গোয়ালন্দে গুলিতে নারীসহ দুজন নিহত

 

স্টাফ রিপোর্টার: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার শামসু মাস্টারপাড়ায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে চাঁন মিয়া (৪২) ও সালমী বেগম (৪৫) নামের দুজন নিহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। চাঁন মিয়া স্থানীয় ব্যবসায়ী আর সালমী বেগম দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে বাড়ি ভাড়া দিতেন। এ ঘটনায় দৌলতদিয়া যৌনপল্লি ও আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, গোয়ালন্দ শহরের কুমড়াকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ও গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড এলাকার স্টিলব্যবসায়ী চাঁন মিয়া ও সালমী বেগম সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে শামসু মাস্টারপাড়ার রাস্তা দিয়ে রেলওয়ে স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন। এ সময় তিন যুবক একটি মোটরসাইকেলে করে এসে খুব কাছ থেকে দুজনকে কয়েকটি গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যান। পরে স্থানীয় লোকজন দৌলতদিয়া রেলওয়ে স্টেশনসংলগ্ন মসজিদের পেছনে শামসু মাস্টারপাড়ার গলি থেকে তাদের উদ্ধার করে। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিত্সক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিত্সা কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান বলেন, চাঁন মিয়ার ডান কাঁধে ও ঘাড়ের বাম দিকে দুটি গুলি লেগেছে। সালমী বেগমের মাথার পেছন দিকে একটি গুলি লেগেছে। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে তাদের মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে তাদের খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে।

চাঁন মিয়ার চাচাতো ভাই পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আবদুর রশিদ ফকির জানান, চাঁন মিয়া একজন নিরীহ মানুষ। গোয়ালন্দ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তার একটি স্টিলের দোকান আছে। ব্যবসায়িক পাওনা টাকা আদায়ের জন্য দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দুর্বৃত্তরা কেন তাকে হত্যা করেছে, এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না।

সালমী বেগমের মা লায়লী বেগম জানান, ‘সালমী বিএনপির একজন সমর্থক ছিলো। এসব নিয়ে পল্লিতে তার অনেক শক্র তৈরি হয়েছিলো। এর আগে তাকে বিভিন্ন মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছিলো এবং তাকে হত্যার জন্য কয়েকবার হামলা চালানো হয়। মৃত্যুর হাত থেকে সে কয়েকবার বেঁচে গেছে। আজ (গতকাল) বিকেলে বাড়ি থেকে বের হয়ে স্টেশনের দিকে যাওয়ার সময় পেছন থেকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা চলে যায় বলে জানতে পারি। কিন্তু কারা তাকে হত্যা করেছে, এখনো জানতে পারিনি।’ তিনি বলেন, চান মিয়ার সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায় বেশ কিছুদিন আগে সালমীর কাছ থেকে চাঁন মিয়া কিছু টাকা ধার নেন। এ বিষয়ে দুজন একত্রে কথা বলতে বলতে স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন।

গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জেলা বিএনপির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক সুলতান-নুর ইসলাম জানান, ‘সালমী বিএনপির একনিষ্ঠ সমর্থক ও কর্মী ছিলেন। তাকে বিভিন্ন সময় হামলার শিকার ও নানা মামলায় জেলে যেতে হয়েছে। ৩১ মার্চ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনের আগে এ ডাবল মার্ডার ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ ও দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।’

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাসার বলেন, এখনই হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে কিছু বলা যাচ্ছে না। লাশ দুটির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে। হত্যাকারীদের খুঁজতে পুলিশ মাঠে নেমেছে।