অমর একুশে আজ : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস

 

শোকের দিন গৌরবের দিন আজ

স্টাফ রিপোর্টার: আজ অমর একুশে। শোক-শক্তি-গৌরবের সেই দিন ২১ ফেব্রুয়ারি ফিরে এলো আবার। ফিরে এলো রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ সেই মহান শহীদ দিবস। বাঙালি জাতির চির প্রেরণা ও অবিস্মরণীয় এ দিনটি শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। জাতির জীবনে শোকাবহ, গৌরবোজ্জ্বল ও চিরভাস্বর ১৯৫২ সালের এই দিনে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রাখতে গিয়ে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়েছিলেন সালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, সফিউররা। পৃথিবীর ইতিহাসে মাতৃভাষার জন্য রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দেয়ার প্রথম নজির এটি। সেদিন তাদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা, মায়ের ভাষা। আর এর মাধ্যমে বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের যে সংগ্রামের সূচনা হয়েছিলো, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্যদিয়ে তা চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাঙালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। আজ সরকারি ছুটির দিন। শহীদদের স্মরণে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হচ্ছে। একই সাথে সর্বত্র ওড়ানো হচ্ছে শোকের কালো পতাকা। সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বেতারে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ ও অনুষ্ঠানমালা প্রচার করা হচ্ছে। বিশ্বের সকল জাতিসত্তার ভাষা রক্ষার দিন হিসেবে জাতিসংঘ বেছে নিয়েছে বাঙালি জাতির ভাষার জন্য লড়াইয়ের এই দিনটিকে। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর তাদের ৩০তম সম্মেলনে ২৮টি দেশের সমর্থনে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ২০০০ সাল থেকে বিশ্বের ১৮৮টি দেশে একযোগে এ দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাঙালি জাতির জন্য এক অনন্য সাধারণ অর্জন। ‘একুশ মানে মাথা নত না করা’ চিরকালের এ স্লোগান আজো স্বমহিমায় ভাস্বর। একুশের চেতনা আমাদের আত্মমর্যাদাশীল করেছে। একুশ মানে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, যাবতীয় গোঁড়ামি আর সংকীর্ণতার বিরুদ্ধে শুভবোধের উদ্বোধন। এখনো জাতির যেকোনো ক্রান্তিকালে একুশ আমাদের প্রেরণা যোগায়। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই ভাষা আন্দোলন জাতির বীরত্বপূর্ণ ঐতিহ্যের পরিচয় তুলে ধরে। যখন স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ এগিয়ে চলেছে, ধর্মান্ধ মৌলবাদী মানবতাবিরোধী অপশক্তি যখন দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল অশান্ত করে তোলার চক্রান্তে লিপ্ত, তখন চির প্রেরণার প্রতীক অমর একুশে নতুন তাত্পর্য নিয়ে জাতির সামনে হাজির হয়েছে। তাই আজ শুধু শোক নয়, শোককে শক্তিতে পরিণত করার দিন।

