ভুয়া ডাক্তার সবুজের এক বছর কারাদণ্ড এক লাখ টাকা জরিমানা

চুয়াডাঙ্গার গ্রিন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান

 

স্টাফ রিপোর্টার: ভুয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সবুজ আহাম্মেদ নিলয়কে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও একলাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। গতকাল চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত এ কারাদণ্ড ও জরিমানার আদেশ দেন। সাজাপ্রাপ্ত সবুজ আহমেদ নোয়াখালী জেলার সেনবাগ থানার দক্ষিণ শাহাপুর গ্রামের রেজাউল হকের ছেলে। ভ্রাম্যমাণ আদালত বিকেলে থেকে অভিযান পরিচালনা শুরু করলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কারাদণ্ড ও জরিমানার এ আদেশ প্রদান করেন। আদেশের পর পুলিশি নিরাপত্তায় তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

এনএসআইয়ের উপপরিচালক জাফর ইকবাল জানান, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কে বিভিন্ন বেরসকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুয়া চিকিৎসকদের প্রাক্টিস চলছে এবং তারা সাধারণ রোগীদের সাথে প্রতারণা করছেন। এ ধরনের খবর আসে আমাদের কাছে। এমন খবরের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে সদর হাসপাতাল সড়কের গ্রিন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ার সাদাতের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানকালে ক্লিনিকের অংশীদার শরিফুল ইসলাম ও প্রাক্টিসরত কথিত চিকিৎসক সবুজ আহাম্মেদ ওরফে নিলয় চৌধুরীর সাথে কথা বলেন। কথাবার্তায় চিকিৎসকের নানা অসঙ্গতি ও প্রতারণা ফাঁস হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিশ্চিত হন যে চিকিৎসক পরিচয়দানকারী ডা. মো. সবুজ আহাম্মেদ একজন ভুয়া চিকিৎসক। তার কোনো ডিগ্রি নেই, নেই চিকিৎসক হওয়ার মতো কোনো কাগজপত্র।

ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অংশীদার শরিফুল ইসলাম জানান, গত বুধবার সবুজ আহাম্মেদ চুয়াডাঙ্গা শান্তিপাড়ার হারুন অর রশিদ নামের এক ব্যক্তির সাথে আসেন। এ সময় সবুজ আহম্মেদ নিজেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দাবি করে প্রাক্টিস করার সুযোগ চান। তাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ গতকাল বৃহস্পতিবার আসার জন্য বলা হয়। কিন্তু আশা ফার্মেসির স্বত্বাধিকারী আশাদুজ্জামান ওই চিকিৎসক সবুজ আহাম্মেদকে প্রাক্টিসের সুযোগ দিতে নিষেধ করেন। এ ব্যাপারে আশা ফার্মেসির আশা মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আমার ফার্মেসিতে চিকিৎসক হিসেবে তার বসার কথা ছিলো। কিন্তু আমি যখনই তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাই, তখনই তিনি এ ফার্মেসিতে আসা বন্ধ করে দেন। ওই নামধারী চিকিৎসক গতকাল বৃহস্পতিবার গ্রিন লাইফ মেডিকেল সেন্টারে আসার পরপরই জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা তার কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখতে চান। এর পরপরই ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়ে ভুয়া ডাক্তারকে জেল ও জরিমানার আদেশ দেন।

সূত্র জানায়, গত দু দিন ধরে ভুয়া চিকিৎসক সবুজ আহাম্মেদ ওরফে নিলয় চৌধুরী (২৫) প্রতারণামূলক লিফলেট ছেপে বিলি করতে থাকেন। ওই লিফলেটে লেখা হয়েছে, ‘সুখবর সুখবর সুখবর, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেডিসিন ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এখন চুয়াডাঙ্গায়। এমবিবিএস (ঢা.মে.ক) বিএইচসি মেডিসিন (স.মে.ক.হা.) পিজিটি মেডিসিন ডিএমএফ (ঢা.মে.ইন) মেডিসিন শিশু ও মহিলা রোগ বিশেষজ্ঞ মিলিনিয়াম হার্ট ও জেনারেল হসপিটাল, ঢাকা।।

আরেকটি সূত্র জানায়, দণ্ডপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. সবুজ আহাম্মেদ মাস কয়েক আগে ব্যাপকভাবে মাইকে ও লিফলেট প্রচারণা চালিয়ে চুয়াডাঙ্গা শান্তিপাড়ার লাইফ কেয়ার ফার্মা নামক ফার্মেসিতে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করেন। পরবর্তীতে সেখানে রোগী প্রতি ২০ টাকার বিনিময়ে চিকিৎসাপত্র দিতে থাকেন।

সূত্র জানায়, লিফলেট ও প্যাডে বড় বড় ডিগ্রি লিখে প্রতারক ভুয়া ডা. সবুজ আহাম্মেদ সাধারণ রোগীদের সাথে প্রতারণা করে আসছিলেন। সচেতন মহল দাবি তুলেছে অনেক স্থানে এ ধরনের ভুয়া চিকিৎসক রোগী সাধারণের সাথে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করছে। তাছাড়া চুয়াডাঙ্গার বাইরে থেকে আসা অনেক চিকিৎসকই তাদের প্যাডে বিভিন্ন প্রকার ডিগ্রি লিখে থাকেন। এগুলো যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার।