চুয়াডাঙ্গার নফরকান্দী গ্রামের গৃহকন্যা শাহানারা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা

 

শ্যালক ও ভগ্নিপতির যাবজ্জীবন : ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা নফরকান্দী গ্রামের গৃহকন্যা শাহানারা খাতুন হত্যা মামলায় দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। ৪ আসামির মধ্যে অন্য দুজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত। চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক নাজির আহমেদ গতকাল সোমবার দুপুর ১টায় আসামিদের উপস্থিততে জনাকীর্ণ আদালতে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরেই আসামি ও বাদী পক্ষের বাগবিতণ্ডা ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা সদর সদর উপজেলার পদ্মবিলা ইউনিয়নের নফরকান্দী গ্রামের মালিতাপাড়ার মৃত আত্তাব শেখের মেয়ে শাহানারা খাতুনের সাথে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বাগোয়ান গ্রামের খালেক খানের বিয়ে হয়। খালেক খান পুলিশ সদস্য হওয়ায় বিভিন্ন জেলায় চাকরি করেন। সে কারণে শাহানারার পিতার বাড়িতেই থাকতেন তারা। শাহানারাদের বাড়ির একটি পোষা কুকুরের নাম ছিলো পুষি। ২০০৯ সালের ১৫ মে শুক্রবার কুকুরটি পাশের ইকবাল শেখ ওরফে ছোট বুড়োর বাড়িতে যায়। এ সময় ছোট বুড়োর ছেলে মিলন বাঁশের লাঠি দিয়ে পিটিয়ে কুকুরটিকে হত্যা করে। এ ঘটনায় আত্তাব শেখের মেয়ে ৪ সন্তানের জননী শাহানারা খাতুন প্রতিবাদ করেন এবং চাচা ছোট বুড়োর বাড়িতে গিয়ে কুকুর হত্যার কৈফিয়ত চান। এতে মিলন ক্ষুব্ধ হয়ে তার হাতে থাকা বাঁশের লাঠি নিয়ে শাহানারা খাতুনের ওপর হামলে পড়ে এবং মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন শাহানারা। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে তার পরিবারের লোকজন। শাহানারার অবস্থার অবনতি হলে ওই দিনই তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন শনিবার সন্ধ্যায় মারা যান শাহানারা খাতুন (৩৫)। তার স্বামী পুলিশ সদস্য খালেক খান শুক্রবারই বাদী হয়ে ৪ জনের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলার আসামিরা হলো ইকবাল শেখ ওরফে ছোট বুড়োর ছেলে মিলন, খেজুরা গ্রামের পুটে খন্দকারের ছেলে ছোট বুড়োর জামাই আহাদ আলী, পটল শেখের ছেলে মিরাজুল ও আজিজুল। মামলার তদন্ত শেষে ৪ জনের বিরুদ্ধেই আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত মোট  ১৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে গত ২৯ জানুয়ারি এ মামলার রায়ের তারিখ ১০ ফেব্রুয়ারি ঘোষণা করেন। সে মোতাবেক গতকাল সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।

রায়ে দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করেছেন আদালত। দণ্ডিত আসামীরা হলেন নফরকান্দী গ্রামের ছোট বুড়োর ছেলে মিলন হোসেন (৩৫) ও তার ভগ্নিপতি আহাদ আলী (৩২)। মামলার অপর দু আসামি একই গ্রামের পটল মণ্ডলের ছেলে মিরাজুল ইসলাম (৩৭) ও আজিজুল ইসলামকে (৩৮) বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মিলন হোসেন ও আহাদ আলীকে চুয়াডাঙ্গা জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন অ্যাড. মানোয়ারুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার ও আসামি পক্ষে ছিলেন অ্যাড. আব্দুস সামাদ ।

এদিকে মামলার রায় ঘোষণার পর আদালত চত্বরে আসামি ও বাদী পক্ষের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আসামি পক্ষের লোকজন বাদী আব্দুল খালেক খানকে এ সময় মারপিট করে। এসময় তিনি দৌড়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন বলে বাদী পক্ষের লোকজন অভিযোগ করেন।