কেন্দ্র দখল : বিরোধীদের তাড়িয়ে একতরফা সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তির উৎসব

 

সংঘর্ষে লক্ষ্মীপুরে এক যুবলীগ নেতা ও মৌলভীবাজারের রাজনগরে এক ব্যক্তি নিহত

স্টাফ রিপোর্টার: কেন্দ্র দখল, ভোটের আগের রাতে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি ও অনিয়মের মধ্যে পঞ্চম দফায় ৭৩ উপজেলায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচন চলাকালে আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়েকটি কেন্দ্রে সকালে সহিংসাতার আশঙ্কা দেখা দেয়। জামজামি উনিয়নের মধূপুর ও পাঁচলিয়া কেন্দ্রে বিএনপি এজেন্টদের মারধর করে বের করে দেয়া হয়। মধূপুর কেন্দ্রের বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট ডা. শাহাজানকে মারধর করা হয়। তাকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে। এ ছাড়াও ডাইকি ও ছত্রপাড়াতেও অভিন্ন ঘটনা ঘটে। কেন্দ্রে সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে একজনকে পিটিয়ে আহত করা হয়। জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে খোকন নামের আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে মারধর করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এছাড়া জবরদখলের ভোটকেন্দ্রগুলো ছিলো মূলত একপক্ষের নিয়ন্ত্রণে। সংঘর্ষে লক্ষ্মীপুরে এক যুবলীগ নেতা ও মৌলভীবাজারের রাজনগরে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় আটক করা হয়েছে ২১ জনকে।

চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলাসহ ৭৩টি উপজেলার বেশির ভাগ উপজেলায় জয় পেতে ক্ষমতাসীনরা কেন্দ্র দখল করে সিল মারার উৎসবে মেতে ওঠেন। সাধারণ ভোটারদের অধিকাংশই ভোট দিতে কেন্দ্রমুখি হননি। কেন্দ্রে দখল ও পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে প্রবেশ করতে না দেয়ার প্রতিবাদে চুয়াডাঙ্গা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। দেশের অন্যান্য স্থানে জাতীয়পার্টি, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্রসহ ৭০ জন প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ডাক দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। অনিয়মের প্রতিবাদে ৭ উপজেলা ও এক জেলায় হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা। নির্বাচনী অনিয়মের কারণে ৫ উপজেলার ২১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। প্রার্থীদের অভিযোগ, ভোট গ্রহণকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী উপজেলাগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়া হয়। ভোটার ও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি ও মারধর করা হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নির্বাচনী কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি বলেও অভিযোগ করেন তারা। তবে নির্বাচন কমিশন দাবি করেছে, গতবারের তুলনায় এবার উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক। তিনি বলেন, ৭৩ উপজেলায় ভোটগ্রহণ হয়েছে। নানা প্রকার গোলযোগের কারণে ৫ উপজেলার ২১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। কোনো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ বন্ধ করার প্রয়োজন না হলে ভালো হতো। আমরা তাই চেয়েছিলাম।

জাল ভোট, কেন্দ্র দখল, অনিয়মের গত চার ধাপের রেকর্ড ভাঙলো পঞ্চম ধাপের উপজেলা নির্বাচন। ভোট শুরুর আগেই ভোট শেষ হয় অনেক কেন্দ্রে। রাতে ব্যালট ভরা হয় বাক্সে। দিনভর দখল আর জালিয়াতির উৎসব হলেও এর কোনো প্রতিকার করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। অনিয়ম আর জালিয়াতির এ রেকর্ডের নীরব দর্শক ছিলো ইসি। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক গোলযোগের কথা স্বীকার করে জানিয়েছেন, মানুষের মনোবৃত্তির কারণে এমনটি হয়েছে। বিএনপি দাবি করেছে, ভোট ডাকাতি করে ১৯ দল সমর্থিত প্রার্থীদের জয় ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ নির্বচনে বিএনপি জামায়াতের প্রার্থীরাসহ অন্তত ১৯টি উপজেলায় কারচুপি ও কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে ১৯ দল, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী, জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করেন। নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে অনিয়মের অভিযোগে ১৯টি কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে।

সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা ভোট দর্শন: বেলা সাড়ে ১০টায় চুয়াডাঙ্গা একাডেমী কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটারের উপস্থিতি খুবই কম। দু একজন করে আসছেন আর ভোট দিয়ে চলে যাচ্ছে। আরেকটু বেলা বাড়লে কয়েকজন ভোটার অভিযোগ করেন তাদেরকে ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করা হয়। ভোট হয়ে গিয়েছে আর যাওয়ার দরকার নেই। একটি সূত্র জানায়, ওই কেন্দ্রে রাত তিনটার দিকে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় ব্যক্তি সিংহভাগ ভোট কেটে নেয়। ওই কেন্দ্রের চিংড়ি প্রতীকের পোলিং এজেন্টকে মারধর করে বের করে দেয় বলেও অভিযোগ করা হয়েছে। ওই কেন্দ্রে বেলা পৌনে ৪টার দিকে গিয়ে দেখা যায় ভোটগণনা প্রায় শেষেরে দিকে।

চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ কেন্দ্রের পরিবেশ দিনভর স্বাভাবিক পরিবেশ ছিলো। তবে ভোটারের উপস্থিতি তেমন চোখে পড়েনি। অন্যান্য ভোটে যেমন লাইন দেখা যায় এবারের ভোটে তেমন লম্বা লাইন কোথাও চোখে পড়েনি।

সকাল ১০টার দিকে মাখালডাঙ্গা-দীননাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট কেটে নেয়ার প্রতিবাদ করলে পোলিং এজেন্ট দীননাথপুর গ্রামের নুর ইসলাম পাটোয়ারীর ছেলে বিএনপি কর্মী ইমরান পাটোয়ারীকে মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়। গাইদঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উকতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও ভোটের আগের রাতেই ভোট কারচুপি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ।

বেলা তখন প্রায় ১১টা নূরনগর-জাফরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ঠাকুরপুর মহিলা বুথে গিয়ে দেখা যায় জাফরপুর গ্রামের রাজীব স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় ব্যালট পেপারের বান্ডিল নিয়ে প্রকাশ্যে আনারস প্রতীকে সিল মারছে। এ বিষয়ে ওই বুথের সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের নিকট জিঙ্গাসা করলে তিনি জানান ও কিছু না। রাজীব শুধু একা নয় ঠাকুরপুর গ্রামের টোকনও ব্যালট পেপারে সিল মেরেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশের ঠাকুরপুরের পুরুষ বুথে গেলে দেখা যায় অভিন্ন চিত্র। এ বিষয়ে নূরনগর-জাফরপুর সরকারি প্রাথমিম বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসারের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি কথা বলেননি। তার রুমের দরজায় তালা মেরে আনসার সদস্য বসিয়ে রাখেন।

বেলে সাড়ে ১১টার দিকে বুজরুকগড়গড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায় কয়েজন পুলিশ সদস্য গেটে দাঁড়িয়ে। ভোটার নেই। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অধিকংশ ভোটার অভিযোগ করে বলেন আমাদের ভোট নাকি দেয়া হয়ে গেছে।

বেলা তখন সাড়ে ১০টা। বেলগাছি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় মহিলা ভোটারদের ৪০/৫০ জনের দুটো লাইন। পুরুষ বুথের সামনে কোনো লাইন নেই। বিএনপির এক সমর্থক অভিযোগ করে বললেন রাতেই এ কেন্দ্রের ৫০ ভাগ ভোট কারচুপি হয়েছে।

আলমডাঙ্গার খাসকররা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল ৯টার দিকে সরকার দলীয় লোকজন দলীয় প্রার্থীদের প্রতীকে সিল মারছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। তবে ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারেনি। কেউ কেউ বলেছেন পুলিশের সামনে এ ধরনের ঘটনা ঘটালেও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করে। একই এলাকার রায়সা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে একই দৃশ্য দেখেছে অনেকেই। চারিদিকে প্রচার হয়, ভোট হয়ে গিয়েছে, ভোটারদের কষ্ট করে আর যাওয়ার দরকার নেই। এসব শোনার পর ভোটারদের আগ্রহ কমে যায়। ফলে ভোটার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিলো না।