একুশের প্রথম প্রহর থেকেই জাতি কৃতজ্ঞ চিত্তে ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে। রাত ১২টা ০১ মিনিটে রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বুকে শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ ধারণ করে, খালি পায়ে আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই শামিল হতে শুরু করেছেন শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। শুধু ঢাকাতেই নয়, সারাদেশের স্কুল-কলেজে, জেলা ও থানা প্রশাসনের উদ্যোগে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে দেশের সর্বস্তরের মানুষ। হৃদয়ের সবটুকু আবেগ ঢেলে দিয়ে সকলের কণ্ঠে বাজছে বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিষ্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী রচিত একুশের অমর শোকসঙ্গীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি…।’ চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ শহীদ মিনারটি আধুনিকায়ন করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হিসেবেই স্বীকৃত। এ শহীদ মিনারে অমর একুশের প্রথম প্রহর গতরাত ১২টা ০১ মিনিটে প্রথম ফুলে দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের হুইপ চুয়াডাঙ্গা-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুন। বিএনসিসি সদস্যরা গার্ড দিয়ে তাকে শহীদ মিনার বেদীতে নেন। তিনি পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর জীবননগর উপজেলা শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। চুয়াডাঙ্গা শহীদ মিনারে হুইপের শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদনের পরে যথাক্রমে জেলা প্রশাসনের পক্ষে জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসাইন শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। জেলা পুলিশের পক্ষে পুলিশ সুপার রশীদুল হাসান, ফার্স্ট ক্যাপিটালের উপাচার্য, পৌর পরিষদের পক্ষে পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা পরিষদের পক্ষে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের পক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান আশাদুল হক বিশ্বাস ও নির্বাহী অফিসার, সিভিল সার্জন ডা. খন্দকার মিজানুর রহমান, সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর রহমত আলী বিশ্বাস, আদর্শ সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল লতিফ। এরপর রাজনৈতিক সংগঠনগুলো পর্যায়ক্রমে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, শ্রমিকলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনসমূহের পর জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি, জেলা বিএনপির একাংশসহ মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রিক বিএনপির খণ্ডাংশও পৃথক পৃথকভাবে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেছে। ছাত্রদল, যুবদলও পুষ্পমাল্য অর্পণ করে। জাতীয় পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদ (ইনু)সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করে। পরে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিট কমান্ড, চুয়ডাঙ্গা প্রেসক্লাব, চুয়াডাঙ্গা জেলা আইনজীবী সমিতি, চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদ, সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা ইউনিট, বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট অব চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট চুয়াডাঙ্গা, হেলথ এইড মেডিকেল সেন্টার, চেম্বার অব কমার্স চুয়াডাঙ্গা, ইরামত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন চুয়াডাঙ্গা, বাংলাদেশ শিক্ষক অভিভাবক ফোরাম চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখা, দৈনিক মাথাভাঙ্গা, দৈনিক আকাশ খবর, দৈনিক আমাদের সংবাদ, জেলা স্কাউটস, উপপরিচালক পরিবার পরিকল্পনা, পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্স, বাংলাদেশ ওয়ার্কার্সপার্টি, সরগম সাংস্কৃতিক সংগঠন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, চুয়াডাঙ্গা জেলা দোকান মালিক সমিতি, পাইনক্লাব চুয়াডাঙ্গা, জাকের পার্টি, জেলা আনসার ও গ্রাম প্রতিক্ষা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা ও সংগঠনের পক্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়।

জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, গতকাল বৃহস্পতিবার জীবননগর ডিগ্রি কলেজে নবনির্মিত দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনারের উদ্বোধন করা হয়েছে। রাত দ্বিপ্রহরে চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর প্রধান অতিথি হিসেবে নবনির্মিত এ শহীদ মিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ২০০৮ সালে প্রথম বারেরমতো তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর দেখেন ভাষা আন্দোলনের ৫৬ বছরেও চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে বহু স্কুল-কলেজেসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। তিনি শহীদ মিনার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং গত প্রায় ৬ বছরে ৮০টি স্কুল-কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণ করতে সক্ষম হয়েছেন।

পরে তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সর্বভৌমত্য রক্ষা ও এদেশের বুক হতে সকল স্বাধীনতার পরাশক্তিকে পরাজিত করার দীপ্ত শপথের অঙ্গীকারের মধ্যদিয়ে রাত দ্বিপ্রহরে জীবননগর ডিগ্রি কলেজ শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। পরে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সংসদ সদস্য আলী আজগার টগর, উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজেদুর রহমান, ওসি শিকদার মশিউর রহমান ও অধ্যক্ষ নিজামউদ্দিন শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্যদিয়ে জীবননগরে মহান একুশের শুভ সূচনা করা হয়।

