স্টাফ রিপোর্টার: উপজেলা নির্বাচনের পর বিএনপি আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর আওয়ামী লীগ নিচ্ছে আন্দোলন প্রতিহত করার প্রস্তুতি। সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শনিবার রাজবাড়ীতে এক রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার দেয়া আন্দোলনের হুমকি খতিয়ে দেখছে আওয়ামী লীগ। আন্দোলনে নামার মতো কতোটুকু শক্তি বিএনপির রয়েছে তা নিয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা; খালেদার বক্তব্য বিশ্লেষণও করছে তারা।
সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীনদের আশু লক্ষ্য- আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএনপি এবং তাদের সমমনাদের রাজপথের আন্দোলনে নামতে দেয়া হবে না। অন্তত এক বছর দেশকে আন্দোলনমুক্ত রাখতে যতো কঠোর অবস্থান নেয়ার দরকার পড়ুক না কেন, সরকার ও দল তা নেবে। এর আগে শুধু রাজধানী নয়, সারাদেশে দলীয় নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করে তোলা হবে। সরকারের পাশাপাশি দলের তৃণমূলকে শক্তিশালী করে বিএনপির যেকোনো আন্দোলন প্রতিহত করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
বিএনপি এবং তার জোটকে মোকাবেলার এ লক্ষ্যে গুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ। এরই অংশ হিসেবে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা করার জন্য ইতোমধ্যে দেশব্যাপি সাংগঠনিক সফর শুরু হয়েছে। নতুন নেতৃত্বের মাধ্যমে দলে গতিশীলতা আনতে আগামী এপ্রিলে শুরু হচ্ছে জেলা সম্মেলন। চলবে জুন-জুলাই পর্যন্ত। মাঠ দখলে রাখার অংশ হিসেবে কর্মীসভা, বর্ধিতসভা, মিছিল, সমাবেশসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথে থাকবে তারা। দলের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
আওয়ামী লীগ মনে করছে, তৃণমূল নেতা-কর্মীরা সক্রিয়ভাবে মাঠে থাকলে বিএনপিসহ সরকারবিরোধীরা আন্দোলন জমাতে পারবে না। তাই তৃণমূলকেই আবার জাগিয়ে তুলতে হবে। এক বছর যেকোনো আন্দোলন ঠেকিয়ে রাখতে সরকার যেমন কঠোর অবস্থানে থাকবে, তেমনি দলও থাকবে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায়। আওয়ামী লীগের একাধিক নীতি-নির্ধারক নেতা বলেছেন, বিএনপিকে মাঠে নামতে দেয়া হবে না- এ বিষয়ে দল ও সরকার কড়া অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের বাইরে তেমন কোনো কর্মসূচি পালন করতে গেলেই প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক, সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশেই এ কঠোর অবস্থানে থাকবেন তারা। এ বছর বিএনপি কোনো কর্মসূচি করতে চাইলে তাদের অনুমতি দেয়ার আগে নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে কি-না খতিয়ে দেখা হবে। নাশকতার আভাস পাওয়া গেলে কর্মসূচি পালনে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা জারির পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকারের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে যে, আগামী বাজেট ঘোষণার পর জুলাইয়ের দিকে বিএনপি কোনো ইস্যু সৃষ্টি করে মাঠে নামার পরিকল্পনা করে রেখেছে। তাই জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত খুব সতর্ক থাকতে চায় তারা। সরকারের ও দলের কৌশল হলো- ইস্যু সৃষ্টি করার মতো সুযোগ বিএনপিকে দেয়া হবে না।
সূত্র আরো জানায়, মন্ত্রিসভার সাম্প্রতিক এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সহকর্মীদের বলেছেন, বিএনপির ধ্বংসাত্মক কোনো কর্মসূচি বরদাশত করা হবে না। আমরা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ক্ষমতায় এসেছি। এ জন্য যা যা করণীয় তাই করতে হবে। তারা যাতে কোনো সুযোগ না পায়, এ জন্য সবাইকে সদাসতর্ক থাকতে হবে। তারা সুযোগ খুঁজবে ষড়যন্ত্র করার। আমরা কেউ যাতে তাদের সেই সুযোগ সৃষ্টি করে না দেই।
জানা গেছে, ঢাকার বাইরে বিএনপির আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য শিগগির তৃণমূল সম্মেলন শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। নেতৃত্বে পরিবর্তন এনে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সর্বোচ্চ মাত্রায় প্রস্তুত করা হবে তৃণমূলকে। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে দলের গবেষণা ইউনিট সিআরআইকে দলের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও থানা পর্যায়ের সব নেতার নাম, ঠিকানা, ফোন-নম্বর সংগ্রহ করে একটি ডাটাবেজ তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটি হলে সভাপতি প্রয়োজনে যে কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন।
সিআরআই সূত্র জানায়, সরকারের প্রথম বছরকে টার্গেট করেই তারা কাজ করে যাচ্ছে। দলের নির্দেশ অনুযায়ী তারা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচার-প্রচারণাও করবে, যাতে জনগণ সরকারের ওপর আস্থাশীল হয়। এছাড়া সরকার প্রথম বছরে জনমুখি নানা কর্মসূচি গ্রহণ করবে। সে জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারদর মনিটর করা হচ্ছে।
সরকারের অবস্থান সম্পর্কে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া সরকারের দায়িত্ব। আন্দোলনের নামে জনগণের শান্তি বিঘ্নিত হয় এমন কাজ কাউকে করতে দেয়া হবে না। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সরকারের প্রস্তুতি আছে, দলেরও আছে।
আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, আন্দোলনের নামে ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকাতে দলের নেতা-কর্মীরা সিদ্ধহস্ত। আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে সব সময় মাঠে ছিলো, আগামী দিনেও থাকবে। তিনি জানান, সাংগঠনিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জেলা সফর শুরু হয়েছে। এটা অব্যাহত থাকবে। শিগগির তৃণমূল সম্মেলন শেষ হবে। এতে দলে নতুন করে প্রাণসঞ্চার হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ‘জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় এসেছি। এবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করলে হাত-পা ভেঙে দেয়া হবে।’ উপজেলা নির্বাচনের পর আন্দোলন শুরু হবে, খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি আন্দোলন জানে না। তারা সন্ত্রাস, মানুষ হত্যা ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড করতে পারবে। কিন্তু মানুষের সমর্থন পাবে না। আন্দোলন করে তারা আমাদের পতন ঘটাতে পারবে না।