এ উপজেলার মুন্সিগঞ্জ একাডেমী কেন্দ্রে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায় নিরুত্তাপ ভোটগ্রহণ। একবারেই হাতেগোনা কয়েকজন ভোটার ভোট দিচ্ছেন। মহিলা বা পুরুষের কোনো লাইন চোখে পড়েনি। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ বলেন কিছুক্ষণ পর হয়তো ভোটার উপস্থিতি বাড়বে। কিন্তু শেষপর্যন্ত ভোটাররা সেভাবে আসেনি। বিকেলে কয়েকজন ভোটার জানালেন ভোটকেন্দ্রে যেয়ে তারা শুনতে পারেন তাদের ভোট হয়ে গেছে। পুটিমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে বেলা ১২টার দিকে দেখা যায় কেন্দ্রের কর্মকর্তারা অলস সময় কাটাচ্ছেন। ভোটার নেই বললেই চলে। একজন জানান, রাতে ওই কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসেন ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় ব্যক্তি। তারপর তারা রাতেই ব্যালটে সিল মেরে রাখেন। শহীদ শামসুজ্জোহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রেও একই অবস্থা চলে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দ।

অঘোরনাথ গড়গড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গিয়ে দেখা যায় লাইনে কোনো ভোটার নেই। চুপচাপ বসে আছেন ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা। এ সময় ওই কেন্দ্র পরিদর্শন করছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মিজানুর রহমান মধু। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন সব জায়গায় একই অবস্থা। ক্ষমতাসীন দলের লোকজন রাতের আঁধারে ভোটকেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতি করেছে। এমনকি তারা দিনের বেলায়ও কোথাও কোথায় ভোট কেটে নিচ্ছে। ভোটার উপস্থিতি না হওয়ায় বেলা ১টার দিকে অন্য পক্ষের পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের লোকজন তাদের দলীয় প্রার্থীদের মার্কায় একের পর এক সিল মেরে নেন বলে এলাকার কয়েকজন অভিযোগ করেন সাংবাদিকদের কাছে।

মুন্সিগঞ্জ পশুহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যেয়ে দেখা যায় ভোটারদের উপস্থিতি নগন্য। অনেক নারী-পুরুষ অভিযোগ করেন তাদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া হয়। বলা হয় ভোট আগেই শেষ। কষ্ট করে যাওয়ার দরকার নেই।

এদিকে ভোট শুরুর আগেই কেন্দ্র দখল, ব্যালটে সিল মারা ও এজেন্ট বের করে একতরফা নির্বাচনের অভিযোগে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, সাতক্ষীরার সদর, তালা ও দেবহাটা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, বরগুনা বামনা ও আমতলী,  ফেনীর ছাগলনাইয়া, জামালপুরের মাদারগঞ্জ, চুয়াডাঙা সদর ও আলমডাঙ্গা, পাবনার তারাবুনিয়া, মুন্সীগঞ্জের লৌহজং, কুমিল্লার চান্দিনা, লক্ষ্মীপুরের সদর ও রামগঞ্জে নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপিসহ অন্য দলের প্রার্থীরা। এর মধ্যে ৮ জেলার ১১টি উপজেলায় আজ হরতাল আহ্বান করেছে ১৯ দল। নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ব্রতী গতকাল সন্ধ্যায় তাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে বলেছে, জাল ভোট ও জালিয়াতি রোধে নির্বাচনে দায়িত্বপালনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ব্যর্থ হয়েছেন। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় একটি ভোটকেন্দ্রের সামনে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা খুন হয়েছেন।