এরপর একে একে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বাংলাদেশ পুলিশ, জীবননগর পৌরসভা, জীবননগর প্রেসক্লাব, উপজেলা আওয়ামী লীগ, পৌর আওয়ামী লীগ, উপজেলা মহিলা লীগ, উপজেলা যুবলীগ, উপজেলা ও কলেজ ছাত্রলীগ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি, জীবননগর পৌর বিএনপি, উপজেলা ও পৌর যুবদল, উপজেলা ছাত্রদল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিকদল জাসদ, জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জীবননগর ডিগ্রি কলেজ, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স, জীবননগর পাইলট হাইস্কুল, জীবননগর সাহিত্য পরিষদ, মধুচক্র সাহিত্য পরিষদ, আশরাফুল মডেল একাডেমী, আকলিমা প্রি-ক্যাডেট স্কুল, দৌলৎগঞ্জ বাজার কমিটি, জীবননগর মোটরশ্রমিক ইউনিয়ন, শাইনক্লাব, মজনু এজেন্সি, বাঁকা ইউনিয়ন পরিষদ, গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতি, হাসাদাহ ইউনিয়ন যুবলীগ, ইঙ্গিত সাংস্কৃতিক সংগঠন, আইকন, জীবননগর জুয়েলার্স সমিতি, পৌর কিন্ডারগার্টেনসহ বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান  শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে। এদের মধ্যে অনেক সংগঠন জীবননগর পাইলট হাইস্কুলের কেন্দ্রীয় শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আমজাদ হোসেন সমগ্র অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।

সরোজগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষা শহীদের স্মরণে সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়েছে। গতরাত ১২টা ০১ মিনিটে সরোজগঞ্জ আঞ্চলিক শাখা বিএনপির উদ্যোগে শহীদ বেদিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন শেখ ওরফে টিটন মেম্বার, থানা যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক আমিরুল ইসলাম লাল, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন ১ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি রবকুল ইসলাম, কুতুবপুর ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক আবু সাঈদ, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্মআহ্বায়ক রাজু আহাম্মদ, ১ নং ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি মানোয়ার হোসেন, শাহিন, বিল্লাল, মিজান, আব্দুল্লা প্রমুখ।

মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, ভাষা আন্দোলনের শহীদের বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছে মেহেরপুরের মানুষ। একুশের প্রথম প্রহরে ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে মেহেরপুর শহীদ সামসুজ্জোহা পার্কের শহীদ বেদি। ১২টা ০১ মিনিটে মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হোসেন দোদুল ও জেলা প্রশাসক মাহমুদ হোসেন প্রথমেই শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন। মেহেরপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক অ্যাড. মিয়াজান আলী, পুলিশ সুপার একেএম নাহিদুল ইসলাম, মিয়াজান আলী, পৌর মেয়র মোতাচ্ছিম বিল্লাহ মতু ও সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস শহিদ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

অপরদিকে মুজিবনগর ও গাংনী উপজেলা প্রশাসন ও আমঝুপি গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হয়েছে। একুশের প্রথম প্রহরে ১২টা ০১ মিনিটে গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলা পরিষদ চত্বর শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করা হয়। গাংনী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম শফিকুল আলম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুস সালাম, গাংনী থানার পক্ষে ওসি মাছুদুল আলম ও এসআই আব্দুল জলিল, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হুদা ও আব্দুল লফিত, উপজেলা ছাত্রলীগের পক্ষে সভাপতি হাসান রেজা সেন্টু ও সম্পাদক বিপ্লব হোসেন এবং পৌর ছাত্রলীগের সম্পাদক ইমরান হাবীব পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন। পরে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্যদিয়ে শহীদের আত্মার শান্তি কামনা করা হয়। আজ সকাল ৭টায় শহীদ মিনার চত্বর থেকে প্রভাতফেরি শুরু হবে বলে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে ১২টা ০১ মিনিটে মুজিবনগর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অরুন কুমার মণ্ডল, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল ও আফজাল হোসেন এবং দারিয়াপুর ইয়াং স্টার ক্লাবের সভাপতি হাফিজুর রহমান ও সম্পাদক আলমগীর হোসেন শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন।

