৩ মরসুমের ৮০ কোটি টাকা অবিক্রিত চিনির বোঝা মাথায় নিয়ে আজ বন্ধ হচ্ছে মাড়াই কার্যক্রম

 

চলতি আখমাড়াই মরসুমের নির্ধারিত দিবসের তুলনায় ৩ সপ্তাহ অতিক্রম :

অর্জিত হয়নি চিনি উপাদনের লক্ষ্যমাত্রা

 

হারুন রাজু/হানিফ মণ্ড: কেরুজ চিনিকলের ২০১৩-১৪ আখমাড়াই মরসুমের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে আজ। মাড়াইয়ের নির্ধারিত দিবস অতিক্রম করে অতিরিক্ত আখমাড়াই অতিক্রম করলেও চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অল্পের জন্য অর্জিত হয়নি। ফি বছরের মতো এবারো মোটা অঙ্কের লোকসানের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ৩ মাড়াই মরসুমের প্রায় ৮০ কোটি টাকার অবিক্রিত চিনির বোঝা বইতে হচ্ছে মিল কর্তৃপক্ষকে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ২০১৩-১৪ আখমাড়াই মরসুমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। করপোরশনের পক্ষ থেকে এ মরসুমে ১ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন আখমাড়াই করে ৮ হাজার ২শ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা বেধে দেয়। ৯১ মাড়াই দিবসে  চিনি আহরণের গড় হার নির্ধারণ করা হয় ৭ দশমিক ৫০। আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত ১১০ মাড়াই দিবসে কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ ১ লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন আখমাড়াই করেছে। চিনি আহরণের নির্ধারিত হারে পৌঁছুতে না পারার ফলে চিনি উৎপাদন করেছে ৮ হাজার মেট্রিক টন। নির্ধারণের তুলনায় অতিরিক্ত ১৯ দিনে ৯ হাজার মেট্রিক আখ বেশি মাড়াই করেও চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। এবার মাত্র আড়াইশ মেট্রিক টনের জন্য চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পৌঁছাতে পারেনি মিল কর্তৃপক্ষ। এ মরসুমের উৎপাদিত ৮ হাজার মেট্রিক চিনিসহ আগের পরপর ২ মাড়াই মরসুমের চিনির পরিমাণ দাঁড়ালো প্রায় ১৫ হাজার মেট্রিক টন। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৮০ কোটি টাকা। সরকারিভাবে উৎপাদিত চিনি বাজারজাত করণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কেজি প্রতি ১০ টাকা হারে মূল্য কমালেও অবিক্রিত হয়েই পড়ে আছে। চিনি বিক্রি না হওয়া কেরুজ চিনিকলসহ দেশের সবকটি চিনিকল পড়েছে মহাবিপাকে। চিনিকলগুলোর নির্ধারিত গোডাউন কানায় কানায় ভরে রয়েছে গত মরসুম থেকে। এ মরসুমের উৎপাদিত চিনি রাখার জন্য মিলকর্তৃপক্ষকে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয়েছে। অন্যান্য মিলের মতো অতিরিক্ত খরচ বহন করে কেরুজ চিনিকল কর্তৃপক্ষ এবারের মরসুমের চিনি রাখার জন্য ব্যবহার করেছে কেরুজ চিনিকলের বন্ধ হয়ে থাকা ওষুধ গোডাউন, পরিবহন বিভাগের ইঞ্জিন গোডাউন, সিজিনাল ব্রাকের ১৩টি কক্ষ, প্রাইমারি স্কুলের ৭টি কক্ষ, অফিসার্স ও সাধারণ ক্লাব, আবাসিক এলাকার খালি পড়ে থাকা কয়েকটি ভবনসহ বিভিন্ন স্থান। মিলের ৫টি চিনি গোডাউন চিনিতে ভরে থাকায় এবার এ সমস্ত স্থানগুলোতে চিনি রাখা হয়েছে।

এদিকে চলতি মরসুমের উৎপাদিত চিনি পূর্ব পরিকল্পনায় অনুযায়ী রাখা হলেও এ চিনি বিক্রি না হলে আগামী মরসুমের উৎপাদিত চিনি রাখার জায়গা খুজে পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়বে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৮ থেকে ১০ টার মধ্যে কেরুজ চিনিকলের ২০১৩-১৪ আখ মাড়াই মরসুমের কার্যক্রমের ইতি টানা হবে। মিলটি কোনো প্রকার যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে না পড়লে আখেরি হুইসেল বাজিয়ে বন্ধ করা হবে মাড়াই কার্যক্রম। সে লক্ষ্যেই সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে মিল কর্তৃপক্ষ। ৭৫ বছর বয়সী এ মিলটিকে টিকিয়ে রাখতে কৃষকরা বেশি বেশি আখচাষ না করলে আগামীতেও এ লোকসানের বোঝা টানতে হবে বলে মন্তব্য করে সচেতনমহল।

এদিকে কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষিবীদ আজিজুর রহমান বলেছেন, বেসরকারিভাবে উৎপাদিত চিনির তুলনায় কেরুজসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদিত চিনির মান অনেক উন্নত ও মিস্টি বেশি। বে-সরকারিভাবে উৎপাদিত ঝকঝকে ঝরঝরে চিনির দিকে আকৃষ্ট হয়ে ক্রেতা সাধারণ ঠকছে। তাই তিনি বেশি বেশি করে কেরুজ উৎপাদিত চিনি কেনার আহ্বান জানিয়েছেন ক্রেতাসাধারণকে। তিনি আরো জানিয়েছেন, আগামী ২০১৪-১৫ আখমাড়াই মরসুমের আগাম প্রস্তুতির লক্ষ্যে গ্রহণ করা হচ্ছে নানামুখি কার্যক্রম। বেশি বেশি আখ রোপণের জন্য কৃষকদের করা হচ্ছে আগ্রহী। নিশ্চিত করা হচ্ছে আখচাষিদের সুযোগ সুবিধা। সেক্ষেত্রে মিলের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সকলকে নিষ্ঠা ও কর্মদক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। নিজ নিজ কাজে হতে হবে আন্তরিক। তাহলেই একদিকে যেমন আখচাষ বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে সরকারের মূল্যবান সম্পদ চিনিশিল্পকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।