স্বাস্থ্যসেবার মান নিশ্চিত করতে দরকার নানামুখি উদ্যোগ

 

দেশে উৎপাদিত ওষুধ বিদেশের বাজারে চাহিদা বাড়ছে। অথচ দেশের অভ্যন্তরেই ভেজাল ও ওষুধের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। ধরাও পড়ছে। এতে স্পষ্ট যে, দেশে ওষুধশিল্পের বিকাশ ঘটলেও স্বাস্থ্যসেবা খাতটিতে এখনও নানামুখি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। স্বাস্থ্য প্রশাসন অতোটা দক্ষ ও দায়িত্বশীল নয়, যতোটা হলে ওষুধ ভেজালমুক্ত হতো, মান নিয়েও প্রশ্ন উঠতো না। জীবন রক্ষার জন্য ওষুধ, অথচ সেই ওষুধই ভেজাল হলে মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

প্রায় ৯৫ ভাগ ওষুধশিল্প বেসরকারি বিনিয়োগে গড়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, ওষুধশিল্প বর্তমানে দেশের অন্যতম রফতানি খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। দেশে আন্তর্জাতিক মানসম্মত অনেক ওষুধ কারখানাও রয়েছে। পাশিপাশি রয়েছে প্রচুর নিম্নমানের ভেজাল ওষুধ কারখানা। একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীর কবলে পড়ে ভেজাল আর নকল ওষুধে সয়লাব হচ্ছে দেশ। এতে স্বাস্থ্যখাত মারাত্মক হুমকির মুখে। রোগের প্রতিকার এবং প্রতিরোধের জন্য আমরা যে ওষুধ ব্যবহার করি সেটি মানসম্মত হওয়া অপরিহার্য। জীবন রক্ষায় ওষুধের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মানহীন ও ভেজাল ওষুধ এখন যেন জীবননাশের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময় ভেজাল ও নকল ওষুধ তৈরির সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করা হয়; কিন্তু আইনের দুর্বলতা এবং সুনির্দিষ্ট ওষুধ নীতিমালা না থাকার কারণে তা রোধ করা যাচ্ছে না।

আইনী জটিলতার কারণে জাতীয় ওষুধ নীতি প্রণয়ন পিছিয়ে গেছে। এ নীতিমালা কবে হবে তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়। নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির একজন সদস্যের আপত্তি ও আদালতে মামলা করার পর তা আর আলোর মুখ দেখেনি। নীতিমালা যুগোপযোগী না করায় ও ওষুধ বিক্রির গেজেট প্রকাশ না করায় এখন বাজারে নকল ও ভেজাল ওষুধের ছড়াছড়ি। কোনটি আসল আর নকল তা চেনা কষ্টকর। এতে ক্রেতারা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল সোসাইটির সংশ্লিষ্টতা ছাড়া খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করায় আদালতে মামলা দায়ের করা হয়। আদালত শুনানি শেষে বাদীর পক্ষে রায় দেন। পরে এ ঘটনা উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়ায়। এরপর ওষুধ নীতিমালা প্রণয়নের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।

জানা যায়, জাতীয় ওষুধ নীতি যুগোপযোগী করার জন্য গত বছর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে ৮ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছিলো। এ কমিটি ওষুধ নীতিমালাকে যুগোপযোগী করার জন্য খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে। শুধু নীতিমালা করলেই হবে না। নীতিমালা অনুযায়ী আইনও থাকা জরুরি। ওষুধের মূল্য নির্ধারণে আইন আছে। অভিযোগ রয়েছে, ওষুধ প্রশাসন ওষুধের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে না। এতে কোম্পানিগুলো তাদের ইচ্ছেমতো মূল্য নিয়ন্ত্রণ করছে। এক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট আইন থাকা দরকার। সরকার কর্তৃক সকল ধরনের ওষুধের মূল্য নির্ধারণ করা উচিত। আর ওষুধ নীতিমালা প্রণয়ন করলে তা উন্নত বিশ্বের আলোকেই করা উচিত। দেশের সব ওষুধ কোম্পানি যাতে মানসম্মত ওষুধ উৎপাদন করে তা নিশ্চিত করা দরকার। ওষুধের দোকানে ড্রাগ লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা, লাইসেন্সবিহীন দোকানের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা দরকার। জেলাভিত্তিক ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অফিস স্থাপন করার বিধান রাখা উচিত। এতে সার্বক্ষণিক তদারকি করলে জনগণ মানসম্মত ওষুধ পাবে। এতে কমবে ভেজাল ওষুধ বিক্রি। কোম্পানিগুলোও বাধ্য হয়ে মানসম্মত ওষুধ তৈরি করবে। এমন নীতিমালাই ওষুধ নীতিতে থাকা দরকার।

অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে যে ওষুধ নীতিমালা আছে তা শিল্পবান্ধব, রোগীবান্ধব নয়। তাই রোগীবান্ধব ওষুধ নীতি হওয়া জরুরি। জীবন রক্ষা করে যে ওষুধ সে ওষুধের গুণগতমান বজায় রাখার জন্য ওষুধ প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে। ভেজাল ও নকল ওষুধ দূর করতে হবে। দূর করতে হবে মানসম্মত নয় এমন ওষুধও।