সকালে ভোট শুরুর দু ঘণ্টার মাথায় লক্ষ্মীপুর সদরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী একেএম সালাউদ্দিন টিপুর সমর্থকদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র  দখল ও এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মহিউদ্দীন বকুল। এর আধ ঘণ্টা পর রামগঞ্জ উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আ ক ম রুহুল আমীনের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ভিপি আবদুর রহিম। সকাল ১১টা থেকে সোয়া ১১টার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর ও আলমডাঙ্গা উপজেলায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র দখলের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপি সমর্থিত দু চেয়ারম্যান প্রার্থী। সকাল সাড়ে ১০টায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া প্রেস ক্লাবে উপস্থিত হয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তিন চেয়ারম্যান প্রার্থী। টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে সকালে ভোট শুরুর আগেই কেন্দ্র দখলের অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য সব দলের প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। প্রার্থীদের বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা মহাসড়ক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেন। এ সময় পুলিশ গুলি ছোড়ে তাদের ছত্রভঙ করে দেয়। ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় একাধিক কেন্দ্র ভোট গ্রহণ শুরুর আগেই দখল করে নেয় সরকার সমর্থক প্রার্থীর লোকজন। কয়েকটি কেন্দ্রে রাতেই সিল মেরে বাক্সে ব্যালট ঢুকিয়ে রাখা হয়।

রাত পোহানোর আগেই ৩৫ কেন্দ্রের ভোট শেষ! লক্ষ্মীপুরে ৪টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরুর আগে বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া কেন্দ্রে আসতে বাধা প্রদান, ভোটারদের হাত থেকে ব্যালট পেপার ছিনতাই, ব্যালটভর্তি বাক্স অগ্নিসংযোগ, হামলা, সংঘর্ষ, বোমা ও গুলিবর্ষণ, প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের সমর্থক ও এজেন্টদের মারধর করার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছে। রামগঞ্জ ও রামগতির বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে হামলা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে সদর উপজেলা দিঘলী ইউনিয়নের দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের পাশে ভোট গ্রহণের আগেই পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীদের গুলিতে যুবলীগ নেতা কবির হোসেন নিহত হয়। তবে স্থানীয় একটি সূত্রে দাবি করছে নিজেদের ভাগ-বাটোয়ারাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন স্থানে সরকারদলীয় প্রার্থী সমর্থকদের হামলায় মানবজমিন রামগঞ্জ প্রতিনিধি আবু তাহের, লক্ষ্মীপুর নিউজ সম্পাদক এমরান হোসেন, দৈনিক ইত্তেফাক রামগঞ্জ সংবাদদাতা জাকির হোসেন মোস্তান, সকালের খবর সংবাদদাতা রহমত উল্যা পাটওয়ারীসহ অনন্ত ৫০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।  সদর উপজেলার আমানী লক্ষ্মীপুর, উত্তর-পূর্ব পাচপাড়া, রশিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ভোট কেন্দ্রসহ প্রায় ১৫-২০টি কেন্দ্রের ভোট গণনা না করে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এনে কোন রকম গণনা করা হয়েছে। সদরে চন্দ্রপুর, পশ্চিম জামিরতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রায়পুরে পূর্ব উদমারা ও স্বল্পব্যয়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি কেন্দ্রে হামলা, ব্যালট পেপার ছিনতাই, বাক্সভর্তি ব্যালট পেপার অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ফলে সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শাহাদাত হোসেন ওই ভোট কেন্দ্র স্থগিত করেছেন বলে জানান। অপর দিকে ভোটাররা জানান, সাধারণ ভোটাররা কেন্দ্রে গেলেও ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।  আবার অনেক ভোটার কেন্দ্র গেলে ও তাদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার কেড়ে নিয়ে সিল মেরে বাক্সে ঢুকিয়ে দিচ্ছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর লোকজন। প্রতিবাদ করলে মারধর করে। তাই আতঙ্কে ভোট কেন্দ্রে আসতে সাহস পাচ্ছে না। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে গতকাল দুপুরের আগে প্রবেশ করে ভোটারদের প্রভাবিত করার অপরাধে চেয়ারম্যান প্রার্থী  ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেলিম পারভেজকে আটক করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।