গণজাগরণ কর্মীদের ওপর পুলিশের বেধড়ক লাঠিচার্জ

স্টাফ রিপোর্টার: এবার গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের পেটালো পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রলীগ-যুবলীগ মঞ্চের কর্মীদের ওপর হামলা চালানোর ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বিকেল ৪টায় শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ প্রতিবাদ সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশের বাধায় তা পণ্ড হয়ে যায়। এ সময় পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জ করলে বেশ কয়েকজন আহত হন। বৃহস্পতিবার রাতে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। এ ঘটনায় মামলা করতে গেলে দ্বিতীয় দফা হামলার শিকার হন মঞ্চের কর্মীরা। এ ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেল প্রতিবাদ সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছিলো গণজাগরণ মঞ্চ। একই স্থানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডও প্রতিবাদ সমাবেশের আহ্বান করে। ফলে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ না করতে পুলিশের পক্ষ থেকে উভয় সংগঠনকে অনুরোধ করা হয়। তা উপেক্ষা করে উভয় পক্ষ শাহবাগে অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে আহত হন ১০ জন এবং আটক করা হয় ৭ জনকে। আহতরা পিজি হাসপাতাল এবং ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। আটককৃতদের শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের নিন্দা জানিয়েছে  সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিকাল সাড়ে তিনটায় মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের ২০ থেকে ২৫ জন কর্মী শাহবাগে এসে জড়ো হন। চারটার দিকে তারা প্রেস ব্রিফিং করতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একই সময় গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক মাহমুদুল হক মুন্সী বাঁধনের নেতৃত্বে কয়েকজন জন কর্মী জাতীয় জাদুঘরের সামনে জড়ো হন। পুলিশ তাদের বারবার স্থান ত্যাগ করার কথা বললেও তারা সরে যেতে অস্বীকৃতি জানান। পুলিশ তাদের সাঁজোয়া যান দিয়ে সরিয়ে দেন। পরে সাড়ে চারটায় মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে একটি মিছিল শাহবাগে আসে। তারা সমাবেশ করতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে পুলিশের ধাওয়ার মুখে তারা আজিজ সুপার মার্কেটের দিকে মিছিল নিয়ে চলে যান। এরপর মঞ্চের কর্মীরা আবারও শাহবাগের দিকে আসতে চাইলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে মঞ্চের কর্মীদের ধস্তাধস্তি হয়। পরে শাহবাগ মোড়ে মঞ্চের কর্মীরা মিছিল নিয়ে এলে পুলিশ তাদের উপর লাঠিচার্জ শুরু করে। সেখান থেকে পুলিশ মঞ্চের কর্মী শামস রাশেদ জয়, ধীমান আজিজ, ফরিদ আহমেদ, সোহাগ, টিটোকে আটক করে। লাকী আক্তারসহ আহত হন অন্তত ৫ জন। পরে মঞ্চের কর্মীরা পিজি হাসপাতালের ভেতরে আশ্রয় নিলে পুলিশ সেখানেও তাদের ওপর হামলা করে। এ সময় মঞ্চের অন্যতম সংগঠক চুয়াডাঙ্গার ছেলে মাহমুদুল হক মুন্সী ওরফে বাঁধন, ইমরান এইচ সরকারসহ অন্যদের বেধড়ক লাঠিপেটা করে পুলিশ। এতে বাঁধন মারাত্মকভাবে আহত হন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়। মঞ্চের কর্মীদের সাথে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতাকর্মীদেরও দেখা যায়। এই সময় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের নেতাকর্মীরা শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সমানে অবস্থান করেন। পুলিশ তাদেরও লাঠিপেটা করে। সেখান থেকে পুলিশ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসান ও কর্মী ইমনকে আটক করে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। আটককৃত ইমন বলেন, আমি নৌকায় ভোট দিয়েছি। এটাই কি আমার অপরাধ? এ ঘটনায় মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের কর্মসূচি সরকারের বিরুদ্ধে চলে যাওয়ায় পরিকল্পিতভাবে সরকার তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও পুলিশ দিয়ে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। তিনি বলেন, ‘লাখো কণ্ঠে সোনার বাংলা’ কর্মসূচিতে ইসলামী ব্যাংকের টাকা নেয়ার প্রতিবাদ করাসহ যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে সরকারের আঁতাতের চেষ্টার বিরোধিতা আমরা করি। এতে সরকার আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়। সরকার গণজাগরণ মঞ্চের বিপক্ষে কিনা চাইতে চাইলে ডা. ইমরান বলেন, সরকারের ভিতর একটি মহল মঞ্চের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে। তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতে চাইছে। তিনি বলেন, মঞ্চ প্রতিষ্ঠার পর থেকে একটি মহল আমাদের চরিত্র হননের চেষ্টা এর আসছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় আজকের এই হামলা। তিনি হামলা করে মঞ্চের অগ্রযাত্রা বন্ধ করা যাবে না বলে মন্তব্য করেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা অর্থ কেলেঙ্কারীর সঙ্গে জড়িত। তারা মঞ্চের অনেক টাকা আত্মসাৎ করেছে। পুলিশের রমনা জোনের এসি শিবলী নোমান বলেন, দুই পক্ষ একই স্থানে সমাবেশের আহ্বান করায় আমরা তাদের সমাবেশ করতে নিষেধ করি। তাছাড়া তারা উভয়ই সমাবেশের জন্য পুলিশ থেকে অনুমতি নেয়নি। তারা নিষেধ অমান্য করে সমাবেশ করার চেষ্টা করলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়। পূর্বে কর্মসূচি পালনের জন্য গণজাগরণ মঞ্চ অনুমতি নিতো কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা বরাবরই অনুমতি নিয়ে কর্মসূচি পালন করতো। যদিও বিষয়টি অস্বীকার করে ডা. ইমরান বলেন, আমরা দিবস ব্যতীত অন্য কর্মসূচি পালনের জন্য অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন হতো না। এদিকে বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলার ঘটনায় শাহবাগ থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসান তার কর্মীদের উপর হামলার অভিযোগ এনে প্রথম মামলা করেন। এতে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র  ডা. ইমরান এইচ সরকারসহ তিনজনকে আসামি করা হয়। অন্যরা হলেন, গণজাগরণকর্মী বাদল ও জয়। একই ঘটনায় পাল্টা অভিযোগ এনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের ৮ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী নবেন্দ্র সাহা জয়। মামলার আসামিরা হলেন- সংগঠনটির সভাপতি মেহেদী হাসান, মেজবাহ, বাবুল, আজিজ, শিশির, নাসিম আল মামুন রূপক,  শেখ আসলাম, এমএম শাহীন। অন্যদিকে গণজাগরণ মঞ্চের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি হামলার নিন্দা জানিয়েছে সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী। গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি কামাল লোহানী এবং সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার এ নিন্দা জানান। তারা বলেন, বৃহস্পতিবার বিনা উস্কানিতে উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য শাকিল অরণ্যসহ মঞ্চের কর্মীদের উপর হামলা করে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সহযোগী একটি সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী। এর প্রতিবাদ করতে এলে গতকাল পুলিশ মঞ্চের কর্মীদের উপর আবারও হামলা চালায়। সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের এ ধরনের গণবিরোধী কর্মকাণ্ডকে হতাশাজনক বলে বর্ণনা করেছেন সংগঠনের নেতৃদ্বয়। তারা আরও বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের উপর পুলিশের হামলা গ্রহণযোগ্য নয়। তারা জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে দু্রত ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, বেশ কিছুদিন ধরে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিরোধ চলে আসছে। কিছু বিষয়ে সম্প্রতি এ বিরোধ চরম রূপ পায়।