দেশবাসীও দেশের ভবিষ্যত নিয়ে স্বস্তিতে নেই

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিয়ে আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। জিন ল্যাম্বার্টের নেতৃত্বে ইইউ’র একটি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা দু দিনের বাংলাদেশ সফর শেষে ফিরে এক বিজ্ঞপ্তিতে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ইইউ বলেছে, রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে দু প্রধান দলের আলোচনায় বসা উচিত, যাতে বাংলাদেশের জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে পারে। ইইউ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা উপজেলা নির্বাচনে সংঘটিত সহিংসতা ও কারচুপির ঘটনাতেও তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া গণমাধ্যমের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, পুলিশি নির্যাতন ইত্যাদি বিষয়ে তদন্তে জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলকে সুযোগ করে দেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন ইইউ সংসদীয় দলের প্রতিনিধিরা।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের অনেক আগে থেকেই ইইউসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা বাংলাদেশে একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছিলো। নির্বাচনের পর দেশে রাজনৈতিক সহিংসতার পরিমাণ কমে এসেছে সত্য, কিন্তু দু প্রধান দলের মধ্যকার নির্বাচনসংক্রান্ত বিরোধের নিষ্পত্তি না হওয়ায় পুনরায় সহিংসতার আশঙ্কা থেকে গেছে। কিছুদিন আগে দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য প্রধান দু রাজনৈতিক দলের বিরোধকে দায়ী করে মার্কিন সিনেট কমিটিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বিশ্বের প্রায় সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নেতৃবৃন্দই বাংলাদেশ নিয়ে চিন্তিত। নির্বাচন নিয়ে সঙ্কটের সুরাহা না হওয়ায় তাদের অনেকে অসন্তুষ্টও বটে। নির্বাচন-পূর্ববর্তী কয়েক মাস বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছিলো, তাতে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেকাংশেই ক্ষুণ্ণ হয়েছে।

৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সামাজিক স্থিতিশীলতা মোটামুটিভাবে ফিরে এসেছে অবশ্য। তবে এ স্থিতিশীলতা যেন নষ্ট না হয়, সে জন্য রাজনৈতিক বিরোধগুলোর মীমাংসা জরুরি হয়ে পড়েছে। দ্বিতীয়ত, একটি দেশের উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই একমাত্র শর্ত নয়, রাষ্ট্রটি বিশুদ্ধ গণতান্ত্রিক পথে চলছে কি-না, সেটাও এক বড় ফ্যাক্টর। ইইউসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উদ্বেগের জায়গা এটাই।
৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে যে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে, সেটাকে সাংবিধানিকভাবে অবৈধ বলার সুযোগ নেই অবশ্য। কিন্তু এটাও ঠিক যে, সাংবিধানিক লেবেল এঁটে জনআকাঙ্ক্ষার বিপরীত কোনো কিছু দিনের পর দিন চালিয়ে নেয়া সমীচীন নয়। ঘটনার রাজনৈতিক গুরুত্বকেও সমান বিবেচনায় নিতে হবে। বিএনপি জনগণের এক বড় অংশের প্রতিনিধিত্বশীল দল। এ দল যেহেতু নির্বাচনে অংশ নেয়নি, তাই নির্বাচনটি সর্বজনগ্রাহ্য হয়েছে- এটা বলা যাবে না। সুতরাং একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কবে, কখন, কীভাবে করা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে সরকারকে। উপজেলা নির্বাচন নিয়েও জনমনে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। প্রথম দফা বাদ দিলেও বাকি তিন দফায় যেসব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেগুলো সরকারের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণই করেছে।

সরকারকে মনে রাখতে হবে, ইইউ কিংবা মার্কিন সিনেট শুধু নয়, দেশবাসীও দেশের ভবিষ্যত নিয়ে স্বস্তিতে নেই। তাদের অস্বস্তি কাটাতে হবে এবং এমনভাবে রাজনীতি নির্ধারণ করতে হবে, যাতে জনগণ নিরবচ্ছিন্ন শান্তিতে বাস করতে পারে।