ভারতের ইকোনমিক টাইমস পত্রিকায় সুবীর ভৌমিকের এক প্রতিবেদনে

ভারতে দুর্বল সরকার আসলে হাসিনার টিকে থাকা কঠিন হবে

মাথাভাঙ্গা মনিটর: যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের বর্তমান সরকারকে সরিয়ে দেয়ার কাজে সক্রিয়। আর ভারত, চীন ও রাশিয়া পুনর্নির্বাচিত শেখ হাসিনা সরকারের সমর্থনে হাত মিলিয়েছে। গতকাল সোমবার ভারতের ইকোনমিক টাইমস পত্রিকায় সুবীর ভৌমিকের এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ভারতের আসন্ন নির্বাচনে বিজেপি বা দুর্বল সরকার গঠিত হলে, বাংলাদেশের বর্তমান হাসিনার সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা কঠিন হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা বিরোধী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে বেশ কয়েকবার সাক্ষাত করেছেন। মিডিয়াকে মজিনা বলেছেন, বাংলাদেশের জনগণের গণতন্ত্র অভিযাত্রার প্রয়াসের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে। মজিনা ‘কীভাবে নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন আয়োজন করা যায়’ তা নিয়ে অবিলম্বে সংলাপের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি এ সংলাপের পর ‘বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচন আয়োজনের কথাও বলেছেন। শেখ হাসিনার পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী নতুন নির্বাচনের আহ্বানকে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ফলে প্রতিষ্ঠিত স্থিতিশীল পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা হিসেবে অভিহিত করেছেন। মজিনা যেদিন খালেদা জিয়ার সাথে বৈঠক করেন, ঠিক সেদিনই বাংলাদেশ প্রশ্নে সিনেটের পররাষ্ট্রবিষয়ক শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মার্কিন শ্রম বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তারা কমিটিকে বলেন, শ্রমিক অধিকার এবং নিরাপত্তা মানদণ্ড উন্নতি করতে বাংলাদেশ যথেষ্ট কাজ করেনি। ওয়াশিংটনের উচিত জিএসপি ফিরিয়ে দেয়ার প্রস্তাব স্থগিত রাখা।

সিনেটের শুনানিতে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসকে সরিয়ে দেয়ায় হাসিনা সরকারকে তিরস্কার করা হয়। এক সিনেটর এটাকে ইউনূসকে শাস্তি দেয়ার স্থূল চেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এর মাধ্যমে দুঃখজনকভাবে এ ব্যাংককে অবলম্বন করে বেঁচে থাকার সংগ্রামে নিয়োজিত লাখ লাখ লোককে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা বিসওয়াল একই সুরে বলেন, ইউনূসকে সরিয়ে দেয়াটা ‘গভীর লজ্জার’ বিষয়।

প্রতিবেদনে মার্কিনভিত্তিক আইআরআইয়ের প্রকাশিত জনমত জরিপের কথা তুলে ধরে বলা হয়, ‘রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাবে’ বেশির ভাগ বাংলাদেশি তাদের ভবিষ্যত নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে। সর্বশেষ জরিপে বলা হয়, বাংলাদেশের ৫৯ ভাগ মনে করছে যে দেশ ভুল পথে যাচ্ছে, মাত্র ৩৫ ভাগ মনে করে যে দেশ সঠিক দিকে এগোচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্থনীতির ব্যাপারে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ হতাশায় ভুগছে। ৬০ ভাগ লোক জানিয়েছে, তারা মনে করে যে আগামী বছর দেশের অবস্থা আরো খারাপ হবে। সহিংসতার ব্যাপারে আরো বেশি লোক উদ্বিগ্ন। ৭১ ভাগ লোক আশঙ্কা করছে যে আগামী বছর আরো খারাপ হবে।
এ জরিপের অর্থায়ন করেছে ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এবং যুক্তরাজ্যের ডিপার্টমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট। ফলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদিও বলছে, তারা হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সাথে কাজ করবে এবং উন্নয়ন সহায়তা ছাঁটাই করবে না, কিন্তু এটা পরিষ্কার ওয়াশিংটন নতুন নির্বাচনের জন্য ঢাকাকে প্রবলভাবে চাপ দেবে।

সুবীর ভৌমিক বলেন, কারো সন্দেহ নেই যে যুক্তরাষ্ট্র ঢাকায় সরকার পরিবর্তন চায়, আওয়ামী লীগের বদলে বিএনপি ক্ষমতায় আসুক তা চায়। এ ব্যাপারে মজিনা কোনো রাখঢাক রাখেননি। অনেকে সন্দেহ করছেন যে খালেদা জিয়া বঙ্গোপসাগরে যুক্তরাষ্ট্রকে ঘাঁটি করার সুযোগ দিতে রাজি, যাতে হাসিনা কখনো রাজি হবেন না। ভারতও করবে না।

প্রতিবেদন বলা হয়, বাংলাদেশে নতুন নির্বাচন আয়োজন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যখন চাপ দিচ্ছে এবং জিএসপিকে এ কাজে ব্যবহার করছে, তখন তারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং কমনওয়েলথের কাছ থেকে সমর্থন পাওয়ার চেষ্টায় রয়েছে। বিএনপি যদি উপজেলা নির্বাচনে ভালো করে, তবে চাপ আরো বাড়বে।

ভারত যখন তার পার্লামেন্ট নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত, তখন এমনটা হচ্ছে। এ নির্বাচনে ভঙ্গুর ম্যান্ডেটের ফলে দিল্লিতে দুর্বল সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ভারত তার প্রতিবেশী দেশে মার্কিন চাপ মোকাবেলায় অনিশ্চিত অবস্থায় পড়বে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার বর্তমান সরকারের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বৈরিতা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে। নির্বাচনের পর মমতা যদি ক্ষমতাসীন জোটের গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হন, তবে হাসিনা সরকারের প্রতি দিল্লির নীতি নিয়ে প্রশ্ন সৃষ্টি হবে। শেখ হাসিনা গত পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে ভারতের নিরাপত্তা এবং পূর্বাঞ্চলের সাথে কানেকটিভিটি-সংক্রান্ত উদ্বেগের অবসান ঘটিয়েছেন। তাকে অনিবার্য মার্কিন রোষের কবলে ছেড়ে দিলে তা ভারতের জন্য কল্যাণকর হবে না।