ঝিনাইদহের সাধুহাটি গ্রামের নবগঙ্গা নদীর শ্মশানঘাটে সন্ত্রাসীদের নৃশংসতা : বিএনপির বিক্ষোভ
গিয়াস উদ্দিন সেতু/মাহবুব মুরশেদ শাহীন: হরিণাকুণ্ডুর যুবদল নেতা ভূইয়াপাড়ার আজিজকে ধড়-মাথা বিছিন্ন করে খুন করা করেছে। গত রোববার রাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নবগঙ্গা নদীর শ্মশানঘাটে তাকে নৃশংসভাবে খুন করে সন্ত্রাসীরা। নিহত আব্দুল আজিজ হরিণাকুণ্ডু উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়ন যুবদলের সহসভাপতি। ইউনিয়নের উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাকে খুন করা হয়েছে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে। নিহত আজিজ চেয়ারম্যান প্রার্থী পারুলা হোসেনের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন তিনি।
জানা গেছে, ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলা দৌলতপুর ইউনিয়নের ভূইয়াপাড়া গ্রামের আবু তালেবের ছেলে আব্দুল আজিজ (৪০) এক সময় এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মোয়াজ্জেম বাহীনি সদস্য ছিলেন বলে এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকায় মোয়াজ্জেমের পতনের পর তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সুযোগ পান। পরে আজিজ দৌলতপুর ইউনিয়ন যুবদলের সহসভাপতি নির্বাচিত হন। গত বছর ২৮ অক্টোবর দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবুল হোসেন দিন-দুপুরে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় নিহত হন। আগামী ১২ মার্চ দৌলতপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে আবুল হোসেনের স্ত্রী পারুলা হোসেনের একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে কাজ করছিলেন। গত পরশু রোববার রাতে একদল সন্ত্রাসী তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটি গ্রামের নবগঙ্গা নদীর শ্মশানঘাট নামক স্থানে ধড়-মস্তক বিছিন্ন করে খুন করা হয়। গতকাল সোমবার সকালে এলাকাবাসী লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশের খবর দেয়। পুলিশ খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালমর্গে পাঠায়।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা পুলিশ ক্যাম্পের তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) ইমরুল হোসেন জানান, সকাল ৮টার সাধুহাটি ইউনিয়নের নবগঙ্গা নদীর ধারে শশ্মানঘাটে ধড়মস্তক বিছিন্ন করা একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে গ্রামবাসী পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালমর্গে পাঠায়।
হরিণাকুণ্ডু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিবুল ইসলাম জানান, পেশায় কৃষক আব্দুল আজিজ এক সময় পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির মোয়াজ্জেম গ্রুপের সদস্য ছিলেন। বর্তমানে তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত এবং আগামী ১২ মার্চ দৌলতপুর ইউনিয়নের উপনির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী পারুলা হোসেনের সমর্থক ছিলেন। তিনি আরও জানান, রোববার রাতে উপনির্বাচনের ভোট চাওয়ার নাম করে কয়েকজন দুর্বৃত্ত আজিজের বাড়িতে ঢুকে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। ভোট নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণেই আজিজকে খুন করা হতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে উপনির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী পারুলা হোসেন অভিযোগ করে বলেন, তার প্রতিপক্ষ প্রার্থী সাবদার হোসেনের সন্ত্রাসীরাই আজিজকে হত্যাকাণ্ড ঘটনা ঘটিয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন। তিনি বলেন, রোববার সন্ধ্যায় দৌলতপুর ইউনিয়নের উপনির্বাচনের ভোট চাওয়ার নাম করে দুর্বৃত্তরা আজিজের বাড়িতে প্রবেশ করে এবং তাকে ভূইয়াপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে ধরে এনে সাধুহাটি ইউনিয়নের শশ্মানঘাট নামক স্থানে জবাই করে খুন করেছে। তার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবদার হোসেনের সন্ত্রাসীরাই বিএনপি কর্মী আজিজকে খুন করেছে। তিনি আরো জানান, আব্দুল আজিজকে খুনের আগে সন্ত্রাসীরা হরিণাকুণ্ডু উপজেলার হিঙ্গেরপাড়া গ্রামের আনারস প্রতীকের সমর্থক মুকুল সরদারকে মারপিট করে এবং একই গ্রামের ফারুক হোসেন ও হাফিজা খাতুনের বাড়িতে হামলা চালায়। পেশিনগর গ্রামের নুরুল ইসলাম নুরু ও তার স্ত্রীকে মারধর করে। ভেড়াখালী গ্রামের শহিদুল, সোনাতনপুর স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহাবুদ্দীন ও মৃগেবাথান গ্রামের হাবিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও মারধর করে বিএনপির প্রার্থীকে ভোট না দিতে শাসিয়ে যায়। এ ঘটার পর রাত ২টার দিকে আজিজকে ধরে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
নিহত আজিজের পিতা বৃদ্ধ আবু তালেব জানান, রাত ১২/১টার দিকে একদল লোক বাড়িতে ঢুকে পুলিশের পরিচয় দিয়ে আজিজকে খুঁজতে থাকে। আজিজের ঘরে ঢুকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় আবুল চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে ভোট দিতে কড়াভাবে নিষেধ করে।
নিহত আজিজের স্ত্রী মিসেস আজিজ জানান, ৮/১০ জন লোকের একটি দল অস্ত্রশস্ত্রসহ ঘরে ঢুকে তার স্বামীকে আবুল চেয়ারম্যানের স্ত্রীর ভোট দিতে নিষেধ করে। পরিবারের পক্ষ থেকে তাকে ভোট না দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও তাকে ঘর থেকে বের করে বাড়ির বাইরে নেয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে অস্ত্রধারীগণ বলেন, রাস্তায় নিয়ে কয়েকটি কথা বলে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু স্বামীর পিছু নিলে আমাকে হত্যার হুমকি দিলে ভয়ে বাড়ি মধ্যে চলে আসি। পরে আর আজিজকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। খবর পেয়ে পুলিশ বাড়িতে এলেও তারা রাতে আজিজের সন্ধান করতে পারেনি। সকালে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী জানান, এ ব্যাপারে এখনো কোনো মামলা হয়নি। এদিকে যুবদল নেতা আব্দুল আজিজকে হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি। সোমবার দুপুরে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যাণ্ড থেকে মিছিলটি বের করে। মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মসিউর রহমান। শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে জেলা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পৌর বিএনপির সভাপতি জাহিদুজ্জামান মনার সভাপতিত্বে সমাবেশ বিএনপি নেতা মসিউর রহমান ও আবদুল মালেক বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ১২ মার্চ হরিণাকুণ্ডুর দৌলতপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করায় যুবদল নেতা আজিজকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পর হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নেতৃবৃন্দ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতার দাবি করেন।
এদিকে সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নির্বাচনী প্রচারাভিযানের শেষ মুহূর্তে ভোট চাওয়াকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি মোহাম্মদ আলী বুড়ো ও অয়ুব হোসেন মেম্বারসহ তিনজনকে প্রতিপক্ষ বিএনপির লোকেরা কুপিয়ে জখম করেছে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য হরিণাকুণ্ডু হাসপাতালে ভর্র্তি করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৮ অক্টোবর দৌলতপুর ইউপি চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আবুল হোসেন দিনদুপুরে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় নিহত হন। আগামী ১২ মার্চ দৌলতপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইউপি নির্বাচনের সাথে এ হত্যার যোগসূত্র থাকতে পারে বলে এলাকাবাসীর ধারণা।