স্টাফ রিপোর্টার: জনপ্রতিনিধিদের পর এবার সচিব, একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ও ব্যক্তিগত সহকারীদের দুর্নীতির খোঁজে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক সূত্র বলছে, বিগত দিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিব, একান্ত সচিব, সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ও বিভিন্ন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারীদের অবৈধ সম্পদ অর্জনসহ নানা দুর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সাবেক ও বর্তমান ৯ জন সচিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে কমিশন। এছাড়া সচিব পর্যায়ে আরো ২০ থেকে ২৫ জনের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক এক ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর এপিএসকে আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি কমিশনে হাজির হতে বলা হয়েছে। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তদবির বাণিজ্য করে যেসব পিএস, এপিএস ও পিএ বাড়ি-গাড়ি, ফ্ল্যাটসহ কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, তাদের সম্পদ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ক্ষমতায় থাকাকালে লোকজনকে চাকরি দান, পদোন্নতি ও বদলির নামে অনেক মন্ত্রী-এমপির পাশাপাশি তাদের পিএস, এপিএস, পিএদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিচ্ছে দুদক। এরই ধারাবাহিকতায় সাবেক এক মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রীর এপিএসের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ গত ৬ ফেব্রুয়ারি কমিশন আমলে নিয়ে যাচাইবাছাই শুরু করেছে।
এদিকে দুর্নীতির অনুসন্ধান চলা ১১ মন্ত্রী-এমপির বিদেশ গমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। কমিশন তাদের আবেদন আমলে নিয়েছে। দু এক দিনের মধ্যে তাদের বিদেশ যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে নোটিস পাঠানো হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
আমলাদের দুর্নীতি অনুসন্ধানের বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান এম বদিউজ্জামান বলেন, বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর ও দুদকে আসা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই বেশি কিছু বলা ঠিক নয়। দুর্নীতিবাজ কাউকে আলাদা চোখে দেখা হচ্ছে না। পর্যায়ক্রমে সকল দুর্নীতিবাজই অনুসন্ধানের আওতাভুক্ত হবেন। পৃথক দুর্নীতির অভিযোগে ইতোমধ্যে সাবেক ও বর্তমান ৯ জন সচিবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে কমিশন। যাদের মধ্যে ৮ জন বর্তমান ও ১ জন সাবেক সচিব। তাদের মধ্যে সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব, সাবেক স্বাস্থ্য সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও একজন যুগ্মসচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব, বিদ্যুত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও একজন অতিরিক্ত সাবেক সচিব।
সচিবদের অভিযোগের বিষয়ে দুদক সূত্র জানায়, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক সাবেক সচিবের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর অভিযোগ রয়েছে। দুদক ইতোমধ্যে সে অভিযোগের প্রাথমিক যাচাইবাছাই করেছে। তাতে কয়েকটি অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর কারণে সাবেক ওই সচিবের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। একই অভিযোগ রয়েছে আরও তিন সচিব, সাবেক এক সচিব ও এক যুগ্মসচিবের বিরুদ্ধে। আবার চাকরির বয়স শেষ হওয়ার মুহূর্তে এসে মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দেখিয়ে চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে কয়েকজন সচিব ও অতিরিক্ত সচিবের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগের প্রাথমিক যাচাইবাছাইতে দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক সাবেক সচিব, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক সচিব ও যুগ্মসচিবের বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা সনদ জাল করার অভিযোগ গুরুত্বের সাথে কমিশন নিয়েছে। এছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক সচিব এবং প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিবের ব্যাপারে চলতি সপ্তার মধ্যে অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হতে পারে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। অনুসন্ধান কর্মকর্তারা অন্যান্য দুর্নীতির অনুসন্ধানের পাশাপাশি তাদের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট ভুয়া কি-না তা যাচাই করবে। সম্প্রতি সাবেক এক বিদ্যুত সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্মসচিবের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ কমিশন আমলে নিয়েছে। এইসব অভিযোগ মহাপরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত) ব্রিগেডিয়ার সালাউদ্দিনের কাছে রয়েছে। তিনি যাচাইবাছাই করছেন।