অপরদিকে একই সময়ে আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয় শহীদ মিনার বেদিতে সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল মালেক মোল্লা, আমঝুপি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, আমঝুপি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বোরহান উদ্দিন চুন্নু, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মামনুল ইসলাম ও শিক্ষকবৃন্দ, আমঝুপি পাবলিক ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সাইদুর রহমান, তারুণ্য তরুণ ক্লাবের সদস্যবৃন্দ পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন। এছাড়া সকাল সাড়ে সাতটায় আমঝুপি মাধ্যেমিক বিদ্যালয় থেকে প্রভাতফেরি শুরু হবে।

ফিরে দেখা: ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পল্টন ময়দানে পূর্ববঙ্গের প্রধানমন্ত্রী নূরুল আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জনসভায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঘোষণা করেন, ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। পাকিস্তানকে আমরা ইসলামী রাষ্ট্ররূপে গঠন করতে যাচ্ছি।’ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, প্রদেশের ভাষা কী হবে, তা প্রদেশবাসীই স্থির করবেন, কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। একাধিক রাষ্ট্রভাষা থাকলে কোনো দেশ শক্তিশালী হতে পারে না। খাজা নাজিমুদ্দিনের এ মন্তব্যটুকুই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের দাবানল সৃষ্টির পক্ষে ছিলো যথেষ্ট। এর প্রতিবাদে ৩১ জানুয়ারি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদ গঠিত হয়। ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা শহরের সকল স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করা এবং আরবি হরফে বাংলা ভাষার প্রচলনের চেষ্টার বিরুদ্ধে ধর্মঘট পালন করে। আর একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রদেশব্যাপি ধর্মঘট করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে সরকার। এতে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য পিছিয়ে গেলেও ছাত্রদের দৃঢ়তায় ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষোভের মুখে পুলিশ ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালায়। এতে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, সফিউরসহ নাম না জানা অনেকে নিহত হন। এরপর সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে ভাষা আন্দোলন। ছাত্রদের প্রবল প্রত্যাশার মুখে ক্ষমতালিপ্সু রাজনীতিকদের হিসাব-নিকাশের রাজনীতি উড়ে গিয়েছিলো সেদিন। রক্তের বিনিময়ে বাঙালি পেয়েছিলো তার মুক্তির, তার গন্তব্যের দিশা। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাংলাদেশের, বাঙালির চির প্রেরণার প্রতীক।

রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীর বাণী: দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার বাণীতে বলেছেন, মহান ভাষা আন্দোলন ছিলো আমাদের মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এবং পাশাপাশি এটি ছিলো আমাদের জাতিসত্তা ও সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য রক্ষারও আন্দোলন। তিনি গভীর শ্রদ্ধার সাথে মহান ভাষা আন্দোলনে আত্মোত্সর্গকারী ভাষা শহীদদের স্মরণ ও তাদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে সকল ভেদাভেদ ভুলে একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার শপথ নেয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, একুশের চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধকে ধারণ করে ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সন্ত্রাস, সাম্প্রদায়িকতা এবং নিরক্ষরতামুক্ত আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করেছিলাম। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের ইতিহাস ২০০৯ থেকে ২০১৩ ছিলো একটি স্বর্ণযুগ। দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বাংলা ভাষাভাষীসহ বিশ্বের সকল ভাষা ও সংস্কৃতির জনগণকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, মহান একুশে ফেব্রুয়ারি প্রতিটি বাঙালির জীবনে শোক, শক্তি ও গৌরবের প্রতীক।

জাতীয় পার্টি (জেপি) চেয়ারম্যান, পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং জেপি মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী শেখ শহীদুল ইসলাম গতকাল এক বিবৃতিতে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বীর শহীদদের স্মরণ ও তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন। নেতৃদ্বয় বলেন, আমরা আজকে নতুন প্রত্যয়ে এই শপথ গ্রহণ করবো যেন দেশ থেকে দারিদ্র্য, ক্ষুধা, নিরক্ষরতা বিদায় নেয়, গড়ে ওঠে এক নতুন দেশ; যেখানে প্রতিষ্ঠিত হবে সামাজিক ন্যায়বিচার, অক্ষুণ্ন থাকবে জনগণের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার এবং গড়ে তোলা হবে একটি জ্ঞানভিত্তিক রাষ্ট্র।