পাবনার হেমায়েতপুর থেকে দামুড়হুদায় ফেরানোর সময় চুয়াডাঙ্গায় কষ্টের চিত্র
ইসলাম রকিব: পরনে শাড়ি। হাতে বাঁধা মোটা লোহার শেকল। মধ্যবয়সী নারীর চেহারা উষ্কোখুশকো। শেকল ধরে টানছেন একজন পুরুষ, আর পেছনে অপর এক বৃদ্ধা গামছা জাতীয় কাপড় দিয়ে মার শাসাচ্ছেন, মারছেন। গতকাল সোমবার বিকেল ৪টার দিকে চুয়াডাঙ্গা শহীদ আবুল কাশেম সড়কের রেলবাজার এলাকায় এ দৃশ্য দেখে চমকে উঠলেন পথচারী, দোকানিসহ সাধারণ মানুষ। মানুষের একি হাল!
কী হয়েছে, কেন বেঁধেছো ওকে, মারছোই বা কেন? এসব প্রশ্নের জবাব জানতে কেউ কেউ এগিয়ে গেলেও নির্বাক তারা। চোখে-মুখে বিরক্তির রেখা। ক্যামেরা তাক করতেই শেকল ধরে রাখা পুরুষ বললেন, ওটা আমার বোন। নাম সাবিনা। পাগল হয়ে গেছে। মার শাসিয়ে তাড়ানো বৃদ্ধা বললেন, ও আমার মেয়ে। পাবনার হেমায়েতপুরের পাগলা গারদে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফেরত দিলো। ট্রেনে চুয়াডাঙ্গা রেলস্টেশনে নেমে বাড়ি দামুড়হুদায় যাচ্ছি। ও আমাদের সাথে যেতে চাচ্ছে না বলেই তো মারতে হচ্ছে। এছাড়া আমাদের আর কী করার আছে বলুন? পাল্টা প্রশ্নের জবাব দেয়ার বদলে পথচারী কয়েকজন মনের অজান্তেই ঝরালেন অশ্রু। প্রতিবেদকের দু চোখও তখন ছলছল। দীর্ঘশ্বাস টেনে কেউ কেউ বললেন, হায়রে দুনিয়া।
কীভাবে পাগল (মস্তিস্ক বিকৃত) হলো? সাবিনাকে বেঁধে রাখা শেকল ধরে রাখা ব্যক্তি বললেন, আমি ওর ভাই। আমার নাম দেলোয়ার। ৭ বছর আগে আমার বোনের বিয়ে হয়। সে সংসার টেকেনি। পরে চুয়াডাঙ্গা ঠাকুরপুরে পুনরায় বিয়ে দেয়া হয়। এ সংসারে এক সন্তান আসে। সন্তান হওয়ার পর থেকেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা করিয়েও কোনো কাজ হয়নি। গতপরশু পাবনার হেমায়েতপুরের পাগলা গারদে নিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফেরত দিলো। তাই বাড়ি দামুড়হুদায় ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।
হাত শেকল দিয়ে বাঁধা কেন? না বেঁধে রাখলে হারিয়ে যায়। পাগলামো করে। শেকল দিয়ে না বাঁধলে কেটে ফেলে। কী করবো বলুন। কেউ কি আর শখ করে বেঁধে রাখে?