স্টাফ রিপোর্টার: লাইসেন্স বাতিলকৃত ১৭ এমএলএম কোম্পানির প্রায় ৭ লাখ গ্রাহক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। কারণ আজ থেকে ওইসব কোম্পানির পণ্য বিক্রি ও অর্থ লেনদেন হবে সম্পূর্ণ অবৈধ। আইন মতে, দেশের কোথাও এসব কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা ও নতুন গ্রাহক তৈরি করতে পারবে না। এমএলএম ব্যবসা চালাতে হলে অবশ্য লাইসেন্স নিয়েই করতে হবে।
এদিকে লাইসেন্স বাতিলকৃত কোম্পানিগুলোর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। লাইসেন্স না পেলেও ব্যবসা বন্ধ করেনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওইসব কোম্পানি তাদের কৌশল হিসেবে নতুন গ্রাহক তৈরি, পণ্য বিক্রি ও লেনদেনের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এতে গ্রাহকরা নতুনভাবে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, দুর্নীতি ও প্রতারণার দায়সহ বিভিন্ন অভিযোগে রোববার রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানি (আরজেএসসি) থেকে ১৭ এমএলএম কোম্পানি শনাক্ত করা হয়েছে। আরজেএসসি টানা ৬০ দিন তদন্ত শেষে করেছে। অবশ্য এমএলএম ব্যবসা চালাতে নতুন আইনে ২১টি কোম্পানি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলো। শুধু ৪টি কোম্পানি এমএলএম ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনুমোদন পেয়েছে।
এমএলএম আইনে লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু যেসব কোম্পানি লাইসেন্স পায়নি তারা দিব্যি ব্যবসা চালাচ্ছে। লাইসেন্সের জন্য আবেদনকৃত ১৭টি কোম্পানি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে গোপনে এমএলএম ব্যবসা করছে এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। নতুন গ্রাহক তৈরি, প্রতারণা ও অবৈধভাবে ব্যবসা করছে।
এ প্রসঙ্গে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ ও ফার্মসের নিবন্ধক বিজনকুমার বৈশ্য জানান, লাইসেন্স ছাড়া কোনো কোম্পানি এমএলএম ব্যবসা করতে পারবে না। যারা দীর্ঘদিন এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করছে, মাঠপর্যায়ে লাখ লাখ গ্রাহক রয়েছে, কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ আছে তাদের গ্রাহকদের অবস্থা কি হবে, জানতে চাইলে নিবন্ধক বলেন, আমার দৃষ্টিতে কোনো এমএলএম ব্যবসা হয়নি। এমএলএম ব্যবসার জন্য আবেদন করা হয়েছে। লাইসেন্স পেলেই একমাত্র ব্যবসা করতে পারবে। লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে যারা পায়নি ওই কোম্পানিগুলো এমএলএম আইন অনুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে আপিল করতে পারবে। আপিলের সময়সীমার পরবর্তী ৪৫ দিনের মধ্যে শুনানি শেষ করা হবে। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে জানিয়ে দেয়া হবে। এর মধ্যে কোনো কোম্পানি ব্যবসা চালাতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, এমএলএম আইনে ২১টি কোম্পানি লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছে। যাচাই-বাছাই শেষে ৪টি কোম্পানিকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অন্য কোম্পানিগুলোর লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
এদিকে লাইসেন্স বাতিলকৃত কোম্পানি ফরইভার লিভিং প্রডাক্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী জামাল হোসেন জানান, কোম্পানির গ্রাহক রয়েছে ২০ হাজার। আবেদন করলেও লাইসেন্স দেয়া হয়নি। কিন্তু আমাদের ব্যবসা বন্ধ রাখা যাবে না। ব্যবসা চলবে। লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আমরা আপিল করবো। সরকার এমএলএম আইন ও নীতিমালা তৈরি করেছে। আমরা নীতিমালা মেনেই লাইসেন্স গ্রহণ করব। এতে গ্রাহকদের কোনো ক্ষতি হবে না। তিনি প্রথমে আবুধাবি, পরে দুবাইয়ে এ কোম্পানিতে চাকরি করেছেন। দেশে ফিরে গত তিন বছর নিজেই ব্যবসা করছেন।
লাইসেন্স বাতিলকৃত আরেক কোম্পানি সানসু লাইফ (বিডি) লি. উপদেষ্টা মো. ফায়সাল জানান, এ কোম্পানিতে ৭শ গ্রাহক রয়েছে। লাইসেন্স বাতিল করায় আমরা আইনজীবীর মাধ্যমে ফের আবেদন করবো। কিন্তু এতে আমাদের ব্যবসার কোনো ক্ষতি হবে না। ব্যবসা পরিচালনাও বন্ধ হবে না। তিনি আরও বলেন, আমরা স্বাস্থ্যসম্মত পানি বাজারজাত করছি। আইন মেনেই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছিলাম। ব্যবসা চালু রেখেই আমরা আপিল করব লাইসেন্স অনুমোদনের জন্য।
বৈধ ৪ এমএলএম কোম্পানি: ওয়ার্ল্ড ভিশন-২১, স্বাধীন অনলাইন পাবলিক লিমিটেড, রিচ বিজনেস সিস্টেম বাংলাদেশ লিমিটেড ও এমএক্সএন মর্ডান হারবাল ফুড লিমিটেড এ চার কোম্পানি এমএলএম ব্যবসা করার লাইসেন্স পেয়েছে। দেশে প্রথম বৈধ এমএলএম কোম্পানি হচ্ছে ওই চারটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ঢাকার উত্তরায় প্রধান কার্যালয় হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ভিশন-২১ কোম্পানির। মূলত ল্যাপটপ ও মোবাইল মার্কেটিং করছে তারা। এমএক্সএন মর্ডান হারবাল ফুড কোম্পানি ইউনানি ও আয়ুর্বেদি পণ্য বিপণন করছে। মগবাজার মোড় রাইন রাজ্জাক প্লাজায় এর অফিস। চট্টগ্রামে অবস্থিত রিচ বিজনেস সিস্টেম বাংলাদেশ। মূলত নিত্যপণ্য বিপণন করছে।
রিচ বিজনেস সিস্টেম বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসাইন মোহাম্মদ হেলাল জানান, গত ৮ বছরে তাদের গ্রাহক ৪ লাখ হয়েছে। এমএলএম পদ্ধতিতে তারা নিত্যপণ্য বিক্রি করছেন। কোনো কোনো কোম্পানি ২ বছরে ২০ থেকে ৩০ লাখ গ্রাহক তৈরি করেছে। অধিক প্রলোভন দেখিয়ে এ কাজ করেছে। তিনি বলেন, এতে আমাদের মতো প্রকৃত এমএলএম ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়েছে। এখন সরকারের এমএলএম আইন ও বিধান মেনেই ব্যবসা করছি। এ নীতিমালা তৈরির পর প্রকৃত এমএলএম ব্যবসা অশুভ প্রতিযোগিতা ও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
লাইসেন্স বাতিলকৃত কোম্পানি: এমএলএম আইনে লাইসেন্স বাতিলকৃত ১৭টি কোম্পানি হচ্ছে ডেসটিনি ২০০০ লি., এসএমএন গ্লোবাল লি., এবি নিউট্রিক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, এডভান্স বাংলা লি., দেশান (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লি., ডি ক্লাসিক লাইফ (বিডি) প্রাইভেট লি., ড্রিম টুগেদার প্রাইভেট লি., এক্সসিলেন্ট ফিউচার মার্কেটিং লি., ফরইভার লিভিং প্রডাক্টস বাংলাদেশ লি., পিনাসেল সোর্সিং লি., সানুস লাইফ (বিডি) প্রাইভেট লি., টিয়ানসি (বাংলাদেশ) কোম্পানি লি., লাইফওয়ে (বিডি) প্রাইভেট লি., লাক্সার গ্লোবাল এন লি., ম্যাকনম ইন্টারন্যাশনাল লি., এমওয়ে ইন্টারন্যাশনাল লি., ভিশন ইন্ডাস্ট্রিজ (বাংলাদেশ) প্রাইভেট লি. রয়েছে।