বেড়েই চলেছে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। থামছে না কোনোভাবেই। ঢাকায় বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এসব ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জড়িত থাকায় বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা ক্রসফায়ারের অভিযোগ উঠেছে। তবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, দেশে কোনো ক্রসফায়ার হয় না, যা হয় তা বন্দুকযুদ্ধ। কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনাস্থল ও শিকার ভিন্ন ভিন্ন হলেও কাহিনি একই। ফলে মানুষের সন্দেহ না কমে, বদ্ধমূল হয়েছে যে উদ্দেশ্যমূলকভাবেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। কোনোটারই বিচার না হওয়া প্রমাণ করে এসবের সাথে প্রভাবশালীমহল জড়িত, কোনো কোনোটিতে সরাসরি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগও নতুন নয়। প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, ঢাকার এক বাড়িতে ৱ্যাবের সাথে কথিত ক্রসফায়ারে ওয়াসিম ও তার কর্মচারী সংগ্রাম চৌধুরী মারা যায়। এ ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবেই মন্ত্রী বন্দুকযুদ্ধের কথা বলেছিলেন। তবে নিহতের পরিবার ও সংশ্লিষ্টদের কথায় বাথরুম থেকে ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে। পত্রিকাটির অনুসন্ধানী রিপোর্টে বেরিয়ে এসেছে ঘটনার পেছনের ইতিহাস। বুড়িগঙ্গা ব্রিজের টোল আদায়কারী ওয়াসিম। সংগ্রাম চৌধুরীসহ তার কর্মচারীদের মধ্যে টাকার হিসাব নিয়ে বিরোধের জের ধরে শুরু হওয়া দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে পুলিশ-ৱ্যাব। এর আগেও নিহতদের ধরে নিয়ে যাওয়ার পর বিশেষ ব্যবস্থায় ফয়সালা হয়। তবে এবার ৱ্যাবকে দিয়ে অপহরণ নাটক সাজিয়ে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ সবকিছুর সমাপ্তি টানা হয়। নিহতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তোলা হলেও থানায় কোনো মামলা বা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ না থাকায় সাজানো নাটকের অভিযোগের প্রমাণ মেলে। এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অবশ্য মোটেই নতুন নয়। একটি মানবাধিকার সংস্থার হিসাবে গত ১০ বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন ১ হাজার ৯৭৩ জন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি যাত্রাবাড়ী এলাকাতে নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন দু’ব্যক্তি। তাদের একজনের বিরুদ্ধে অপরাধ সংক্রান্ত কোনো পূর্ব অভিযোগ ছিলো না।
সেখানে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের বয়ানে উল্লেখ করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশ, ৱ্যাব বা ডিবি সদস্য পরিচয়ে তুলে নিয়ে গুম করা হয়। কেউই আর ঘটনার কথা স্বীকার করে না। তারপর বন্দুকযুদ্ধে নিহত বা লাশ পাওয়া যায় পরিত্যক্ত অবস্থায়। পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি, মানবাধিকার সংস্থার বক্তব্য-বিবৃতির রেশ কেটে গেলে সবই এক সময় ধামাচাপা পড়ে যায়। এভাবেই চলছে বাংলাদেশে আইনের শাসন। এভাবে অপরাধের ঘটনা ধামাচাপা দেয়া বা তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার ফলেই দেশে আইনের শাসন যেমন ভেঙে পড়েছে এবং মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে । এর দায় অবশ্যই মতাসীন রাজনীতিকদের ওপর বর্তাবে। আমরা মনে করি অপরাধীদের রক্ষা নয়, বিচারের আওতায় আনলে বিচার বহির্ভূত খুনের প্রয়োজন হবে না।