একদিনের মাথায় ৭২ বিঘা জমির আখ পুড়ে ছাই

 

কেরুজ বাণিজ্যিক খামারে দফায় দফায় আখ পুড়লেও কর্তৃপক্ষের নেই মাথাব্যাথা

 

বেগমপুর প্রতিনিধি: কেরুজ চিনিকলের নিজেস্ব জমির আখ পোড়া নিয়ে দেখা দিয়েছে রহস্য। দফায় দফায় আখ পুড়ে ভস্মীভূত হলেও মাথাব্যাথা নেই চিনিকল কর্তৃপক্ষের। মাত্র একদিনের মাথায় দুটি বাণিজ্যিক খামারের ৭২ বিঘা জমির আখ পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। আখ পোড়ার কারণে চিনি আহরণের হার কমে যাওয়ায় চলতি মরসুমে বাড়তি লোকশানের মুখে পড়তে হবে চিনিকল কর্তৃপক্ষকে। বাড়তি পাহারার ব্যবস্থা করার পরও দফায় দফায় আখক্ষেতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে নানামুখি গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

জানা গেছে, হিজলগাড়ি বাণিজ্যিক খামারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার একদিনের মাথায় কেরুজ চিনিকলের ঝাঝরি বাণিজ্যিক খামারের এফ ব্লকে গতকাল মঙ্গলার সকাল ৬টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৬০ বিঘা এবং একইদিন বেগমপুর বাণিজ্যিক খামারে ই-ব্লকে সকাল ১১টার দিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১২ বিঘা জমির আখ পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। চলতি মরসুমে ৭২ বিঘা জমির আখ পোড়ানোর মধ্যদিয়ে ওই দুটি খামারের আখ চিনিকলে আনার ব্যবস্থা করলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ঝাঝরি খামারের ইনচার্জ মনিরুল ইসলাম বলেন, শুধুমাত্র এফ ব্লকের আখ পাহারা দেয়ার জন্য ১২ জন পাহারাদার রাখা হয়েছে। তারপরও কেমন করে আগুন লাগলো বলতে পারবো না। দায়িত্ব কর্তব্য অবহেলার কারণে চলতি মরসুমে বিভিন্ন বাণিজ্যিক খামারের আখে প্রায় ১৭/১৮ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। একই ঘটনা এবং একই যুক্তি উপস্থাপন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিরাচরিত বক্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। চিনিকলের জমির আখ পুড়লে শুধু যে চিনিকল প্রতিষ্ঠানের ক্ষতি হয় তা না। পোড়া আখ চিনি কলে দূরত্ব পৌঁছানোর জন্য আখচাষিদেরকে পড়তে হয় ভোগান্তিতে।

অপরদিকে পোড়া আখ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছাড়াই দ্রুত পৌঁছানোর অযুহাতে চিনিকলে পাঠায় আখকাটা ঠিকাদার। কেরুজ চিনিকল প্রতিষ্ঠানটি এ অঞ্চলের একমাত্র ভাড়িশিল্প প্রতিষ্ঠান। জেলার অর্থনৈতিক চালিকা শক্তির কেন্দ্রবৃন্দ এ চিনিশিল্প। এ প্রতিষ্ঠানের সাথে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে অনেক পরিবার। এ শিল্পের একমাত্র কাঁচামাল আখ। চিনিকল কর্তৃপক্ষ যে আখ উৎপাদন করে চিনিকলে পৌঁছানো পর্যন্ত ব্যায় করে থাকে প্রচুর অর্থ। সে আখে একই নিয়মে দফায় দফায় অগ্নিকাণ্ডে ঘটনা ঘটেই চলেছে। বিষয়টি কারো বোধগম্য নয়। সচেতনমহল মনে করছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কর্মকর্তাদের এবং ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ যথাযত শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে না বলে ধারাবাহিক এ ঘটনা ঘটেই চলেছে। দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের দক্ষতা এবং যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে? এ বিষয়ে ঠিকাদার আব্দুল জলিল বলেন, পত্রিকায় লেখেন কোনো সমস্যা নেই। এ বিষয়ে ফার্ম ম্যানেজার আব্দুল কুদ্দুসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কিই বা করার আছে।

দেশের চিনিশিল্পকে বাঁচাতে সরকার যখন গ্রহণ করেছে নানামুখি পদক্ষেপ। আধুনিক প্রযুক্তিতে আখচাষ করার জন্য চাষিদেরকে করা হচ্ছে উদ্বুদ্ধ। ঠিক তখনি ভর্তুকি উৎপাদিত চিনিকলের আখ পুড়ছে দফায় দফায়। আর সেই আখ চিনিকলে আসছে শুকনা খড়ি হয়ে। তারপরও এ বিষয়ে কারো নেই মাথাব্যাথা।

একটি সূত্র জানিয়েছে, চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঢাকায় থাকার সুযোগে এতো বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটাতে সাহস পেয়েছে কতিপয় স্বার্থানেশী মহল। এ ব্যাপারে চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, আমি ঢাকায় থেকে ফিরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।