রোমানার সঙ্গে ওই বাসায় যেত। তারা মূলত মিথি-আরিফের মান-অভিমান ভাঙাতেই ওই বাসায় গিয়েছিল। কিন্তু ঘটনা চক্রে তারাও পুলিশের হাতে আটক হয়। পরে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার সাক্ষী হিসেবে আদালতে সোপর্দ করে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাজারীবাগ থানার এসআই হালিম জানান, মিথি হত্যাকাণ্ড মোটামুটি ডিটেক্ট হয়ে গেছে। খুনি স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এখন আদালতে চার্জশিট দেয়ার পালা। তিনি আদালতে দ্রুত চার্জশিট জমা দিয়ে দেবেন বলে জানান।