দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই চলছে স্বৈরতন্ত্র : খালেদা জিয়া

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, সময় থাকতে যদি কথা না শোনেন, দ্রুত সকলের অংশ গ্রহণে নির্বাচনের ব্যবস্থা না করেন, দেরি হলে আপনাদের মাশুল দিতে হবে। উপজেলা নির্বাচন শেষে আবারো আন্দোলন শুরু হবে। দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই, চলছে স্বৈরতন্ত্র। এ স্বৈরাচারী সরকার যতদিন থাকবে ততদিন দেশে গণতন্ত্র আসবে না।

গতকাল রোববার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। খালেদা জিয়া বলেন, ভোটারবিহীন নির্বাচনে গায়ের জোরে সরকার গঠন করে কারও কাছে বৈধতা পায়নি এ সরকার। দেশের জনগণতো বটেই কোনো দেশই এ অবৈধ সরকারকে বৈধতা দেয়নি। তাই বৈধতার জন্য এখন প্রতিদিন বিদেশে দূত পাঠাচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, এমনকি দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল সিপিবিও বলছে দ্রুত নির্বাচন দিতে। জনগণ এখন নির্বাচনে ভোট দিতে উন্মুখ হয়ে আছে।

খালেদা জিয়া বলেন, সরকার বলে-আমরা ট্রেন মিস করেছি। আমরা তো বলি- ভোটই হয়নি। সারাদেশে উপজেলা নির্বাচনে সরকারি দলের লোকজনের তাণ্ডবের পরও বেশিরভাগ জায়গায় বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হচ্ছেন। নির্বাচনগুলোতে দেখা গেছে, সরকারি দলের লোকজন কেন্দ্র দখল করছে, নিজেদের পাশাপাশি প্রিসাইডিং অফিসারদের দিয়ে সিল মারছে। গতকাল এক ছবিতে দেখা গেছে, ৱ্যাব আওয়ামী লীগেরই এক বিদ্রোহী প্রার্থীকে বাধা দিচ্ছে। বিদ্রোহী হলেও তারও কিন্তু নির্বাচনের অধিকার আছে। তিনি বলেন, উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী-গুন্ডামি করে না নিলে তাদের বাক্সে একশটা ভোট পড়তো কি না সন্দেহ রয়েছে।

বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, আমরা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবো। আমাদের নিয়ে তাদের এতো ভয় যে, বিএনপি কোনো কর্মসূচি দিতে পারে না। আমরা একটা সমাবেশ করতে চাই অথচ তারা অনুমতি দেয় না। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে মহিলা দল একটি সমাবেশ করতে গেলে তারা তা বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ তারা রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করেছে। এটা কীসের গণতন্ত্র। এটাতো স্বৈরাচার। বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যাবে না। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্ব-ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার গেলেন। সেখানে ভারতের কাছে তিস্তার ন্যায্য পানির কথাও বলতে পারেন না। অথচ তাদেরও করিডোরসহ সব কিছু তিনি দিয়ে দিয়েছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আমাদের ন্যায্য পানির হিস্যা না দেবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত তাদের কোনো ট্রানজিট দেয়া হবে না। তিনি বলেন, আজকে বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়, শৃঙ্খলিত। বর্তমান সরকার ব্যাংক লুট করেছে। দলীয় লোকদের একের পর এক নতুন ব্যাংকের অনুমোদন দিয়েছে। তারা ঋণ করে ব্যাংক খুলছে। তিনি বলেন, কথাগুলো পুরনো। কিন্তু বারবার এসব কথা বলতে হবে।

খালেদা জিয়া বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের ৫ বছরে দেশে কোনো বিদেশি বিনিয়োগ আসেনি। তারা গর্ব করে বলে রিজার্ভ বেড়েছে। বিনিয়োগ না হলে টাকা তো অলস পড়ে থাকবেই। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, এখন বিদেশি শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে পড়েছে। মধ্যপ্রাচ্য বলে দিয়েছে, তারা বাংলাদেশ থেকে কোনো শ্রমিক নেবে না। মালয়েশিয়াও তাই বলেছে।

আইনজীবীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের আরও প্রতিবাদ করতে হবে। যারা দেশপ্রেমিক কিন্তু আওয়ামী লীগ করেন তাদেরও নানাভাবে দেশরক্ষার স্বার্থে প্রতিবাদ করতে হবে। সারাদেশে বেশিরভাগ জেলা বারের নির্বাচনে আমরা জিতেছি। ঢাকায় বিএনপি সমর্থিতরা এত বেশি পদে আগে আর কখনও জিতেনি। বিএনপি শক্তিশালী আছে, আরও শক্তিশালী হবে।

জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর খালেদা জিয়ার হাতে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান ঢাকা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি মো. মোহসিন মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মো. মোসলেউদ্দিন জসীমসহ সমিতির নেতারা। এ সময় খালেদা জিয়ার সাথে সমিতির নবনির্বাচিত নেতারা ফটোসেশনে অংশ নেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।