চুয়াডাঙ্গার কম্পিউটার ব্যবসায়ী আবু শামাসহ দুজন অপহৃত

গোপীনাথপুর-কুলচারা সড়কে ভুট্টাক্ষেত থেকে ককটেল মানিব্যাগ ও রশি উদ্ধার

 

নিমতলা থেকে ফিরে সদরুল নিপুল: চুয়াডাঙ্গার কম্পিউটার ব্যবসায়ী আবু শামা ও তার কর্মচারী মাসুদ রানাকে অপহরণ করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে বাড়ি নিমতলা গ্রামে ফেরার পথে তারা অপহৃত হন। রাত ৮টার দিকে দোকান বন্ধ করে চুয়াডাঙ্গা শহর থেকে মোটরসাইকেলযোগে তারা বাড়ি ফিরছিলেন। অপহৃত দুজনকে উদ্ধারের জন্য পুলিশ জোর চেষ্টা চালিয়ে গেলেও গতরাত ১২টা পর্যন্ত তাদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। অপহৃত দুজনের ভাগ্যে কী জুটেছে তাও কেউ বলতে পারছে না। দু পরিবারে চলছে শোক আর অজানা আতঙ্ক।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়নের নিমতলা গ্রামের কুদরত আলীর একমাত্র ছেলে আবু শামা (২৬) গত ৩ মাস আগে চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত ওয়াল্টন প্লাজার দোতলায় কম্পিউটারের ব্যবসা শুরু করেন। তিনি অ্যারিস্ট্র কম্পিউটারের ডিলার। একই গ্রামের প্রতিবেশী দরিদ্র আফাজ উদ্দীনের বড় ছেলে মাসুদ রানা (২০) তার দোকানে কর্মচারী হিসাবে কাজ করতেন। আবু শামা তার লাল রঙের পালসার মোটরসাইকেলযোগে কর্মচারী মাসুদ রানাকে সাথে নিয়ে প্রতিদিনের মত গত শনিবার রাত ৮টার দিকে দোকান থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দেন। কম্পিউটার ব্যবসায়ী আবু শামার পিতা কুদরত আলী জানান, শনিবার রাতে এশার নামাজ শেষ করে দেখি আবু শামা বাড়ীতে ফেরেনি। রাত সাড়ে ৮ টার দিকে মোবাইলফোনে বাড়ি আসার কথা বললে আবু শামা জানায় এইতো আব্বা এখনই ফিরবো। রাত সাড়ো ৯টা বেজে গেলেও আবু শামা বাড়িতে না ফেরায় আবারও ফোন করা হয় আবু শামার নম্বরে। মোবাইলফোন বন্ধ পাওয়ায় আবু শামার পরিবারে সন্দেহেরে সৃষ্টি হয়। আবু শামার ভাতিজা ফারুক হোসেন জানায় মোবাইলে সংযোগ বন্ধ পাওয়ায় আমাদের দুঃশ্চিন্তা বেড়ে যায়। এরপর আমরা সবাই মিলে গোপীনাথপুর-কুলচারা সড়কের ঝুকিপূর্ণ জায়গাসহ বিভিন্ন মাঠে খোঁজাখুঁজি করি। এক পর্যায়ে রাত ১২টার দিকে সড়কে টহল পুলিশের সাথে ঘটনার বিস্তারিত জানানো হয়।। রাতভর খোঁজাখুঁজি চলে। গতকাল রোববার সকাল ৯টায় গোপীনাথপুর-কুলচারা সড়কের মাঝামাঝি নির্জন ফাঁকা জায়গার সড়কের পাশে একটি ভুট্টাক্ষেত থেকে সদর থানা পুলিশ তিনটি ককটেল, একটি রশি এবং আবু শামার খাবার বহন করা অ্যারিস্ট্র কোম্পানি লেখা একটি ব্যাগ উদ্ধার করে। এএসপি (সার্কেল) মো. কামরুজ্জামান ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেন গতকাল সকালে নিমতলা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। গতকাল দুপুরে আবু শামা এবং মাসুদ রানার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ছেলের সন্ধান না পাওয়ায় দুটি পরিবারে চলছে কান্নাকাটি। এলাকাবাসী জানায়, এ সড়কে ইতঃপূর্বে অনেক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ ব্যাপারে গতকাল চুয়াডাঙ্গা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লিয়াকত হোসেন মাথাভাঙ্গাকে জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ব্যবসায়িক কারণে অথবা ছিনতাইয়ের কোনো ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। তিনি বলেন দুজনকে উদ্ধারের জন্য আমরা সব ধরনের জোরালো চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আবু শামার মা মর্জিনা খাতুন কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন আমার ছেলেকে তোমরা ফিরিয়ে দাও। অভিন্ন ভাষায় মাসুদ রানার মা আকলিমা খাতুন তার ছেলেকে না পেয়ে আর্তনাদ করতে করতে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারে গতকাল আবু শামার মামা পার্শ্ববর্তী সরিষাডাঙ্গা গ্রামের ডা. নুরুল ইসলাম চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তবে পরিবারের কাছে এখনো কোনো মুক্তিপণ কেউ চায়নি বলে গতরাত ১২টায় জানান আবু শামার পিতা কুদরত আলী।