মাথাভাঙ্গা মনিটর: দেশে বাঘ, দেশের বাইরে বিড়াল! এ অপবাদ এক সময় ছায়াসঙ্গী ছিলো ভারতীয় ক্রিকেট দলের। সৌরভ গাঙ্গুলীর নেতৃত্বে সেই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছিলো ভারত। মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বে সেই অপবাদটা মুছেই ফেলেছিলো প্রায়। কিন্তু ভারত আবার যেন সেই পুরোনো খোলসের ভেতরে ঢুকে পড়তে শুরু করেছে। বিদেশের মাটিতে ভারতের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স সেই ইঙ্গিত দেয়।
ওয়েলিংটনে গতকাল শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারত ওয়ানডে সিরিজ হারল ৪-০ ব্যবধানে। এর আগে গত ডিসেম্বরেও দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ওয়ানডে সিরিজে জয়ের দেখা পায়নি ভারত। প্রোটিয়াদের কাছে সিরিজ হেরেছিলো ২-০ ব্যবধানে। পরিসংখ্যান ঘাঁটতে গিয়ে দেখা গেলো, ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের পর থেকেই আসলে বিদেশের মাটিতে ভারতের এ দুর্দশা চলছে। গত তিনটি বছর টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি- ক্রিকেটের প্রতিটি সংস্করণে বারবার পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে দেশে ফিরতে হয়েছে ধোনির দলকে।
প্রথমেই টেস্টের খেরোখাতা খুলে দেখা যেতে পারে। বিশ্বকাপ-পরবর্তী সময়ে ভারত বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। প্রথম ম্যাচটি জিতলেও এর পরই দেশের বাইরে ভারতের কাছে জয় পরিণত হয় সোনার হরিণে। ২০১১ সালের ইংল্যান্ড সফরে ধোনির দল রীতিমতো ধবলধোলাইয়ের শিকার। নতমস্তকে ইংল্যান্ড ছাড়ার পর অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েও নিস্তার মেলেনি। সেবার ধোনির দলকে উপর্যুপরি ধবলধোলাই করে ছাড়ে মাইকেল ক্লার্কের অস্ট্রেলিয়া।
টেস্টে টানা আট পরাজয়ের ধকল বোধ হয় আর সইতে পারছিলো না ভারত। তাদের বাঁচিয়ে দিয়েছে এফটিপি। মাঝখানে টানা ২২ মাস বিদেশের মাটিতে আর টেস্ট খেলতে হয়নি ভারতকে। ২৪ জানুয়ারি ২০১২ অ্যাডিলেড টেস্টের পর দেশের বাইরে ভারত পরবর্তী টেস্ট খেলে গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর, জোহানেসবার্গে। টেন্ডুলকার-উত্তর যুগের প্রথম টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চতুর্থ ইনিংসে ৪০০-এর বেশি লক্ষ্য দিয়েও পরাজয় চোখ রাঙানি দেখতে হয় ভারতকে, শেষ অবধি ড্র-তেই সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাদের। দক্ষিণ আফ্রিকা আরেকটু সাহসী হলে রান তাড়া করে জেতার বিশ্ব রেকর্ডই হয়তো করতে পারতো। ওই টেস্টটা ড্র হলেও জ্যাক ক্যালিসের বিদায়ী ম্যাচটা কিন্তু ঠিকই জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।
সব মিলে ২০১১-এর জুন থেকে ২০১৩-এর ডিসেম্বর- এ সময়ে ভারত বিদেশে টেস্ট খেলেছে ১৩টি, হেরেছে ৯টি, ড্র ২টি আর জিতেছে মাত্র ১টি। আরাধ্য জয়টি আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। এবার একদিনের ম্যাচে চোখ বোলানো যেতে পারে। গত বিশ্বকাপের পর অর্থাৎ ২০১১-এর জুন থেকে ২০১৪-এর জানুয়ারি সময়ে ভারত বিদেশে ওয়ানডে খেলেছে ৩৬টি। হেরেছে ১৭টি, জিতেছে ১৫টি, ফলাফল আসেনি ৪টি ম্যাচে (২টি টাই, ২টি পরিত্যক্ত)। যে ১৫টি জিতেছে তার মধ্যে নয়টিই আবার জিম্বাবুয়ে (৫টি) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের (৪টি) মতো অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে। সর্বশেষ আটটি ওয়ানডেতে একটিতেও জয়ের দেখা পায়নি ধোনি ব্রিগেড। আট পরাজয়ের ভিড়ে রয়েছে একটি টাই আর নিষ্পত্তি না হওয়া একটি ম্যাচের সান্ত্বনা।
যে টি-টোয়েন্টি নিয়ে ভারতের বিরাট শ্লাঘা, সেখানেও চোখে পড়বে নিদারুণ সাফল্যখরা। উল্লিখিত সময়ে দেশের বাইরে পাঁচটি টি-টোয়েন্টি খেলেছে ভারত। এর মধ্যে তিনটিতে পরাজয় আর জয় দুটোতে। পরিসংখ্যান আঙুল উঁচিয়েই বলছে, ক্রিকেটের প্রতিটি সংস্করণেই বিদেশের মাটিতে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারতের সাফল্য সামান্যই।