গাংনী মুজিবনগর ও মহেশপুরসহ ১১৫ উপজেলা নির্বাচন আজ : দু উপজেলায় স্থগিত

নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে রিটার্নিং অফিসার ও স্থানীয় প্রশাসনকে ইসির নির্দেশ

 

স্টাফ রিপোর্টার: দ্বিতীয় ধাপে দেশের ১১৫ উপজেলায় আজ বৃহস্পতিবার ভোট হচ্ছে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন চলবে ভোটগ্রহণ। ৩৪৫ জন চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার জন্য এক হাজার ৩৪১ জন প্রার্থী ভোটযুদ্ধে মুখোমুখি হচ্ছেন। নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কা না থাকলেও সেনাবাহিনীসহ মোতায়েন রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলনিরপেক্ষ হলেও প্রধান দু রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়ায় রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। বিশেষ করে প্রথম দফায় বিএনপি-জামায়াতের জয়ে বেশি উত্তেজনা কাজ করছে। প্রথম ধাপের ত্রুটি থেকে শিক্ষা নিয়ে জয়ের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে রয়েছে ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীরা।

নির্বাচনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার শাহ নেওয়াজ বলেন, নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে রিটার্নিং অফিসার ও স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন করার জন্য যা যা করার তাই করা হবে। প্রথম ধাপের কোনো ভুলের যেন পুনরাবৃত্তি না হয় তার জন্য সবাইকে সকর্ত করা হয়েছে।

২৩ জানুয়ারি ১১৭ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর মধ্যে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উত্সবের কারণে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলায় ও উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের জন্য চাঁদপুরের হাইমচরে আজ নির্বাচন হচ্ছে না। নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে প্রতিটি উপজেলায় পৌঁছে দেয়া হয়েছে ব্যালট ব্যাক্স, পেপার, কলম, পেন্সিল, অমোচনীয় কালি, রাবার ও স্কেলসহ ভোটগ্রহণের প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ। ভোটের জন্য পুরো প্রস্তুত ১১৫ উপজেলা।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, আজ বৃহস্পতিবার মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ। গতকাল বুধবার সকাল থেকেই কেন্দ্রগুলোতে ভোটের সরঞ্জাম প্রেরণ শুরু হয়েছে। গাংনী উপজেলায় ৮০টি ও মুজিবনগর উপজেলায় ২৮টি কেন্দ্র রয়েছে। গাংনী উপজেলা পরিষদ চত্বর থেকে সহকারী রিটার্নিং অফিসার উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস সালাম প্রিসাইডিং অফিসারদের হাতে সরঞ্জাম বুঝে দিয়েছেন। কেন্দ্রের চাহিদা অনুযায়ী ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার, সিলপ্যাড, অমোচনীয় কালিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রয়েছে। এসব মালামাল নিয়ে আনসার ও পুলিশ সদস্যদের সাথে নিয়ে স্ব স্ব কেন্দ্রে পৌছেছেন। গতকাল বিকেলে সবগুলো কেন্দ্রে ভোটগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এ নির্বাচনে ১০৮টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৫১টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে গাংনীর ৮০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৩৬টি ও মুজিবনগরের ২৮টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৫টি ভোটকেন্দ্র। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ভোটগ্রহণের দিন অতিরিক্ত পুলিশ ও আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছেন মেহেরপুর পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম। একই সাথে এসব এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর বিশেষ টহল থাকবে। অবাধ সুষ্ঠু সবার জন্য সমান পরিবেশে ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মঙ্গলবার থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন। কেন্দ্র ও কেন্দ্রের বাইরে পুলিশ, স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য দুজন পুলিশ এবং ১৩ জন আনসার সদস্য মিলে ১৫ জন এবং গুরুত্বপুর্ণ কেন্দ্রগুলোতে ১৬ জন দায়িত্ব পালন করবেন। অপরদিকে পুলিশের ভ্রাম্যমাণ দল, স্ট্রাইকিং ফোর্স ও তদারকি দল সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা হলে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পৌছে যাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা।

ঝিনাইদহ অফিস জানিয়েছে, ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় নির্বাচনে তিনটি পদে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের ১৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের একক প্রার্থী থাকলেও দলীয় কোন্দল থাকায় বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছে। জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলায় জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীর সাথে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি ভোটযুদ্ধ হবে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা। ১২টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে উপজেলা গঠিত। ভোটার দু লাখ ২০ হাজার ৭৯৬ জন আর ভোটকেন্দ্র ১০০টি। নির্বাচনে এ উপজেলার ১ লাখ ১০ হাজার ৭২৫ জন পুরুষ ভোটার ও ১ লাখ ১০ হাজার ৭১ জন মহিলা ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। চেয়ারম্যান পদে ৬ জন ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী রয়েছেন ৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের একক প্রার্থী থাকলেও বিএনপির একাধিক প্রার্থী রয়েছে।

ঝিনাইদহ রিটার্নিং অফিসার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, মহেশপুর উপজেলা নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রশাসন প্রস্তুত। নির্বাচনে ১২ জন জুডিসিয়াল ও ১৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, গুলির আদেশসহ সার্বিক দায়িত্বে নিয়োজিত থেকে ভোটকেন্দ্র মনিটরিং করবেন তারা।

প্রসঙ্গত, গত সংসদ নির্বাচনে এ উপজেলার ১৯টি ভোটকেন্দ্র আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় ১৯ দলীয় জোট নেতাকর্মীরা। বর্তমানে এখানকার চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ভোটারদের মধ্যে নির্বাচনী উৎসব বিরাজ করছে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ব্যাপারে ভোটারাও আশাবাদী। সর্বশেষ ২০০৯ সালের উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের ময়জুদ্দীন হামিদ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতের মোহাম্মদ আলী।